সমুদ্রপাড়ে ফুটবল উৎসব
দিনভর কক্সবাজারের আকাশে চকচকে রোদ থাকলেও সন্ধ্যার পর হঠাৎ বৃষ্টি। রাস্তার পাশে নিরাপদ জায়গায় জটলা বেঁধে থাকা মানুষের আলোচনা তখন মঙ্গলবার দুপুরের বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের প্রথম সেমিফাইনাল-বৃষ্টি মাঠের বেশি ক্ষতি করবে না তো? সমুদ্রপাড়ের এই শহরের হাসপাতাল সড়কের বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন স্টেডিয়ামের মাঠের চরিত্র অবশ্য আশা জাগানিয়া। মাঠ পরিচর্যার দায়িত্বপালনরত বাফুফের লোকজনের প্রত্যাশা লম্বা সময় ভারী বৃষ্টি না হলে এ মাঠ নিয়ে শঙ্কা নেই, এখানকার মাটি অতটা নরম নয়।
বৃষ্টি নামার পর সাধারণ মানুষের মাঠ নিয়ে আলোচনাটাই জানান দিচ্ছে, এই শহরের দুটি সেমিফাইনাল ঘিরে কতটা উত্তেজনাকর সময় পার করছেন তারা। কক্সবাজার শহর আর সমুদ্র সৈকতে পা রাখলে কেমন যেন ফুটবল-ফুটবল ঘ্রাণ। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের দুটি ম্যাচ সমুদ্রপাড়ের মানুষকে করেছে রীতিমতো ফুটবলমুখী। বিশেষ করে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে থাকায়। জাতীয় দলে স্থানীয় চার ফুটবলার গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকু, ডিফেন্ডার সুশান্ত ত্রিপুরা এবং দুই ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও তৌহিদুল আলম সবুজও এখন কক্সবাজারবাসীর বাড়তি আকর্ষণ।
টিকিট বিক্রির নির্ধারিত স্থানগুলোয় দিনভর জটলা ছিল। গ্যালারির টিকিটের দাম ১০০ টাকা হলেও তা নিয়ে আফসোস নেই। বরং টিকিট না পাওয়াই এখন সমুদ্রপাড়েরর মানুষের বড় আফসোস। আয়োজকদেরও কিছু করার নেই, স্টেডিয়ামের গ্যালারির দর্শকধারণ ক্ষমতা যে মাত্র ১২/১৪ হাজার।
সিলেটে ৬ দেশের গ্রুপ পর্ব শেষে সেমিফাইনালের টিকিট নিয়ে কক্সবাজারে বাংলাদেশ, ফিলিস্তিন, তাজিকিস্তান ও ফিলিপাইন। মঙ্গলবার বিকেলেই নিশ্চিত হবে এক দলের ঢাকার টিকিট, আরেক দলের দেশে ফেরার। তাজিকিস্তান না ফিলিপাইন পাবে ফাইনালের টিকিট, তার পরীক্ষা শুরু হবে দুপুর আড়াইটায়।
সিলেট থেকে কক্সবাজার এসে চার সেমিফাইনালিস্ট থাকছে এক ছাদের নিচে। সোমবার টিম হোটেলে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করলেন তাজিকিস্তান, ফিলিপাইন ও ফিলিস্তিনের কোচ-অধিনায়করা। বাংলাদেশের কেউ অফিসিয়াল ব্রিফিংয়ে না থাকায় প্রশ্ন উঠলো চারিদিকে। পরে অবশ্য বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রুপু ব্যাখ্যা দিলেন, ‘প্রধান কোচ জেমি ডে অসুস্থ হওয়ায় বাংলাদেশ দলের কেউ থাকতে পারেননি অফিসিয়াল ব্রিফিংয়ে।’
বাংলাদেশ সেমিফাইনালে নামবে বুধবার টুর্নামেন্টের টপ ফেভারিট ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে। তাদের আগে কক্সবাজারবাসী দেখবে দুই ভীনদেশির লড়াই। ‘বি’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া ফিলিপাইন ও ‘এ’ গ্রুপ রানার্সআপ তাজিকিস্তান দুই দলই উঠতে চায় ফাইনালমঞ্চে। দুই দলই আশ্বাস দিল ভালো ফুটবলের। কক্সবাজারের স্টেডিয়াম অভিষেক আন্তর্জাতিক ম্যাচটি বেশ জমবে বলেই মনে করছেন সবাই।
ফিলিপাইনের ম্যানেজার যোসেফ ম্যালিনে বলেছেন, ‘তাজিকিস্তান ভালো দল। তবে আমরা ফাইনালে চোখ রেখেই মাঠে নামবো।’ অধিনায়ক মিসাঘ বাহাদোরানও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী, ‘আমরা সবাই নিজেদের সেরাটা দিয়ে ম্যাচ জয়ের চেষ্টা করবো। তাজিকিস্তান শক্ত প্রতিপক্ষ। তাদের হারাতে আমাদের সর্বোচ্চটাই দিতে হবে।’
তাজিকিস্তানের কোচ তুখ তায়েভ বলেছেন,‘গ্রুপ পর্বের ম্যাচের পর আমরা চারদিন সময় পেয়েছি। আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত সেমিফাইনালের জন্য। আমরা আমাদের মতোই খেলবো। এ ম্যাচ নিয়ে আমরা আলাদা কোনো কাজ করিনি।’ অধিনায়ক ফাতখুল্লোর সরাসরি কথা, ‘আমরা ফাইনালে যেতে চাই। আমরা দুপুর আড়াইটায় ম্যাচ খেলা নিয়েও ভাবছি। ওই সময়ে এ জায়গার কন্ডিশন আমাদের দেশের মতো নয়। যদিও কন্ডিশনের বিষয়টি সব দলের জন্য সমান।’
আরআই/এমএমআর/আরআইপি