ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

‘ফ্রান্সের জন্য ফাইনালটা কঠিন করে দেবে ক্রোয়েশিয়া’

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৬:১৬ পিএম, ১৪ জুলাই ২০১৮

স্বপ্নের এক অভিযাত্রা। বিশ্বকাপ শুরুর আগে ইভান রাকিটিচরা স্বপ্নেও কল্পনা করেনি তারা বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলবেন। শেষ পর্যন্ত উচ্ছাভিলাসই সত্য হলো। ক্রোয়েশিয়া এখন বিশ্বকাপের ফাইনালে। রোববার পর্দা নামছে রাশিয়া বিশ্বকাপের। ফাইনালে ফেবারিট ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে পুরো টুর্ণামেন্টেই আন্ডারডগ হিসেবে খেলে যাওয়া ক্রোয়েশিয়া।

ফ্রেঞ্চদের এটি তৃতীয় বিশ্বকাপ ফাইনাল হলেও এর আগে কখনোই ফাইনালে উঠতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। অর্থাৎ ইতোমধ্যেই ক্রোয়েশিয়ার ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে স্বর্ণালী অধ্যায়টা রচনা করে ফেলেছেন বর্তমান ক্রোয়াট ফুটবলাররা। একঝাঁক প্রতিভাবান ক্রোয়াট ফুটবলারদের মাঝে ইভান রাকিটিচের নাম প্রথম সারির দিকেই থাকবে।

নিজেদের ইতিহাসের প্রথম ফাইনালকে সামনে রেখে তাই রাকিটিচ সবকিছু বিষয়ে কথা বলেছেন কাতালোনিয়ান পত্রিকা মুন্দো দেপোর্তিভোর সঙ্গে। সেখানে নিজেদের ফুটবল, বিশ্বকাপে এতদুর উঠে আসা এবং সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিয়ে কথা বলেছেন রাকিটিচ। ওই সাক্ষাৎকারটিই তুলে ধরা হলো জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য...

প্রশ্ন : আপনি কি বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট হওয়ার ধারণার সাথে অভ্যস্ত? ফাইনালে ওঠার রাতে কি ঘুমাতে পেরেছেন?

রাকিটিচ : অন্য সব শিশুর মতো আমিও বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলার স্বপ্ন দেখেছি। ম্যাচের পর আমি আমার স্ত্রী রাকেলের কাছে হেঁটে যাই এবং বারবার বলতে থাকি, আমরা বিশ্বকাপ ফাইনালে। ক্রোয়েশিয়া এখন বিশ্বকাপের একটি ফাইনালিস্ট দল। রোববার আমি ফ্রান্সের বিপক্ষে খেলতে যাচ্ছি।

আমার রোমাঞ্চিত হবারই কথা। মস্কোতে ফাইনাল খেলতে যাচ্ছি। এখানে রোমাঞ্চিত হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। কারণ আমি জানি এটা আমার কাছে কী, এ পর্যন্ত আসতে আমাদের কতো মূল্য দিতে হয়েছে।

jagonews24

প্রশ্ন : আপনার মেয়েরা কি এটা বোঝে?

রাকিটিচ : সবচেয়ে বড় মেয়ে আলথেয়া বোঝে। সে আমাকে বলেছে, আমি নিশ্চিতভাবেই বিশ্বকাপ জিততে যাচ্ছি। ছোট মেয়ে আদারা বোঝে না।

প্রশ্ন : (ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে) রেফারি শেষ বাঁশি দেয়ার পর প্রথম আপনার মাথায় কোন ভাবনাটা এসেছিলো?

রাকিটিচ : ব্যক্তিগত পর্যায়ে কতো বড় সাফল্য ছিলো এটা! ম্যাচের পর আমি আমার প্রতিনিধি আর্তুরোর কাছে স্বীকার করেছি, ম্যাচের দিন সন্ধ্যায় আমার ১০২ ডিগ্রি জ্বর ছিলো। ডাক্তারের সাথে কথা বলে ব্যাপারটা কোচকে জানাই যে, আমার ভাবা লাগবে সেমিফাইনালের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে খেলতে পারবো কি না। আমি পুরো সময়টায় চার কেজি ওজন হারিয়েছি দারুণ চেষ্টার কারণে। ১৪ কিলোমিটার ভ্রমণ করেছি ম্যাচের আগে। জানি না, আমি কোথা থেকে ম্যাচটি খেলার শক্তি পেলাম। এটা আসলে ভেতর থেকেই আসে।

প্রশ্ন : ইংরেজরা কি বেশি কথা বলেছিলো?

