সৃষ্টিকর্তার কাছে গোলের প্রার্থনার পর হ্যাটট্রিক জীবনের
ঢাকার ফুটবলে নাবীব নেওয়াজ জীবনকে অনেকে বলেন ‘মিস মাস্টার।’ আবাহনীর এ স্ট্রাইকার নিজেও জানেন কী পরিমাণ সুযোগ তিনি নষ্ট করেন মাঠে। তার ভুলে দলকেও দিতে হয় খেসারত। শনিবার সন্ধ্যায় সেই জীবনেই আলোকিত বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের মাঠ। ম্যাচ শেষে তাকে নিয়েই শুরু হলো আবাহনীর ডাগআউটে উচ্ছ্বাস। ম্যাচের পর জীবনের সঙ্গে সেলফির প্রতিযোগিতা আকাশি-হলুদ সমর্থকদের।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে শনিবার চতুর্থ ম্যাচ খেললো আবাহনী। রহমতগঞ্জের বিরুদ্ধে জয় ৫-১ গোলের। জীবনের হ্যাটট্রিক। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো প্রিমিয়ার লিগে হ্যাটট্রিক করার পরও মাঠে জীবনের উদযাপন ছিল না চোখে পড়ার মতো। ম্যাচের পর সে প্রশ্নটিও শুনতে হলো তাকে। কেন?
জীবনের জবাবটা তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি উচ্ছ্বাস করতে চান না গোল করে। কারণ গোল করাই যে তার কাজ। কিন্তু পারছেন না বিদেশির দাপটে নিজের পজিশনে খেলতে না পারায়। একাদশেও অনিয়মিত।
‘আমি খেলা শুরু করেছি স্ট্রাইকার হিসেবে। কিন্তু আমাকে এখন বেশিরভাগ সময়ই খেলতে হয় অ্যাটাকিং মিডফিল্ডে কিংবা এক পাশে। মেইন স্ট্রাইকার হিসেবে খেলার সুযোগ তো পাই না। হ্যাটট্রিক করলেও এখনই উচ্ছ্বাস করতে চাই না। আমি অনেক দূরে যেতে চাই’-ম্যাচের পর আবাহনীর হ্যাটট্রিকম্যান।
গোল পাচ্ছিলেন না। তাই তো প্রতি ম্যাচে নামার আগে আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে প্রার্থনা করেন জীবন, ‘একটি গোল দাও।’ নিত্য প্রার্থনার পর অবশেষ গোলের মুখ দেখলেন জীবন। তাও খাতা খুললেন হ্যাটট্রিক দিয়ে। লিগের চতুর্থ ম্যাচেই হ্যাটট্রিক। পথটা অনেক লম্বা। স্বপ্নটাও বড় হলো জীবনের। মনের মাঝে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার স্বপ্নের বীজটা যে শনিবার বপন করলেন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাসে দাঁড়িয়ে।
‘আমি প্রতিবার স্বপ্ন দেখি সর্বোচ্চ গোলদাতা হবো। কিন্তু পারিনা। নিজের পজিশনে তো খেলতেই পারি না। পারলে গোলও বাড়বে, আমার সে বিশ্বাস আছে। এখন তো আমার আত্মবিশ্বাস আরো বেড়েই গেলো’-বলছিলেন জীবন।
জীবনের এই হ্যাটট্রিক ভিআইপি গ্যালারিতে বসে দেখেছেন জাতীয় দলের কোচ জেমি ডে। ম্যাচের পর এ ইংলিশ কোচের মুখে হাসি, ‘জীবন খুবই ভালো খেলেছে।’ জাতীয় দলের স্ট্রাইকার যখন ঘরোয়া ফুটবলে ভালো খেলেন, তখন কোচের মুখে তো হাসি ফুটবেই। তাই তো মাঠে হ্যাটট্রিক করেছেন জীবন, তা নিয়ে মাঠের বাইরে মিডিয়াকে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন কোচ।
আবাহনীর পর্তুগালের কোচ মারিও লেমোস এক সময় বাংলাদেশ জাতীয় দলের ফিটনেস কোচ ছিলেন। জীবনকে তিনি আগে থেকেই ভালোভাবে চেনে। প্রতি ম্যাচে নামার আগেই জীবনকে কোচ বলে দেন, ‘তোমার যোগ্যতা আছে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলো।’
কোচের অধীনে অনুশীলনের পাশাপাশি নিজেও আলাদা অনুশীলন করেন উল্লেখ করে জীবন বলেছেন, ‘আমি এখন ভুল করতে চাই না। সুযোগ কাজে লাগাতে চাই। যে মিসগুলো করে থাকি তা নিয়ে একা একা কাজ করি।’
আরআই/এমএমআর/এমকেএইচ