ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন’ হবে ইংলিশ ক্লাব!

আরিফুর রহমান বাবু | প্রকাশিত: ০৯:৫৭ পিএম, ১১ জুলাই ২০১৮

১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল ফাইনালের পর দিন; ১৩ জুলাই ইংল্যান্ডের প্রসিদ্ধ ট্যাবলয়েড দৈনিক ‘দ্য মিররের’ শিরোনাম ছিল- ‘আর্সেনালের বিশ্বকাপ বিজয়।’ সবার জানা রোনালদো, রিভালদো আর দুঙ্গা-কাফুর ব্রাজিলকে নাস্তানাবুদ করে ৩-০ গোলের ব্যবধানে অনায়াস জয়ে প্রথমবার ফুটবলে বিশ্বসেরার মুকুট মাথায় পরেছিল ফ্রান্স।

সেখানে ইংলিশ ক্লাব আর্সেনালের বিশ্বকাপ জয়ের প্রসঙ্গ আসছে কেন? আর বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ও জনপ্রিয় দৈনিক মিরর’ই বা বিশ্বকাপ বিজয়ের সাথে আর্সেনালকে জড়িয়ে শিরোনাম করেছিল কেন? নিশ্চয়ই ধাঁধা তৈরি হয়েছে মনে?

হ্যাঁ, বিষয়টা একটু জটিলই। শিরোনামে ইংলিশ ক্লাব আর্সেনালের নাম বাদ দিয়ে কোন ফরাসি ক্লাব যেমন ধরা যাক এখন যে দলে নেইমার খেলেন, সেই পিএসজিকে জড়িয়ে করলেও বোধোগম্য হতো। ধরে নেয়া যেত, হয়তো ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী লাইন আপে এক ঝাঁক পিএসজি’র খেলোয়াড় ছিলেন। কিন্তু ফ্রান্সের বিশ্বসেরা হওয়ার সাথে আর্সেনালকে মেলানো সত্যিই কঠিন।

আসুন জটিলতা মুক্ত হই। আসলে বিশ্ব ফুটবলে জিনেদিন জিদানের নেতৃত্বে ফরাসি বিপ্লবের আরেক সৈনিক ছিলেন ইমানুয়েল পেতিত। যিনি ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলে ছিলেন আর্সেনালের খেলোয়া। বলার অপেক্ষা রাখে না, ওই বিশ্বকাপ বিজয়ী ফরাসি স্কোয়াডে ইংলিশ লিগে নিয়মিত খেলা একজন মাত্র ফুটবলারই ছিলেন ইমানুয়েল।

তাই মিররের শিরোনামে ছিল ‘আর্সেনালের বিশ্বকাপ জয়।’ একটি জটিল সমীকরণের জট খুলে দিলেও আরও একটি ধাঁধায় ফেলে দিই- বলুন তো ২০ বছর পর এবার মস্কোয় বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালের পরদিন মানে ১৬ জুলাই ইংলিশ দৈনিক মিরর আর গার্ডিয়ানের শিরোনাম কি হতে পারে?

ভাবছেন, মনে প্রশ্ন উঠছে- ইংল্যান্ড ফাইনাল খেলবে কি না, জানা নেই। আর ফাইনালে গেলেও ফরাসিদের সাথে পেরে উঠবে কি না, ঠিক নেই- আর এখনই মিরর-গার্ডিয়ানের হেডিং নিয়ে মাথা ব্যথা কেন?

মাথা ব্যথা নয়। চরম সত্য। বিষয়টা এমন দাঁড়িয়েছে ১৫ জুলাই মস্কোর লুজনিকি স্টেডিয়ামে যে দলই বিশ্ব সেরা হোক, তাতে একজন হলেও ইংলিশ লিগ খেলা ফুটবলার থাকবেন। থাকবেন মানে থাকতে পারেন নয়। থাকবেনই। এতটা নিশ্চিত করে বলা কেন?

