ভুল শুধরে আরো ভালো খেলার প্রত্যাশা মৌসুমীদের
সাত মাস আগে কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জালে গুণে গুণে ৭ গোল দিয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। সেটি ছিল এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই পর্ব।
সোমবার সেই আরব আমিরাতের জালে বাংলাদেশের মেয়েদের গোল মাত্র দুটি। এবারের টুর্নামেন্ট বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৯ আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ। জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করলেও বাংলাদেশের মেয়েদের খেলার ছন্দ আগের মতো ছিল না। সহজ সহজ সুযোগ থেকে গোল করতে না পারাটাই বেশি আলোচনা হয়েছে ম্যাচের পর।
আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের সঙ্গে এসেছিলেন ম্যাচের দ্বিতীয় গোলদাতা এবং সেরার পুরস্কার পাওয়া কৃষ্ণা রানী সরকার। অধিনায়ক মিসরাত জাহান মৌসুমী ম্যাচের পর কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি।
মঙ্গলবার দুপুরে বাফুফের টার্ফে দাঁড়িয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ নারী দলের অধিনায়ক চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন প্রথম ম্যাচের এবং কথা বলেছেন কিরগিজস্তানের বিরুদ্ধে পরের ম্যাচ নিয়ে।
শুরুতেই অধিনায়ককে উত্তর দিতে হয়েছে আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে অসংখ্য গোলের সুযোগ নষ্ট নিয়ে। ‘এর আগে আমিরাতকে ৭ গোল দিয়েছি; কিন্তু এবার আমরা দিয়েছি মাত্র দুটি। এ ম্যাচে আমরা অনেক সুযোগ তৈরি করেছি অথচ কাজে লাগাতে পারিনি। এখন তো আর কিছুই করার নেই। দুটি গোল পেয়েছি। আর গোল পাইনি। এই ম্যাচে আমাদের ভুলগুলো মেনে নিচ্ছি।’
ফেব্রুয়ারি-মার্চে দুটি টুর্নামেন্ট খেলেছেন। অনুশীনও চলেছে বিরামহীন। কোনো ক্লান্তি ভর করেছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেছেন, ‘কেনো ক্লান্তি ভর করেনি। আমরা প্রত্যেক টুর্নামেন্টের পর রিকভারি ট্রেনিং করি। আগের টুর্নামেন্টের কোনো প্রভাব পড়েনি। মিসগুলো আসলে হয়ে গেছে।’
জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করা ভালো দিক। তারপরও কিছুটা ছন্দহীন মনে হয়েছে দলকে। অতি আত্মবিশ্বাস ছিল কিনা খেলোয়াড়দের, জানতে চাইলে অধিনায়ক বলেন, ‘আমরা কখনো কোনো দলকে দুর্বল হিসেবে দেখি না। অতি আত্মবিশ্বাস আমাদের দাবিয়ে দিয়েছে এটা কখনো হয়নি। প্রতিপক্ষকে সব সময় শক্তিশালী ভেবেছি। আমাদের মেয়েরা যে যার জায়গা থেকে শতভাগ উজাড় করে খেলার চেষ্টা করেছে। ওরা ওদের সর্বোচ্চ দিয়েছে। শুধু ফিনিশিংয়ে ভুল-ত্রুটি, দুর্বলতা ছিল।’
ঘরের মাঠ। নিজেদের আয়োজনের এই টুর্নামেন্টকে অনুপ্রেরণা হিসেবেই দেখছেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক, ‘নিজের মাটিতে খেলা। এটা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। কোনো চাপ নেইনি আমরা। আগেও ভালো খেলা দিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিয়েছি। এবারও আমরা দর্শকদের ভালো খেলা উপহার দিয়েছি। মেয়েরা ভালো খেলার চেষ্টা করেছে’- বলেন মিসরাত জাহান মৌসুমী।
স্ট্রাইকার স্বপ্নার মতো অধিনায়ক মৌসুমীও খেলোয়াড়দের মধ্যে আত্মকেন্দ্রিক প্রবণতা ছিল তা মানছেন না, ‘সবার গোল দেয়ার প্রবণতা ছিল- সে অভিযোগ ঠিক না। আমরা সব সময় বলি, সেলফিশ খেলার জন্য কেউ মাঠে নামব না। এটা খেলা শুরুর আগে ওয়াদা করেই নামি। সব ম্যাচে চেষ্টা করি টিমের জন্য গোল বের করার। যদি কারোর স্কোর লাইন বেশি থাকে তখন বলি, তুমি এবার স্কোর বেশি করে নাও। এ ম্যাচে নিজেদের ভুলের জন্যই গোল বেশি হয়নি।’
প্রথম ম্যাচে যে ভুল-ত্রুটিগুলো হয়েছে তা সুধরে সামনে আরো ভালো খেলবেন উল্লেখ করে অধিনায়ক বলেছেন, ‘আমাদের পরের ম্যাচ কিরগিজস্তানের সঙ্গে। ওরা খুব শক্তিশালী। প্রতি ম্যাচকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। এর সঙ্গে চেষ্টা করব ফাইটিং খেলা উপহার দেয়ার। দুই গোল দেয়ার পর নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি, কখনো বেশি বা কম গোল নিয়ে জিতি। এটা নিয়ে আফসোস করি না বা উত্তেজিত হই না। এটা খেলারই অংশ। এসব নিয়ে আমরা চাপও নেই না। তবে হ্যাঁ, আমাদের ভুল-ত্রুটি যা হয় তা নিয়ে কথা বলি। এ ম্যাচের পরও বলেছি। স্যাররাও (কোচ) বলেছেন ছোটখাটো এসব ভুল না হলে আরও বেশি গোল হতো।’
আরআই/আইএইচএস/এমএস