সেই লুকাকুর দিকে তাকিয়ে বেলজিয়াম
বেলজিয়ামের ছোট্ট শহর এনটর্পের রাস্তায় পরিত্যক্ত লোহার ফটককে গোলপোস্ট বানিয়ে ফুটবল খেলছেন কয়েকজন কিশোর। সেই পোস্টের উপর বসে তা দেখছেন আরেক কিশোর। চোখেমুখে তার খেলার আকুতি। খেলতে সুযোগ না পেয়ে ফুটবলের দিকে তাকিয়ে থাকা সেই কিশোরটি আজকের যুবক লুকাকু। পুরো নাম রোমেলু লুকাকু। তার দিকে তাকিয়ে এখন পুরো বেলজিয়াম।
লুকাকু নামটি এখন ফুটবলপ্রেমী মানুষের মুখেমুখে। রাশিয়া বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুটের অন্যতম দাবিদার বেলজিয়ামের এ স্টাইকার। কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলকে কাঁদিয়ে বেলজিয়াম যে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে তার অন্যতম নায়ক এই লুকাকু।
৮ বছর আগে জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেক হওয়ার পর ৭৩ ম্যাচে ৪০ গোল করেছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এ স্টাইকার। এই বিশ্বকাপে ৪ গোল করে ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছেন ইংলিশ ফরোয়ার্ড হ্যারি কেনের। বিশ্বকাপে আরো দুটি করে ম্যাচ খেলবে সেমিফাইনালে ওঠা চার দল। গোল্ডেন বলের লড়াইটা তাই জমেও উঠতে পারে।
জীবনে একজন মানুষ ইচ্ছে শক্তি, চেষ্টা আর পরিশ্রম দিয়ে নিজেকে কতটা উপরে নিতে পারেন লুকাকু তার বিজ্ঞাপন। কারণ, ফুটবল মাঠে ঝড় তোলা এই লুকাকুর জীবনের শুরুতেই ছিল দারিদ্র্যের ঝড়। অভাব-অনটনের সংসারে বেড়ে ওঠা লুকাকু এখন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সবচেয়ে দামি ফুটবলার।
রোমেলু লুকাকুর বাবার নাম রজার লুকাকু, মা অ্যাডলফিন। কঙ্গোর এ দম্পতি বাসা বেধেছিলেন বেলজিয়ামে। রজার লুকাকুর পূর্ব পরুষ ছিলেন আফ্রিকার আরেক দেশ জায়ারের। তিনি জায়ার জাতীয় দলেও খেলেছেন। পরে পেশাদার ফুটবল খেলতেই বেলজিয়ামে এসে সেখানেই ঘর সংসার পাতেন। এই দম্পতির ঘরেই বেলজিয়ামের এনটর্প শহরে লুকাকুর জন্ম ১৯৯৩ সালে।
ভাগ্য বদলাতে রজার লুকাকু বঙ্গ ছেড়ে বেলজিয়ামকে বেছে নিলেও ভাগ্য সহজে বদলায়নি। তাইতো রোমেলু লুকাকুর শিশুকাল ও কৈশর অভাব-অনটনেরই কেটেছে। একবেলা খেয়ে, আরেকবেল না খেয়ে দিন অতিক্রম করেছেন। সেই লুকাকুর সামনে এখন গড়াগড়ি খায় ডলার-পাউন্ড।
লুকাকুর এখনকার ফুটবলময় জীবন রূপকথার মতোই। তার জীবন কাহিনী ঘেটে জানা গেছে, তার মা তাকে নিয়মিত দুধ কিনে দিতে না পারায় দুধের সঙ্গে পানি মিশিয়েও খাওয়াতেন। বেলজিয়াম ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই স্টাইকারের জীবনের গল্পটা তো সিনেমাকে হার মানায়।
বাবা রজার লুকাকুর আয়ে সংসার চলতো না বিধায় লুকাকুর মাকে বেছে নিতে হয়েছিল পরিচ্ছন্নকর্মীর কাজ। লুকাকুর ছোট এক ভাইও আছেন। যার নাম জর্ডান লুকাকু। খেলছেন ইতালির ক্লাব ল্যাজিওতে।
লুকাকু বেলজিয়ামের রুপেল বুম এফসির হয়ে ক্লাব ক্যারিয়ার শুরু করে ১৯৯৯ সালে। সিনিয়র ক্যারিয়ার শুরু করেন ২০০৯ সালে বেলজিয়ামেরই ক্লাব রয়েল স্পোর্টিং ক্লাব অ্যানডারলেস্টের হয়ে। তারপর চেলসির জার্সি গায়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে অভিষেক ২০১১ সালে। এভারটনের হয়ে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখানো লুকাকুকে ২০১৭ সালে দলে নেয় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
ক্লাবের জার্সি গায়ে মাঠ দাপানো লুকাকু দেশের হয়েও দুর্দান্ত খেলছেন। এই বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে প্রথম দুই ম্যাচেই করেছেন দুটি করে গোল। মঙ্গলবার সেন্ট পিটার্সবার্গে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে বেলজিয়াম মুখোমুখি হবে ফ্রান্সের। বেলজিয়াম প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালমঞ্চে খেলতে পারবে কি-না তা অনেকটাই নির্ভর করে দীর্ঘদেহী এ স্ট্রাইকারের ওপর।
আরআই/এসএএস/এমএস