পুরস্কারের অর্থ বাবা-মায়ের হাতে দেবেন কৃষ্ণা
বাসুদেব সরকার ও নমিতা রানী দম্পতির টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় আসার কথা ছিল বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৯ নারী আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ দেখতে। ওই দিন প্রচণ্ড গরম থাকায় আসেননি। না এসে হয়তো আফসোসেই পুড়েছেন দেশের নারী ফুটবলের অন্যতম তারকা কৃষ্ণা রানী সরকারের বাবা-মা।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জয়ে যে বড় ভূমিকা রেখেছেন তাদের মেয়ে। গোল করেছেন, আক্রমণভাগে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো হয়েছেন ম্যাচসেরা। মেয়ের এমন ম্যাচ বাসুদেব-নমিতা দম্পতি স্টেডিয়ামে বসে দেখতে পারলে কতই না খুশি হতেন।
তাই বলে মেয়ের খেলা মিস করেননি তারা। বাড়িতে বসে টেলিভিশনে দেখেছেন কৃষ্ণার কীর্তি। ম্যাচসেরা পুরস্কার নেয়ার সময় মেয়ের মুখের হাসির ঢেউ যেন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম থেকে আছড়ে পড়ছিল তাদের বুকে। বাবা-মা ম্যাচ দেখতে আসলে ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচসেরা হয়ে পাওয়া ৫০০ মার্কিন ডলার তাদের হাতেই তুলে দিতেন।
তারা হয়েতো আসবেন। হতে পারে সেমিফাইনালে বা বাংলাদেশ ফাইনালে উঠলে। তখন বাবা-মায়ের হাতে পুরস্কারের পুরো টাকা তুলে দেবেন বলেই তা রেখে দিয়েছেন জাতীয় দলের এ ফরোয়ার্ড। বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘ক্যারিয়ারে এই প্রথম আমি ম্যাচসেরা খেলোয়াড় হয়েছি। যে ৫০০ ডলার পেয়েছি এটা রেখে দিয়েছি। বাবা-মায়ের জন্য।’
শুক্রবার কিরগিজস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের শেষ গ্রুপ ম্যাচ। কিরগিজস্তান নামটি কৃষ্ণাকে শিহরিত করে। তিন বছর আগে এই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই পর্বে বাংলাদেশের মেয়েরা কিরগিজস্তানকে উড়িয়ে দিয়েছিল ১০-০ গোলে। হ্যাটট্রিক করেছিলেন কৃষ্ণা।
সে কিরগিজস্তান আবার কৃষ্ণার সামনে। প্রথম ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হওয়ায় আত্মবিশ্বাস তো আরো বেড়ে গেছে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার পাথুলিয়া গ্রামের এ কিশোরীর।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ২ গোলের জয়ের একটি কৃষ্ণা রানী সরকারের। ভালো গোল করে আলোচিত হয়েছেন, সমালোচিত হয়েছেন সহজ সহজ সুযোগ নষ্ট করে। তা না হলে হ্যাটট্রিকও হতে পারতো এ ফরোয়ার্ডের। ওই ম্যাচ নিয়ে কৃষ্ণা বলেন, ‘আসলে প্রথম ম্যাচে আমাদের অনেক ভুল হয়েছে। তাই গোল মিস করেছি। ভুলগুলো যাতে আর না হয়, তা নিয়ে অনুশীলনে আমরা অনেক কাজ করেছি।’
অতীত বলছে কিরগিজস্তান সহজ প্রতিপক্ষ বাংলাদেশের মেয়েদের। তাই এ ম্যাচ ঘিরে আত্মবিশ্বাসে কোনো ঘাটতি নেই কৃষ্ণাদের, ‘ওদের হারানোর আত্মবিশ্বাস আছে আমাদের। আমরা যখন ওদের সঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলেছিলাম, তখন ১০ গোলে জিতেছিলাম। এবার অবশ্য অনূর্ধ্ব-১৯ দল। তারপরেও চেষ্টা করবো ভালো খেলে তাদের হারাতে।’
এ ম্যাচে নিশ্চয়ই আরো বেশি গোল করতে চাইবেন? উত্তর দেন, ‘আসলে আমার মাথায় সবসময় দলকে জেতানোর বিষয়টিই কাজ করে। আমার যেমন গোল করার চেষ্টা থাকে, তেমন থাকে করানোরও।’
এই টুর্নামেন্ট দিয়ে কৃষ্ণা যেন নিজেকে ফিরে পেয়েছেন। বেশ কিছুদিন কৃষ্ণা ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। চোটে ভুগেছেন ১৫ দিন। যে কারণে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপটাও সেভাবে খেলতে পারেননি।
‘ইনজুরির কারণে আমার সময়টা খারাপই কাটছিল। এ জন্য মনের ভেতর একটা জিদ চেপেছিল যে, সুযোগ পেলে কাজে লাগাবো। প্রথম ম্যাচে সেটা করতে পেরেছি বলে ভাল লাগছে। এর আগে আমি অনেকগুলো মিস করেছি। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপে লাল কার্ড দেখেছিলাম। সব কিছু মিলিয়ে অনেক পিছিয়ে গিয়েছিলাম। এখন আমি নিজেকে ফিরে পেতে শুরু করেছি’- বলেন কৃষ্ণা রানী সরকার।
আরআই/এসএএস/এমকেএইচ