বিশ্বকাপ ফুটবল বাছাই
পার্থের অধিনায়ক লড়াকু বাংলাদেশকে দেখতে চান মেলবোর্নে
অস্ট্রেলিয়ার দুই শহর পার্থ আর মেলবোর্নের দূরত্ব প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার। ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পার্থে ফুটবল মাঠে প্রথম দেখা হয়েছিল বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার। সেটি ছিল রাশিয়া বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ।
৮ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আরেকটি ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ১৬ নভেম্বরের মেলবোর্নে অনুষ্ঠিতব্য এ ম্যাচটি ২০২৬ বিশ্বকাপের বাছাইয়ের। এটি হবে দুই দেশের তৃতীয় সাক্ষাৎ। রাশিয়া বিশ্বকাপ বাছাইয়ের অ্যাওয়ে স্টেডিয়ামে ৫-০ গোলে হেরে এসে ঘরের মাঠ বঙ্গবন্ধুতে হেরেছিল ৪-০ গোলে।
রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাইয়ে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ছিলেন মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলাম। এবার অধিনায়ক আরেক মিডফিল্ডার জামাল ভূঁইয়া। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলা ম্যাচেও ছিলেন জামাল। জামাল ভূঁইয়া ও সোহেল রানা ছাড়া বর্তমান দলের বাকি ২১ ফুটবলারের কাছেই অস্ট্রেলিয়া অচেনা।
ফিফা র্যাংকিংয়ে ১৭ নম্বরে থাকা দলটির বিপক্ষে কেমন করবে বাংলাদেশ? ৮ বছর আগে পার্থে আর্মব্যান্ড পড়ে অস্ট্রেলিয়াকে মোকাবিলা করা মামুনুল ইসলাম মেলবোর্নে কী চান তার উত্তরসূরীদের কাছে?
এক কথায় জবাব-লড়াকু বাংলাদেশকে দেখতে চান সাবেক এই অধিনায়ক। অস্ট্রেলিয়া সর্বশেষ কাতার বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে পড়েছিল আর্জেন্টিনার সামনে। চ্যাম্পিয়ন হওয়া মেসিরা কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল ২-১ গোলে জিতে।
মামুনুল ইসলাম বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ নিয়ে আলোচনায় উদাহরণ টানলেন বিশ্বকাপের ওই ম্যাচের, ‘যে দলটি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলো, সেই দলের বিপক্ষে লড়াই করে ২-১ গোলে হেরে বিদায় নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ফলটাই বলে দিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া কতটা শক্তিশালী দল। তাই ওদের বিষয়ে আর বেশি কিছু বলার দরকার হয় না। আমি শুধু চাইবো দল কিছু জয় করে আনুক।’
এই জয়টা কী? কী হলে সাবেক এই অধিনায়ক জয় মনে করবেন? ‘আগেও বলেছি বাংলাদেশের কাছে লড়াকু ফুটবল দেখতে চাই। ওরা যেন আত্মবিশ্বাসী থাকে। মাঠে নামবে একটা লড়াকু মনোভাব নিয়ে। ফল যাই হোক, লড়াই করতে পারলেই সেটা হবে কিছু জয় করা’-বলছিলেন মামুনুল ইসলাম।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ খেলা হয় না। সেই ২০১৫ সালের পর আবার ২০২৩-এ। মামুনুল মনে করেন, ‘দেখাটা বারবার হলে উন্নতিটা চোখে পড়ে। এই যেমন আমরা পার্থে গিয়ে ৫ গোল খেয়ে এসেছিলাম। হোম ম্যাচে খেয়েছিলাম ৪ গোল। ব্যবধান কমেছে। এভাবে বেশি বেশি ম্যাচ হলেই বোঝা যাবে আসলে পরিবর্তনটা কতটুকু হয়েছে।’
মদকাণ্ডে নিষিদ্ধ হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ দুই খেলোয়াড় গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো ও ডিফেন্ডার তপু বর্মন নেই এই জাতীয় দলে। এই দুইজনের অনুপস্থিতি নিয়ে মামুনুল ইসলাম বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ যে ভালো রেজাল্ট করেছে তার পেছনে জিকোর অনেক ভূমিকা ছিল। আর তপু সিনিয়র খেলোয়াড়, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আগে খেলেছেন। সে থাকলে তারিক কাজীকে নিয়ে রক্ষণটা আরো শক্ত হতো। তবে এখন যারা আছে তাদেরকেই যুদ্ধটা করতে হবে। রাকিবের কথা বলবো। ওর ক্ষমতা আছে ওপরে বল ধরে রাখার। অনেকদিন স্ট্রাইকারদের গোল নেই। সেটা জাতীয় দলে হোক বা ক্লাবে। এখন আমাদের রাকিবের ওপর অনেকটা ভরসা করতে হবে।’
ঢাকা আর মেলবোর্নের আবহওয়ার অনেক পার্থক্য। ওখানে ঠাণ্ডা, বাতাসও বেশ। এসব কিছু বাংলাদেশকে কতটা ভোগাতে পারে বলে মনে করেন? মামুনুল ইসলামের জবাব, ‘আবহাওয়া তেমন সমস্যা হয়তো করবে না। তবে রিকভারিটা গুরুত্বপূর্ণ। অস্ট্রেলিয়া যাওয়া-আসা বিশাল ভ্রমণ। যারা রিকভারি করতে পারবে, তারাই ভালো খেলতে পারবে। মেলবোর্ন থেকে এসে দুই দিনের বিরতি দিয়ে ঢাকায় খেলতে হবে লেবাননের বিপক্ষে ম্যাচ। তবে এখন বাফুফে খেলোয়াড়দের সুযোগ-সুবিধা বেশি দিচ্ছে। আমরা যে মানের হোটেলে থাকতাম তার চেয়ে অনেক উন্নতমানের হোটেলে রাখা হয় এখনকার দলকে। আশা করবো উন্নতমানের সুযোগ-সুবিধায় খেলোয়ড়ারা দ্রুতই রিকভারি করতে পারবে।’
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামার আগে খেলোয়াড়রা যাতে অতি আত্মবিশ্বাস বা অতি হতাশায় না ভোগে তা নিয়েও সর্তক থাকতে অনুরোধ করেছেন মামুনুল, ‘আমি দলকে শুভ কামনা জানাই। আমরা অপেক্ষায় থাকবো যত কম গোল খেয়ে দল ফিরতে পারে। আর আমি বলবো অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বা অতিরিক্ত হতাশায় ভোগা যাবে না। সাম্প্রতিককালে যে ফুটবলটা খেলছে, তারা সেই ধারাবাকিতা ধরে রাখলেই হবে। তাছাড়া এই ম্যাচই তো শেষ না। এর পর আরো ৫ টি ম্যাচ খেলতে হবে।’
আরআই/এমএমআর/জিকেএস