ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ঘাস নিয়ে এনএসসি-বাফুফে ঠেলাঠেলি

রফিকুল ইসলাম | প্রকাশিত: ০৫:২২ পিএম, ১২ জানুয়ারি ২০২৩
  • বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম সংস্কার কাজের বাজেট ৯৮ কোটি টাকা।
  • যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, শেড লাগানো এবং ফ্লাড লাইটের জন্য বাজেট বাড়ানো হচ্ছে।
  •  মাঠের ঘাস লাগানোর জন্য বাজেট মাত্র ১০ লাখ টাকা।
  •  ঘাস লাগানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বাফুফেকে। এপ্রিল নাগাদ ঘাস লাগিয়ে মাঠ প্রস্তুত করার কথা।
  •  বাফুফে বলছে, আমরা এ দায়িত্ব পালন করবো না বলে এনএসসিকে জানিয়ে দিয়েছি।
  •  আগামী জুন-জুলাইয়ে এই মাঠেই বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনা ফুটবল দলকে এনে ম্যাচ খেলানোর পরিকল্পনা নিচ্ছে বাফুফে।

দু’দিন আগে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) চেয়ারম্যান এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘সংস্কারাধীন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের মাঠে ঘাস লাগানোর কাজটি দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে (বাফুফে)।’

কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, ‘ফুটবল মাঠের ঘাস নিয়ে বিভিন্ন রকমের বিতর্ক হয়। ঘাস মানসম্পন্ন হয়নি, বিভিন্ন রকমের ঘাস লাগানো হয় ইত্যাদি। অতীতেও অনেক কথা উঠেছে। এ কারণে ঘাসের দায়িত্বটা ফুটবল ফেডারেশনকে দেওয়া হয়েছে। বাফুফে যেন পছন্দমতো ঘাস লাগিয়ে তাদের উপযোগী করে তুলতে পারে।’

ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী এটাও বলেছিলেন, ‘বাফুফে পুরো মার্চ মাসটা সময় নিয়েছে। আমাদের তারা বলেছে, এপ্রিলের মধ্যে মাঠ তৈরি করে দিতে পারবে। এখন পর্যন্ত আমরা জানি এপ্রিলেই বাফুফে মাঠ বুঝিয়ে দেবে।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের মাঠে গিয়ে দেখা গেছে সেখানে ঘাস লাগানো শেষ। এখন পরিচর্যার কাজ চলছে। সার দেওয়া হচ্ছে, পানি ছিটানো হচ্ছে। মাঠের কোথাও কোথাও ঘাস সবুজ হয়ে মাথা জাগিয়েছে, কোথাও কোথাও শুকনো অবস্থায়ই আছে। ঘাস একটু বড় হলে তার ওপর দিয়ে হালকা মাটি ছিটিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইকবাল নামের এক মাঠকর্মী। তিনি মাঠের একদিকে সার ছিটাচ্ছিলেন।

Stadium

কতদিনের মধ্যে মাঠ খেলার উপযুক্ত হয়ে উঠবে সে সম্পর্কে কোনো ধারণা দিতে পারেননি ওই মাঠকর্মী। ওই সময় মাঠে ঘাস লাগানোর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাউকেও পাওয়া যায়নি। মাঠকর্মীর মতে, দেড় মাসেরও কম সময় আগে মাঠে ঘাস লাগানোর কাজ শুরু করা হয়েছিল। এখন তারা অপেক্ষা করছে ঘাস বেড়ে ওঠার। তারপর আরেকবার ছিটিয়ে দেওয়া হবে গুঁড়ো মাটি।

তবে বাফুফেতে যোগাযোগ করে জানা গেলো নতুন তথ্য। তারা নাকি মাঠের ঘাসের কাজটি তদারকি করছে না বলে এক সপ্তাহ আগেই জানিয়ে দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে। বাফুফে সাধারণ সম্পাদক মো. আবু নাইম সোহাগ বলেন, ‘আমরা এনএসরি সঙ্গে সভা করে ঘাস লাগানোর দায়িত্বটা নিয়েছিলাম ঠিক। তবে বাফুফে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঘাসের কাজ না করার। সেটা আমরা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে জানিয়েও দিয়েছি।’

বাফুফে কেন ঘাস লাগানোর দায়িত্ব নিয়ে আবার ফিরিয়ে দিলো? ‘দেখুন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সংস্কার বাজেট শতকোটি টাকার বেশি। অথচ এনএসসি আমাদের ঘাস লাগানোর বাবদ বরাদ্দ দিয়েছিল মাত্র ১০ লাখ টাকা। আমরা হিসাব করে দেখলাম ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার বেশি খরচ হবে ঘাসের পেছনে। স্টেডিয়ামের মূল আকর্ষণ মাঠ, যেখানে খেলা হবে। মাঠ না থাকলে স্টেডিয়া মতো মূল্যহীন। অথচ সেখানেই বাজেট অপ্রতুল। তাই আমরা মাঠ পরিপূর্ণভাবে তৈরি করার কাজটি এনএসসিকেই করতে বলেছি’ -বলেছেন বাফুফে সাধারণ সম্পাদক।

Grass

এ বিষয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) সুকুমার সাহা জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঘাস লাগানোর কাজ বাফুফের তত্ত্বাবধানেই হচ্ছে। হতে পারে কৌশলগত কারণে তারা আপনাদের বলছেন কাজটি তারা করছে না। কিংবা তারা সরাসরি স্বীকার করছে না। মাঠের ঘাস যাতে বাফুফে তাদের উপযুক্ত করে তৈরি করতে পারে সে কারণেই দুই পক্ষ আলোচনা করে দায়িত্বটা তারা নিয়েছে। আমরা এর জন্য বাফুফেকে ১০ লাখ টাকা দেবো বলেছিলাম। কিছু বেশি লাগলে সেটা বাফুফে ব্যবস্থা করবে তা মেনেই তারা দায়িত্ব নিয়েছে। আর কাজ করবে না বলে আমাদের কিছু জানায়ওনি।’

মাঠ হলো ফুটবল ভেন্যুর প্রধান আকর্ষণ। যেখানে ফুটবলাররা খেলবেন সেটা তৈরি করতেই এখন দুই পক্ষের ঠেলাঠেলি। মাঠ না হলে তো স্টেডিয়ামের সৌন্দর্য বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই। সে জায়গায়ই যতো কম বরাদ্দ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের। অথচ জুন-জুলাইয়ের দিকে এই মাঠে ম্যাচ খেলানোর জন্যই মেসিদের আনার পরিকল্পনা করেছে বাফুফে। ঘাস নিয়ে এনএসসি ও বাফুফের মধ্যে দায়-দায়িত্ব অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার যে পাল্লা চলছে তাতে এই মাঠ কবে নাগাদ ফুটবল খেলার উপযোগী হয়ে উঠবে সেটাই বড় প্রশ্ন।

৯৮ কোটি টাকা বাজেট নিয়ে দেশের প্রধান ক্রীড়া ভেন্যু বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সংস্কার শুরু হয়েছিল। তবে সেই বাজেট এখন বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে গ্যালারির শেড ও ফ্লাড লাইটের জন্য। কয়েকটি ক্ষেত্রে বাজেট বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হলেও পুরো মাঠ তৈরির জন্য বাজেট আগের মতো ৫ কোটি টাকাই আছে। এই ৫ কোটি টাকার মধ্যে ঘাস লাগানোর বাজেট নাকি ১০ লাখ টাকা!

আরআই/আইএইচএস/