এই কারণে এতটা জোর দিয়ে বলা, কারণ সেমিফাইনালে উঠে আসা চার দলের (ফ্রান্সের কাছে ২৪ ঘণ্টা আগে ১-০ গোলে হেরে বিদায় নেয়া বেলজিয়ামসহ) ৯২ জন ফুটবলারের মধ্যে (প্রতি দলে ২৩ জন হিসেবে) ৪১ জন ফুটবলার নিয়মিত ইংলিশ লিগ খেলে থাকেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, ইংল্যান্ডের সবাই ইংলিশ লিগের নিয়মিত প্লেয়ার। ইংলিশ স্কোয়াডে ২৩ জনের কেউ স্প্যানিশ, ইতালিয়ান, ফরাসি, জার্মান লিগে খেলেন না। সবাই নিজ দেশের ক্লাব ফুটবলেই জড়িত।

দ্বিতীয় সর্বাধিক ১১ জন ইংলিশ লিগে খেলা ফুটবলার গড়া দল ছিল বেলজিয়াম। যেহেতু বেলজিকরা বিদায় নিয়েছে। তাই তাদের কথা আর হিসেবে এনে লাভ নেই। এখন যে দল ফাইনালে চলে গেছে, সেই ফরাসি স্কোয়াডেও পাঁচজন আছেন ইংলিশ লিগ খেলা ফুটবলার (হুগো লরিস, বেঞ্জামিন মেন্ডি, পল পগবা, অলিভিয়ের জিরু, এনগোলো কন্তে)।

আর ক্রোয়েশিয়ারও একজন ডেজান লোভরেন খেলেন ইংলিশ লিগে। তাহলে কি দাড়ালো? এরই মধ্যে ফাইনালের টিকিট কনফার্ম করে ফেলা ফ্রান্সের প্রথম একাদশের চার অপরিহার্য ফুটবলার সহ স্কোয়াডের পাঁচজন খেলেন ইংলিশ লিগে।

মাত্র কয়েক ঘন্টা পর ইউরোপের যে দুই দল সেমির যুদ্ধে মুখোমুখি হবে- সেই ইংল্যান্ড আর ক্রোয়েশিয়ার ২৩+২৩= ৪৬ জনের মধ্যে ২৪ জনই হলেন ইংলিশ ক্লাব ফুটবলের নিয়মিত মুখ।

তার মানে ফাইনালে ফরাসিদের প্রতিপক্ষ যদি হয় ইংলিশরা, তবে ইংলিশ লিগ খেলা ফুটবলারদের হবে জয় জয়কার। ইংল্যান্ড বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলেতো কথাই নেই। ফ্রান্স জিতলেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলে ইংলিশ লিগের ফুটবলারের প্রতিনিধিত্ব থাকবে পাঁচ জন।

আর যদি দ্বিতীয় সেমির লড়াইয়ে ক্রোয়েশিয়া জয়ী হয়, ১৫ জুলাই ফাইনালে ফরাসিদের হারিয়ে ক্রোয়েটরা যদি হয় বিশ্ব সেরা, তাহলেও গার্ডিয়ান আর মিররের প্রথম পাতার শিরোনাম করার খোরাক থাকবে। ক্রোয়েশিয়া দলের ফুটবলার ডেজান লোভরেন খেলেন ঐতিহ্যবাহী ইংলিশ ক্লাব লিভারপুলের লাল জার্সি গায়ে।

তার মানে আজ সেমিফাইনালে বৈতরণি পার হয়ে ১৫ জুলাই ফাইনালে ফরাসিদের হারিয়ে ক্রোয়েশিয়া বিশ্বকাপ জিতলেই মিরর আর গার্ডিয়ান হেডিং করতে পারবে লিভারপুল, ম্যানচেস্টার সিটি , ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবা আর্সেনালের বিশ্ব জয়।

এআরবি/আইএইচএস/পিআর

আরও পড়ুন