সেরা একাদশ তৈরি করতে বার্সার টেবিলে ৩২ নাম
লিওনেল মেসি নেই মানে বার্সেলোনার অর্ধেক শক্তিই যেন নিমিষে শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু বাস্তবতাকে তো আর অস্বীকার করার উপায় নেই। সব কিছু পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে হবে বার্সার বর্তমান কোচ, খেলোয়াড় এবং বোর্ডকে। সে কথাই বারবার বলছিলেন কোচ রোনাল্ড কোম্যান, সভাপতি হুয়ান লাপোর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবাই।
এরই মধ্যে লা লিগা মৌসুম শুরু হয়ে গেছে এবং নিজেদের প্রথম ম্যাচে রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে ৪-২ গোলের বড় জয় দিয়ে শুভ সূচনা করেছে বার্সা। তবে ইউরোপিয়ান দলবদলের বাজার এখনও চলমান। আর দুই সপ্তাহ পর বন্ধ হয়ে যাবে এবারের মৌসুমের দলবদল। তার আগেই একাদশ ঠিক করতে বার্সেলোনার টেবিলে ৩২টি নামের একটি তালিকা জমা দিয়েছেন কোচ রোনাল্ড কোম্যান।
তবে, শঙ্কার কোনো কারণ নেই যে- বর্তমান স্কোয়াডের ফুটবলারদের বাদ দেয়া হচ্ছে না। মূলতঃ বার্সায় বর্তমান যে স্কোয়াড রয়েছে তাদেরকে নিয়েই ৩২ জনের তালিকা তৈরি করেছেন কোচ রোনাল্ড কোম্যান। এরমধ্যে রয়েছেন বার্সেলোনার ফুটবল একাডেমি লা মাসিয়ার বেশ কয়েকজন উদীয়মান ফুটবলারও। আবার যে ক’জন ফুটবলারের ক্লাব ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাদের নামও তিনি রেখেছেন এই তালিকায়।
অর্থ্যাৎ, সেরা একাদশ তৈরি করতে এই ৩২জনেরই পরীক্ষা নিতে চান কোম্যান। এদের থেকেই বাছাই করবেন সেরা স্কোয়াড। সেখান থেকে বের করবেন সেরা একাদশ। কিংবা রোটেশন পদ্ধতিতে ম্যাচ বাই ম্যাচ একাদশ তৈরি করবেন তিনি।
রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে মাঠে নামার আগেই জেরার্ড পিকে তার পারিশ্রমিক কমিয়ে আনার প্রস্তাবে রাজি হন। যে কারণে বার্সা মেমপিস ডিপে এবং এরিক গার্সিয়ার ব্যাপারে চুক্তির শর্ত পূরণ করতে পেরেছিলো এবং রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে মাঠে নামতে পেরেছিল তারা। তবে রোনাল্ড কোম্যানের সেরা একাদশ এখনও পর্যন্ত ঠিক হয়নি। যে কারণে তিনি এখন মাঠে নেমেছেন সেই একাদশ ঠিক করার জন্য।
৩২জন খেলোয়াড়- সংখ্যাটা অনেক বেশি এবং অনিবার্যভাবেই এখান থেকে বেশ কিছু খেলোয়াড়ের নাম কাটা যাবে না। সুতরাং, শেষ পর্যন্ত বার্সেলোনা দলটি কেমন দাঁড়াবে সেটাই দেখার বিষয়। জেনে নেয়া যাক সেই ৩২ জনের অবস্থা -
গোলরক্ষক
নেতো এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন বার্সা ছেড়ে যাবেন। যদিও আরও একটি মৌসুম রয়েছেন তিনি। কিন্তু এই এক মৌসুম থাকলে কপাল খুলে যেতে পারে তার। কারণ টের স্টেগান এ মৌসুম রয়েছেন ইনজুরিতে। তার অনুপস্থিতিতে নেতো’র ওপরই আস্থা রাখতেন কোচ কোম্যান। তবে ইনাকি পেনা রয়েছেন তৃতীয় গোলরক্ষক হিসেবে।
