মেসি-সুয়ারেজের গোলবন্যার নৈপথ্যে কৌতিনহো
ব্রাজিলিয়ান তারকা ফিলিপে কৌতিনহোকে ইংলিশ ক্লাব লিভারপুল থেকে নিজেদের দলে আনতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনাকে। দফায় দফায় প্রস্তাব বাতিল ও দলবদল ঝুলে যাওয়ার পরে ১৯২ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে তাকে দলে নেয় বার্সা।
কিন্তু কৌতিনহোকে দলে নেয়ার পর থেকেই চারপাশ থেকে আসতে থাকে নানান প্রশ্ন, সমালোচনার তীর। সবার সুর একই, তা হলো বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ দামী খেলোয়াড় হওয়ার যোগ্যতা আছে কি কৌতিনহোর, কিংবা তিনি কি পারবেন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার জায়গা পূরণ করতে?
এমন সব প্রশ্ন ওঠাটা ছিল খুবই স্বাভাবিক। কেননা বেশ কিছু ম্যাচে খালি চোখে কিংবা পরিসংখ্যানের পাতায় সাদামাটা দেখা গিয়েছে ২৬ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডারকে। তবে প্রায়শই নিজের দক্ষতা ও খেলার সৌন্দর্য্য দিয়ে সবার মন ভরিয়েছেন এ ব্রাজিলিয়ান। কিন্তু তার সফলতার চেয়ে ব্যর্থতাটাই যেন মানুষ বেশি আলোচনায় নিয়ে আসে।
এই যেমন রোববার রাতে স্প্যানিশ লা লিগায় নবাগত ক্লাব হুয়েস্কার বিপক্ষে ৮-২ গোলের বিশাল ব্যবধানে জিতেছে বার্সেলোনা। ম্যাচে জোড়া গোল করেছেন লিওনেল মেসি ও লুইস সুয়ারেজ। জর্ডি আলবা, ওসুমানে দেম্বেলে, ইভান রাকিটিচরাও একটি করে গোল করেন। কিন্তু গোলের দেখা পাননি কৌতিনহো। একারণেই শুরু হয়ে যায় তার বিরুদ্ধে সমালোচনা। অথচ মাঠের খেলায় ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ম্যাচটি খেলেছেন কৌতিনহো। হুয়েস্কার রক্ষণে মেসি-সুয়ারেজদের আক্রমণের বারুদ সাজিয়েছিলেন এ ব্রাজিলিয়ানই।
যেকোন দলের বিপক্ষে লিওনেল মেসি নামটাই যথেষ্ট জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়ার জন্য। হুয়েস্কাও পুড়ে ছারখার হয়েছে। ম্যাচে মেসি করেছেন জোড়া গোল, করিয়েছেন আরও দুইটি। কিন্তু মেসির অমন দানবীয় পারফরম্যান্সের পেছনে যে ছিল কৌতিনহোর বুদ্দিদীপ্ত সব পাস ও দুর্দান্ত কৌশলী ফুটবল তা এড়িয়ে গেছে অনেকেই।
বার্সেলোনার নিকট অতীতে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা যেভাবে খেলা পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন তা দেখা যায়নি আর কারো মধ্যে। তবে কৌতিনহো নিজের এক-দেড় মৌসুমের এরই মধ্যে বেশ কিছু ম্যাচে ঝলক দেখিয়েছেন ইনিয়েস্তার সেরা ফর্মের। নিজে হয়তো গোল করেননি, তবে ইনিয়েস্তার মতোই সতীর্থদের সাজিয়ে দিয়েছেন দুর্দান্ত সব আক্রমণ। ঠাণ্ডা মাথার পাসে ছিন্নভিন্ন করেছেন প্রতিপক্ষের রক্ষণকে।
গোল স্কোরিং অ্যাবিলিটি বা গোল করার প্রতি খুব একটা আগ্রহ ছিলো না বার্সার স্প্যানিশ কিংবদন্তী ইনিয়েস্তার। তার জায়গা পূরণের গুরুদায়িত্ব পাওয়া কৌতিনহোর মাঝেও গোল করার তেমন চেষ্টা দেখা যায় না। এর চেয়ে বরং মেসি-সুয়ারেজদের দুর্দান্ত আক্রমণ সাজিয়ে দেয়ার দিকেই যেন বেশি মনোযোগ তার।
একইসাথে কৌতিনহোর পিছনে ইভান রাকিটিচ ও সার্জিও বুসকেটসের মত মিডফিল্ডাররা থাকায় আক্রমণভাগে ওঠার লাইসেন্সও রয়েছে তার। যার ফলে প্রায়ই দেখা যায় ডি-বক্সের বাইরে থেকে আচমকা শটে প্রতিপক্ষ রক্ষণ কাঁপিয়ে দিয়েছেন কৌতিনহো।
প্রথমত কৌতিনহোকে ১৯২ মিলিয়ন ডলারে কেনায় বার্সেলোনাকে শুনতে হয়েছে নানান সমালোচনা। এর উপরে গত সপ্তাহে কৌতিনহো ২৫তম বারের মাঠে নামায় তার সাবেক ক্লাব লিভারপুলকে বাড়তি ৫ মিলিয়ন ইউরো বোনাস দিয়েছে বার্সেলোনা। যার ফলে নতুন করে শুরু হয় কৌতিনহোর ট্রান্সফার ফি সম্পর্কিত আলোচনা।
তবে কৌতিনহো এতোদিন ধরে যা দেখিয়েছেন খেলার মাঠে, তা যদি ধরে রাখতে পারেন সামনের ম্যাচগুলোতেও তাহলে নিশ্চিতভাবেই ট্রান্সফার ফি বা বাড়তি বোনাস সম্পর্কে ভাবতে হবে না কখনো। উল্টো তিন মৌসুম ধরে চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জেতার অপেক্ষাটাও মিটে যেতে পারে এ মৌসুমেই।
এসএএস/পিআর