রাকিটিচ : আমি শুধু বলতে পারি, শারীরিকভাবে তারা অনেক এগিয়ে ছিলো। তারা আমাদের চেয়ে ভালো অবস্থানে ছিলো; কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঘটলো এর উল্টো। দ্বিতীয়ার্ধ্বে আমরা তাদের থেকে ভালো খেলেছি এবং শেষ পর্যন্ত যোগ্য দল হিসেবেই জিতেছি আমরা। ক্রোয়েশিয়া জিতেছে, কারণ আমরা তাদের থেকে ভালো দল ছিলাম।

প্রশ্ন : আপনিই অল্প কয়েকজনের একজন যারা অসাধারণ খেলেছে।

রাকিটিচ : আমি ইতোমধ্যেই এমন একটি বিশ্বকাপ আশা করেছি; অনেক কঠিন, অনেক শারীরিক এবং কাছাকাছি প্রতিপক্ষ। এবং এটা জানা উচিত যে সবাই তাদের নিজস্ব ধারায় খেলে; কিন্তু বার্সায় আমরা যে ধারায় খেলি তা পছন্দ করি। আমরা ক্রোয়েশিয়াতেও একইভাবে খেলি। স্পেনের খেলার ধরণও পছন্দ করি; কিন্তু এটা প্রমাণিত যে এই বিশ্বকাপে ডিফেন্সের চেয়ে আক্রমণ করা বেশি কঠিন। এবং এগুলোই একটি বিশ্বকাপকে নির্ধারিত করে। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ যে, আমাদের জন্য সবকিছু ভালো গিয়েছে।

প্রশ্ন : আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, এবারের দুই ফাইনালিস্টই আর্জেন্টিনা এবং লিওনেল মেসিকে হারিয়েছে?

রাকিটিচ : হ্যাঁ সে (মেসি) পতিত হয়েছে; কিন্তু এখন সে বলে এটা মজার।

প্রশ্ন : তিনি কি আপনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে, যেহেতু আপনি এ পর্যন্ত এসেছেন?

রাকিটিচ : আমি জানি না আসলে। কারণ আমার ফোনে প্রচুর মেসেজ আসে এবং আমাকে তার সবগুলোই চেক করতে হয়। আমি এটা দেখবো; কিন্তু তিনি সবসময়ই আমাকে সাহস যুগিয়েছে এবং এ জন্য আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই। মেসি ছাড়াও বার্সা এবং সেভিয়ার অন্য সতীর্থরাও এটি করে থাকে। তারা ভালো একটি বর্ণনা যেটি আপনাকে উৎসাহ যোগাবে এবং আশ্বস্ত করবে যে কোন ম্যাচে।

প্রশ্ন : আপনি কি ইতোমধ্যেই ফ্রান্সকে নিয়ে চিন্তা করে ফেলেছেন? তারা ভয়ংকর একটি প্রতিপক্ষ।

রাকিটিচ : তারা খুবই শক্তিশালী একটি দল, এটি সত্যি। যোগ্য দল হিসেবেই ফাইনালে এসেছে। কারণ দাপটের সাথে প্রতিটা ম্যাচ খেলেছে। এটা খুবই কঠিন একটি ফাইনাল হবে; কিন্তু বলতে চাই যে এটা আমাদের জন্য ঐতিহাসিক এক ম্যাচ। ফাইনাল খেলবো এবং আমরা শিরোপা জেতার জন্যই যাবো। এটা এমন একটি সমাপ্তি, যা আপনি সবসময়ই চেয়েছেন। লক্ষ্য করুন, ক্রোয়েশিয়া সড়ে চার মিলিয়ন মানুষের ছোট্ট একটি দেশ এবং আমরা ফাইনালে। আমাদের পেছনে অনেক লোক রয়েছে। ফ্রান্সের অবশ্যই জানা উচিত, তাদের জন্য কাজটা সহজ হতে যাচ্ছে না।

প্রশ্ন : কোচ জ্লাতকো দালিচ আপনাদের বলেছেন, মাঠে জেতো এবং উপভোগ করো। আপনি কি জানেন, ১৯৯২ সালে ওয়েম্বলি ফাইনালের আগেও ইয়োহান ক্রুইফ বার্সা খেলোয়াড়দের একই কথা বলেছিলেন?

