রিয়ালে চলেই এলেন ব্রাজিলিয়ান ‘বিস্ময় বালক’
সব সময়ই তারকার জন্ম দেয় লাতিন আমেরিকা। বিশেষ করে বললে, ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা। ব্রাজিলের স্ট্রিট ফুটবল কিংবা পাভেলাগুলো (বস্তি) থেকে উঠে আসে বিস্ময়কর সব প্রতিভা। ব্রাজিলের বিশ্বজয়ী ফুটবলাররা উঠে এসেছে এ ধরণের তৃণমূল পর্যায় থেকেই। রাস্তা কিংবা বস্তি থেকে উঠে এসে পৃথিবী আলোকিত করেছিলেন পেলে, রোনালদো, রোনালদিনহো, রোমারিও কিংবা হাল আমলের নেইমারদের মত ফুটবলাররা।
তাদেরই দেখানো পথে হেঁটে আসছে আরেক বিস্ময় প্রতিভা। বয়স মাত্র ১৮। আরও এক বছর আগেই তাকে চুক্তিবদ্ধ করে রেখেছিল স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ। অবশেষে এক বছর নিজেদের সংগৃহীত অমূল্য রত্নকে ফুটবলবিশ্বের সামনে উন্মোচন করলো রিয়াল মাদ্রিদ। রিয়াল মাদ্রিদে নাম লেখানোর পর সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতেই নিজের আগমণী বার্তা ঘোষণা করলেন ভিনিসিয়াস। ছবি তুললেন, বল নিয়ে কারিকুরি দেখালেন, সতীর্থদের সঙ্গে অনুশীলন করলেন এবং সেখানে অসাধারণ প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটনালেন তিনি।
রিও ডি জেনিরো ছাড়িয়ে আরও ভিতরের দিকের এক শহরতলি সাও গনসালো। সেখানকার রাস্তায় ফুটবল নিয়ে মেতে থাকত এক দরিদ্র পরিবারের ছেলে। শুক্রবার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ছেড়ে যাওয়া সান্তিয়োগা বার্নাব্যুতে সেই ব্রাজিলীয় ছেলেটিকেই তাদের নতুন উঠতি তারকা হিসেবে উন্মোচন করল রিয়াল মাদ্রিদ। তিনিই ভিনিসিয়াস জুনিয়র। বলা হচ্ছে ব্রাজিলের নতুন এক নেইমার। ফুটবলের নতুন এক বিস্ময় বালক তিনি!
মাত্র ১৮ বছর বয়সে তাকে রিয়াল কিনল ৩৮.৭ মিলিয়ন পাউন্ড (৪২৭ কোটি টাকা) দিয়ে। ২০১৩ সালে সান্তোস থেকে নেইমার জুনিয়রকে ৪৯ মিলিয়ন পাউন্ড দিয়ে কিনেছিল বার্সেলোনা। নেইমার তখন ছিলেন অনেক পরিণত। মাত্র ১৮ বছর বয়সি এক কিশোরের জন্য এত টাকা খরচ করা নজিরবিহীন।
শুক্রবার রিয়ালের মাঠে যখন দর্শকদের সামনে ভিনিসিয়াসকে নিয়ে আসা হল, তার পাশে আর এক ব্রাজিলীয় কিংবদন্তি- রোনালদো। যিনি রিয়ালের হয়ে ১৭৭ ম্যাচে ১০৪ গোল করে ক্লাবের ‘হল অব ফেমে’ রয়েছেন। ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজও ছিলেন। এখনও ভিনিসিয়াসের জার্সিতে কোনও নম্বর নেই। যা দেখে মনে করা হচ্ছে, মাদ্রিদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে তাকে রিয়ালের ‘বি’ দলে পাঠানো হবে কি না সেটাই দেখার। ভিনিসিয়াস জানেন, আকাশছোয়া মূল্যে রিয়ালে এলেও প্রথম একাদশের জার্সি পাওয়া হয়তো এত সহজ হবে না।