ডিফেন্ডারস
কোম্যানের হাতে রয়েছে ডিফেন্সের প্রাচুর্য। অনেক বেশি ডিফেন্ডার থাকার কারণে একজন কিংবা দুইজনকে হয়তো বাদ দিতে হবে তাকে। আগের ম্যাচে স্যামুয়েল উমতিতিকে ধুয়ো ধ্বনি দিয়েছেন দর্শকরা। বার্সা ছাড়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে তার। ক্লেমেন্স লেঙ্গলেটকে নিয়েও চিন্তায় আছে বার্সা।
এছাড়া ডিফেন্সে রয়েছেন সার্জিনো ডেস্ট, এমারসন রয়্যাল, জেরার্ড পিকে, অস্কার মিঙ্গুয়েজা, এরিক গার্সিয়া, রোনাল্ড আরাউজো এবং জর্দি আলবা। এরপর লেফট ব্যাকে আলেজান্দ্রো ভার্দে নামে দারুণ প্রতিভাধর একজন উঠে আসছেন। পুরোপুরি তরুণ এবং আনকোরা। তাকে ধরা হচ্ছে বার্সার ভবিষ্যৎ হিসেবে এবং সম্প্রতি তার চুক্তিও নবায়ন হয়েছে। রাইট ব্যাকে নির্ধারিত রয়েছেন সার্জি রবের্তো। উমতিতি এবং লেঙ্গলেট চলে গেলেও কোম্যানের হাতে ৯জন ডিফেন্ডার থেকে যাচ্ছেন।
মিডফিল্ড
কোচ রোনাল্ড কোম্যান আরও একজন মিডফিল্ডারকে দলে নিতে চান। কিন্তু কে না জানে, বার্সেলোনার বর্তমান আর্থিক অবস্থার কথা? সুতরাং, নতুন কাউকে নিয়ে আনা রীতিমত অসম্ভব। জিওর্জিনিও উইনজালডাম এবং ইলিয়াইক্স মোরিবাকে হারানোর পর কোম্যান চিন্তা করছেন ভিন্ন কী করা যায়। মিরালেম জানিককে কোনোভাবেই নিজের পরিকল্পনায় রাখতে চান না তিনি। এছাড়া ফিলিপ কৌতিনহোকে নিয়ে কী হচ্ছে, সেটাও সবাই জানে।
সুতরাং, কোম্যানের হাতে আছেন কেবল সার্জিও বুস্কেটস, ফ্রাঙ্কি ডি জং, পেদ্রি এবং রিকি পিগ। রিকি পিগের ওপরও খুব একটা আস্থা নেই ডাচ কোচ কোম্যানের। সুতরাং, কোম্যানকে লা মাসিয়ার দিকেই নজর দিতে হচ্ছে এ জায়গায় এসে। ভাগ্য ভালো যে, এখানে তিনজন রয়েছেন প্রতিভাবান, যারা কোম্যানের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন।
এর মধ্যে ১৮ বছর বয়সী নিকো গঞ্জালেজ, যার অভিষেক হয়েছে লা রিয়ালের বিপক্ষে এবং দেখা গেছে বুস্কেটসের মানে খেলছেন তিনি। এরপর রয়েছেন ১৮ বছর বয়সী ইউসুফ ডেমির। প্রাক মৌসুমে বেশ তাক লাগিয়েছিলেন তিনি। এরপর রয়েছেন ১৭ বছর বয়সী গাবি। আশা করা হচ্ছে, এই মৌসুমেই বার্সার জার্সি উঠে যাবে তার গায়ে।
ফরোয়ার্ড
এখানেও কোচ কোম্যান চান নিজের শক্তিবৃদ্ধি করে নিতে। যদিও তার হাতে রয়েছেন আটজন আক্রমণভাগের ফুটবলার। তবে এর মধ্যে তিনজন সেরা ফরোয়ার্ডই এখন ইনজুরিতে। সার্জিও আগুয়েরো, আনসু ফাতি এবং উসমান ডেম্বেলে। কবে তারা ফিরতে পারবেন, বলা মুস্কিল।
বাকিদের মধ্যে তিনজন কোচ কোম্যানের সুনজর কাড়তে সক্ষম হননি। মার্টিন ব্র্যাথওয়েট, রে মানাজ এবং অ্যালেক্স কোলাডো। এই তিনজনকে পারলে ছেড়েই দেবে বার্সেলোনা। এর অর্থ, কোম্যানের হাতে আছেন কেবল দু’জন ফরোয়ার্ড। মেমফিস ডিপে এবং আন্তোনিও গ্রিজম্যান। এ দু’জনের ওপর খুশি কোচ এবং এরা থাকছেন- এটা নিশ্চিত।
আইএইচএস/এএসএম