খাগড়াছড়ির কিশোরী মনিকা এখন বিশ্ব ফুটবলে আলোচিত নাম
প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের নাকানি-চুবানি খাইয়ে বল নিয়ন্ত্রণে নেয়া আর রক্ষণ দেয়াল ভেঙে বল জালে পাঠানোয় যতটা দক্ষ মনিকা চাকমা, কথা বলায় ঠিক তার উল্টো। লাজুক স্বভাবের খাগড়াছড়ির এ কিশোরী কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বারবার দুইহাতে ঢাকেন লজ্জায় লাল হওয়া মুখ। মনিকার কাছে কথা বলা যেন পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজের একটি।
কথায় কী আসে যায়? একজন ফুটবলারের আসল কাজটি তো করে দেখাতে হয় পায়ে। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের মিডফিল্ডার মনিকা চাকমা সে কীর্তি করেই এখন বিশ্বজুড়ে আলোচনায়। একদিন আগে শেষ হওয়া বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৯ নারী আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপের সেমিফাইনালে মঙ্গোলিয়ার বিরুদ্ধে দর্শনীয় গোল করে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন চারদিকে।
এ চারদিকটা কেবল বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বজুড়ে। ফিফার দর্শক জড়িপে সপ্তাহের সেরা গোলের তালিকায় ঢুকে গেছে ৩০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে করা মনিকার গোল। ফিফার ওয়েবসাইটে গোলটি আপলোড করে শিরোনাম দেয়া হয়েছে ‘ম্যাজিক্যাল চাকমা।’
মঙ্গোলিয়ার বিরুদ্ধে করা গোলটি যে ফিফার দর্শক জড়িপে সেরা হয়েছে তা কী জানেন? ‘হ্যা। কিছুক্ষণ আগে আমাকে বলেছেন স্যার (বাফুফের সাধারণ সম্পাদক)’ -জবাব মনিকার। তো কেমন লাগছে আপনার? মনিকা চুপ। ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে কোনো কথাই আসছে না। ওই যে, কথা বলায় অপটু। কয়েক সেকেন্ড পর মনিকার জবাব ‘আমি রেকর্ডের জন্য নয়, দেশের জন্য গোল করি। শুনে আমি অনেক খুশি। আগামীতে এমন গোল আরও করতে চাই।’
সেরা গোল নিয়ে মনিকার মিনি সাক্ষাতকার :
জাগো নিউজ : আপনার গোল ফিফার দর্শক জড়িপে সেরার তালিকায়। কেমন লাগছে?
মনিকা : এ টুর্নামেন্টে ওটাই ছিল আমার সর্ব প্রথম গোল। আমার অবশ্যই ভালো লাগছে।
জাগো নিউজ : কখনও ভেবেছিলেন আপনার ওই গোলটি এভাবে বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসবে?
মনিকা : রেকর্ড নিয়ে ভাবিনি। আমি দেশের জন্য গোল করেছি। ভবিষ্যতে দেশের জন্য এরকম গোল আরও করতে চাই।
জাগো নিউজ : আগে আপনার এমন গোল আছে?
মনিকা : মিয়ানমারে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই পর্বে কর্নার থেকে আমার একটি গোল আছে ভালো।
জাগো নিউজ : তো কোন গোলটিকে এগিয়ে রাখবেন? মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ওইটা না কি, মঙ্গোলিয়ার বিরুদ্ধে গোলটা?
মনিকা : আমার চোখে বঙ্গমাতা গোল্ডকাপে মঙ্গোলিয়ার বিরুদ্ধে করা গোলটি বেশি ভালো।
জাগো নিউজ : এমন ভালো খবরটা কী আপনার সতীর্থরা জেনেছেন?
মনিকা : না, আমি কেবলই তো শুনলাম। তারপরই আপনার সঙ্গে কথা বলছি। এরপরই সবাইকে জানাবো।
জাগো নিউজ : এ গোলটি আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে কি না?
মনিকা : এটা আমার জন্য অন্যরকম পাওয়া। এমন গোল আগে কখনও করিনি। আগামীতে আরও ভালো খেলায় অনুপ্রাণিত করবে।
জাগো নিউজ : ফাইনাল না হওয়ায় কেমন লাগছে আপনার?
মনিকা : বৃষ্টির কারণে ফাইনাল না হওয়ায় আমার মন খারাপ। শুধু আমারই নয়, সবারই মন খারাপ। ফাইনাল হলে আমরা পুরো শক্তি দিয়ে খেলতাম। আরও ভালো গোল করার চেষ্টা করতাম।
আরআই/এমবিআর