তবে যিনি বড়ই হয়েছেন জীবনসংগ্রামের মধ্য দিয়ে, তার কাছে লড়াই নতুন কোনো শব্দ হতে পারে না। দাদীর বাড়িতে বাবা-মা এবং দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন ভিনিসিয়াস। নিজেদের বাড়িও ছিল না। দাদীর কাছে খাদ্যের অভাব হত না ঠিকই; কিন্তু দারিদ্রের ছাপ ছিল স্পষ্ট। সে সঙ্গে আরও একটি জিনিস প্রকট ছিল তার ছেলেবেলা থেকে।
ভিনিসিয়াসের ফুটবল প্রতিভা। মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই যা সকলের নজর টেনেছিল। মাত্র দশ বছর বয়সে তাকে স্বাক্ষার করায় ব্রাজিলের বিখ্যাত ক্লাব ফ্ল্যামেঙ্গো। দু’বার বাস পাল্টে ফ্ল্যামেঙ্গোর ট্রেনিং সেন্টারে যেতে হত তাকে। তিন বছরের মধ্যে অনূর্ধ্ব-১৫ দলের হয়ে অভিষেক। ১৪ বছর বয়সে চাচার সঙ্গে রিওতে চলে আসেন, যাতে আরও ভালভাবে ফুটবলে মন দিতে পারেন।
ব্রাজিলের বিখ্যাত যুব ফুটবল প্রতিযোগিতা কোপা সাও পাওলোতে দারুণ খেলে তিনি সবার নজর কাড়েন। ১৫ বছর বয়সে ফ্ল্যামেঙ্গোর হয়ে বোতাফোগোর বিরুদ্ধে ডার্বিতে তার গোল দেখে ব্রাজিলের ফুটবল ভক্তরা নিশ্চিত হয়ে যান, তাদের নতুন প্রতিভা উপস্থিত। গত বছর ব্রাজিল অনূর্ধ্ব-১৭ দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করে। সেখানে সেরা ফুটবলারের পুরস্কার পেয়েছিলেন ভিনিসিয়াস।
রিয়ালে আসার কথাও চূড়ান্ত হয়ে যায় গত বছরই। শুক্রবার নিজ দেশের কিংবদন্তী রোনালদোর পাশে দাঁড়িয়ে ভিনিসিয়াস প্রথম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন পরিবারের কাছে। বললেন, ‘আমার স্বপ্নকে সত্যি করার জন্য সবচেয়ে বেশি করে ধন্যবাদ দিতে চাই পরিবারকে। আমি জানি, মানিয়ে নেওয়া সহজ হবে না কিন্তু আমি তৈরি।’
মাত্র ১৮ বছর বয়সেই তার গলায় প্রত্যয়ের সুর, ‘খুব সাধারণ একটা প্রেক্ষাপট থেকে বিশ্বের সেরা ক্লাবে আমি পৌঁছেছি। এখানে এসে আমার কোচ এবং সতীর্থদের দেখাব যে, আমি খেলার জন্য তৈরি। ভাগ্যক্রমে আমার সামনে আরও কিছু বড় ক্লাবে যোগ দেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু আমি বিশ্বের সেরা ক্লাবকেই বেছে নিয়েছি।’
রিয়ালের ক্লাব প্রেসিডেন্টও যা শুনে বলে ফেললেন, ‘ব্রাজিল থেকে আরও এক রত্ন উঠে এসেছে। তাকে দেখার অপেক্ষায় ব্রাজিল, রিয়াল মাদ্রিদ এবং গোটা ফুটবল বিশ্ব!’ দশ বছর আগে নেইমারের উত্থানের পর এত হইচই আর কোনও ব্রাজিলীয় প্রতিভাকে ঘিরে এখনও পর্যন্ত দেখা যায়নি।
আইএইচএস/জেআইএম