ওজিলের আচমকা অবসরে বিস্মিত কোচ লো
বর্ণবাদের অভিযোগে জার্মানি জাতীয় দল থেকে অবসর নেয়ার ঘটনায় যখন তোলপাড় পুরো ফুটবল বিশ্ব, তখন এর থেকে দূরে নেই জার্মানির কোচ জোয়াকিম লো। তিনিও পুরোপুরি বিস্মিত, তার দলের এমন একজন গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারকে হারিয়ে।
বিশ্বকাপের পর সার্দিনিয়ায় ছুটি কাটাচ্ছেন লো। এর মধ্যেই শুনলেন ওজিলের অবসরের কথা। এজেন্ট হারুন আর্সালানের মাধ্যমে প্রথম প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেলো জার্মান কোচের। লো’র এজেন্ট বলেছেন, ‘সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে জাতীয় দলের কোচের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি ওজিল। উনি কিছু জানতেন না। আমার মাধ্যমে কোচের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের কোনো চেষ্টাও করেননি ওজিল।’
জোয়াকিম লো’র এজেন্টের এই বক্তব্য প্রকাশ করেছে জার্মান দৈনিক ‘বিল্ড’। এরপরই ওজিলকে নিয়ে বিতর্ক আরও বেড়েছে। জার্মানিতে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, জাতীয় দলের কোচকেও তিনি কেন জানালেন না যে, অবসর নিতে চলেছেন! শুরু হয়েছে কোচের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে জল্পনা-কল্পনাও। জার্মানির কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের খবর, লো কোচ থাকলে এমনিতেও ওজিলের পক্ষে দলে থাকা কঠিন হতো।
২৯ বছরের আর্সেনাল তারকা সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিস্ফোরণই ঘটান জার্মানির জাতীয় দল থেকে অবসরের কথা ঘোষণা করে। জার্মানি ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট রেইনহার্ড গ্রিনডেলের বিরুদ্ধে তোপ দেগে তিনি বর্ণ বৈষম্যের অভিযোগও করেন। ওজিলের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা জার্মানিতে হলেও তার সঙ্গে তুরস্কের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
ওজিলের পূর্বপুরুষরা তুরস্কের। প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে আরও অনেকের মতো তুরস্ক থেকে ওজিলের পরিবারও চলে এসেছিল জার্মানিতে জীবিকা নির্বাহের সন্ধানে। গেলসেনকির্শেনে এসে ওঠেন তার পিতামহরা। সেখানেই জন্ম ওজিলের। তবে কখনোই তিনি তুরস্কের সঙ্গে তার শেকড়কে ভোলেননি। বিশ্বকাপ শুরুর আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে দেখা করে ছবি তুলে বিতর্কের মুখে পড়েন তিনি।
জার্মানিতে অনেকে এরদোয়ানকে স্বৈরাচারী হিসেবে দেখেন। কয়েকজন জার্মান সাংবাদিককে তিনি বন্দি করেও রেখেছিলেন। কারও কারও মনে হয়েছিল, নির্বাচনের মুখে দাঁড়ানো এরদোয়ান জার্মানির দুই ফুটবলারকে (ওজিল এবং গুন্দোগান) ব্যবহার করতে চাইছেন এবং সেটাও বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে। সেই কারণে ওইই সময়ে জার্মানিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়াই হয় তাদের নিয়ে।
এরপর বিশ্বকাপ থেকে জার্মানির গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায়ে আরও চাপে পড়ে যান ওজিল। রাশিয়ায় তাকে বসিয়েও রেখেছিলেন জোয়াকিম লো। তুমুল সমালোচনার মধ্যেই জার্মানির হয়ে আর খেলবেন না বলে জানিয়ে তেন তুর্কি বংশোদ্ভূত এই ফুটবলার। সঙ্গে বিস্ফোরক বিবৃতিতে জার্মান ফুটবল প্রেসিডেন্টেকে এক হাত নিয়ে লেখেন, ‘গ্রিন্ডেল (জার্মানি ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট) এবং তার অনুগামীদের বিচারে যখন জিতি, তখন আমি জার্মান। যখন হারি, তখন আমি অন্য দেশের।’
তবে জোয়াকিম লো’র বক্তব্যের পর এখন ওজিলের অবসর ঘোষণা নিয়ে কিন্তু বিস্ময়ই সৃষ্টি হয়েছে। কারণ লো এবং তার এজেন্ট ওজিলের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ছিলেন পুরোপুরি অন্ধকারে। ওজিলের পরামর্শদাতার সঙ্গে লোর এজেন্ট হারুন আরসালানের ব্যবসায়িক চুক্তিও রয়েছে। তারপরও জার্মানির জাতীয় দলের কোচের কাছে কেন আগাম খবর পৌঁছাল না, সেটাই আশ্চর্যের বিষয় হয়ে আছে অনেকের কাছে।
আইএইচএস/পিআর