রাকিটিচ : উনি আমাদের বিশ্বকাপের আগে এটি বলেছেন যে আমরা প্রতিটি ম্যাচ উপভোগ করবো। আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার এটি। ক্রোয়েশিয়ায় তার আগমনটা দারুণ ছিলো। কারণ রাশিয়ায় আসার আগে আমরা ভালো সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম না।

প্রশ্ন : জ্লাতকো দালিচ খেলোয়াড়দের সাথে কথা বলতে পছন্দ করেন। তিনি সবার কথা শোনেন; কিন্তু দিনশেষে আপনিই আপনার সিদ্ধান্ত নেন...।

রাকিটিচ : আমি মনে করি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তিনি খুবই আন্তরিক একজন ট্যাকটিশিয়ান। তিনি খেলোয়াড়দের ধারণাগুলো শুনতে পছন্দ করেন কিন্তু তার নিজেরও কিছু স্বচ্ছ চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। তিনি জানেন তিনি কি চান এবং এটিই আমাদের শক্তির অংশ যে, আমরা এক সাথে সব ঠিক করি। কারণ, যদি কোচ একদিকে এবং খেলোয়াড়েরা আরেকদিকে চিন্তা করেন তাহলে এটা দলের জন্য ভালো হবে না।

jagonews24

প্রশ্ন : ইভান পেরেসিচের গোলটা কি মানসিক ছিলো?

রাকিটিচ : হ্যাঁ, তাদের পরিপূর্ণ তিনজন ডিফেন্ডার ছিলো যারা খুবই শক্তিশালী এবং লম্বা। ফাকা জায়গায় বল খুঁজে পাওয়াটা কষ্টকর হয়ে পড়েছিলো। এটার নিজস্ব একটা জায়গা ছিলো, যা তাদের খোলামেলা খেলতে বাধ্য করেছে। আর এটিই আমাদের জায়গা পাইয়ে দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত আমরা এর সুবিধা নিই এবং গোল করি।

প্রশ্ন : আপনি কি মনে করেন ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সে যে ক্রোয়াট প্রজন্ম সেমিফাইনালে গিয়েছিলো তারা আপনাদের চেয়ে আরো বেশি উজ্জীবিত ছিলো?

রাকিটিচ : হ্যাঁ এটা খুবই ভালো যে ডেভর সুকার, ভন বোবান এবং আমাদের প্রেসিডেন্ট আমাদের জন্য একইভাবে রোমাঞ্চিত। সবাই চায় আমরা যেন জিতি এবং ম্যাচের আগে তারা আমাদের উৎসাহ যোগায়। মারিও স্ট্যানিচ আমাদের হোটেলে পরিদর্শন করে গেছেন। তারা সবাই পেছন থেলে আমাদের ঠেলছে এবং সেটা প্রশংসাযোগ্য। তারা আমাদের জন্য গর্বিত। তাদের ছাড়া আমাদের এ পর্যন্ত আসাটা কল্পনা করাও কঠিন। আমি মানুষের আনন্দের সুন্দর কিছু ছবি দেখেছি।

প্রশ্ন : তাৎপর্যগত দিক থেকে আপনার ক্রোয়েশিয়া এবং বার্সার খেলায় কি কোন পার্থক্য আছে?

রাকিটিচ : বার্সায় আমাদের লিওনেল মেসি, লুইস সুয়ারেজ, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, সার্জিও বুস্কেটসদের মতো গ্রেট কিছু খেলোয়াড় রয়েছে। এখানেও দারুণ সব খেলোয়াড় রয়েছে কিন্তু তারা কিছুটা আলাদা। লুকা মদ্রিচ, পেরেসিচ, রেবিকদের সাথে একই সাথে খেলা এবং মানজুকিচকে সামনে রেখে খেলার কোন তুলনাই হয় না।

প্রশ্ন : আপনি কি বিশেষভাবে খুশি যে, মানজুকিচ বিজয়ী গোলটা করেছে?

রাকিটিচ : হ্যাঁ ঠিক। সে একজন দারুন স্ট্রাইকার এবং এটা আমাদের দলে প্রয়োজন। টানা ২০০ মিনিট একইভাবে খেলে যাওয়ার ক্ষমতা তার রয়েছে।

প্রশ্ন : আপনি কি নিজেকে বার্সা লকার রুমে একজন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দেখতে পাচ্ছেন?

রাকিটিচ : আমার জন্য এটা গর্বের হবে এবং আমি সবসময় দলের কথা চিন্তা করি। সবসময়ই বলি যে আমি আমার দেশ ক্রোয়েশিয়ার জন্য খেলি; কিন্তু একইসঙ্গে বার্সার প্রতিনিধিত্বও করি। যেমন স্যামুয়েল উমতিতি এবং উসমান দেম্বেলেও করে থাকে। এটা ক্লাবের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটা খুবই ভালো যে বার্সার খেলোয়াড়েরা বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলবে।

লিখেছেন : দারুল কারার তৌষিক।

ডিকেটি/আইএইচএস/আরআইপি

আরও পড়ুন