আর্জেন্টিনাকে বিধ্বস্ত করে কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্স
বিমর্ষ মেসি। ডাগ আউটে তখনও পায়চারী করছেন কোচ হোর্হে সাম্পাওলি। স্কোর লাইন ফ্রান্স ৪-৩ আর্জেন্টিনা। ৩২ বছরের বিশ্বকাপ খরাকে ৩৬শে নিয়ে গেল আর্জেন্টিনা। পারলো না আর্জেন্টিনা, পারলেন না মেসি। জাতীয় দলের হয়ে আরো একবার বড় টুর্নামেন্ট থেকে শূন্য হাতে ফিরতে হলো মেসিকে।
বিশ্বকাপের শুরু থেকেই এবারের ফ্রান্স দলকে ধরা হচ্ছিল বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম দাবিদার। দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে এসেই ফ্রান্স প্রমাণ করলো কেন তারা শিরোপার অন্যতম দাবিদার। মেসির আর্জেন্টিনাকে গুনে গুনে ৪ গোল দিয়েছে ফ্রান্সের তরুণ প্রতিভাবান ফুটবলাররা। এমবাপ্পে একাই করেছেন জোড়া গোল। পুরো ম্যাচেই নিষ্প্রভ ছিলেন লিওনেল মেসি।
বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রথম ম্যাচেই মুখোমুখি হয় ইউরোপের শক্তিশালী দল ফ্রান্স ও লাতিন আমেরিকার পরাশক্তি আর্জেন্টিনা। গ্রুপ পর্বে দুর্দান্ত পারফর্ম করে আসা ফ্রান্সের সামনে ভঙ্গুর আর্জেন্টিনা দল নিজেদের কতটা মেলে ধরতে পারবে সেটা নিয়ে আশঙ্কা ছিল সবার। ম্যাচের প্রথমার্ধেও সেটির প্রতিফলন দেখা গেলো। গ্রিজম্যানের করা পেনাল্টি গোলে এগিয়ে গেলেও ৪১ মিনিটে ডি মারিয়ার গোলে সমতায় ফেরে আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধ ১-১ সমতায় থেকেই বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা।
ম্যাচের ৯ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে ফ্রি কিক পায় ফ্রান্স। আন্তনিও গ্রিজম্যানের দুর্দান্ত ফ্রি-কিক আর্জেন্টিনার গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে পারলেও গোলবার বাধা হয়ে দাঁড়ায় তার সামনে। ১১ মিনিটে আর ফ্রান্সকে আটকে রাখতে পারেনি আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডাররা। মাঝমাঠ থেকে একাই বল টেনে নিয়ে আর্জেন্টাইন ডিবক্সের ভেতর যেতে থাকেন কেইলান এমবাপ্পে। ডি বক্সের ভেতর তাকে অবৈধভাবে ফেলে দেন মার্কস রোহো। রেফারি সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন।
স্পট কিক থেকে ফ্রান্সের হয়ে ম্যাচে প্রথম গোলটি করেন গ্রিজম্যান। বিশ্বকাপে পেনাল্টি থেকে এটি তার দ্বিতীয় গোল। ১৯ মিনিটে আবারো এমবাপ্পেকে ফাউল করেন আর্জেন্টাইন তালিয়াফিকো। পগবার নেওয়া ফ্রি-কিক গোলবারের অনেক উপর দিয়ে চলে যায়।
ফ্রান্সের ফুটবলারদের গতি এবং আক্রমণাত্মক মনোভাবে একদমই দুর্বল মনে হচ্ছিল আর্জেন্টিনার বুড়ো একাদশকে। পুরো আর্জেন্টিনাকে একাই নাচাতে থাকেন এমবাপে। তাকে মার্ক করতে গিয়ে বারবার অন্যান্য ফ্রেঞ্চ ফুটবলারদের ফ্রি রোলে খেলতে দেন আর্জেন্টাইনরা।
প্রথমার্ধ যখন এগিয়ে থেকে বিরতিতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ফ্রান্স ঠিক তখন ৪১ মিনিট ৩৫ গজ দূর থেকে বা পায়ের চোখ ধাঁধানো শটে দুর্দান্ত গোলে আর্জেন্টিনাকে সমতায় ফেরান এঞ্জেল ডি মারিয়া। এরপরেই যেন প্রাণ ফিরে পায় পুরো আর্জেন্টিনা। কিন্তু রেফারি একটু পরেই শেষ বাঁশি বাজালে ১-১ সমতায় থেকেই বিরতিতে যায় তারা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই রোহোর পরিবর্তে মাঠে নামেন ফ্যাজিও। ৪৮ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে ডি মারিয়াকে ফাউল করলে রেফারি ফ্রি কিকের সিদ্ধান্ত দেন। সেখান থেকে বানেগার শট প্রতিহত হলে মেসির কাছে বল আসে। মেসি নেওয়া বা-পায়ের শট মার্কাদোর পায়ে লেগে লরিসকে বোকা বানিয়ে জালে জড়ায়। উল্লাসে মেতে ওঠে আর্জেন্টিনা। কিন্তু এটা মাত্র কিছুক্ষণই স্থায়ী ছিল।
৫৭ মিনিটে ডই বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত ভলিতে ফ্রান্সকে সমতায় ফেরান পাভার্ড। গোল দিয়ে আরো উজ্জীবিত ফ্রান্স। ৬৪ মিনিটে আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগকে বোকা বানিয়ে ডি বক্সের ভেতর একজনকে পরাস্ত করে দুর্দান্ত গোল করেন ম্যাচের অন্যতম সেরা পারফর্মার কেইলান এমবাপ্পে।
পিছিয়ে পড়ে যেন খেই হারিয়ে ফেলে আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগ। ভঙ্গুর ডিফেন্সের সুযোগ নিয়েই জিরুর পাস থেকে আবারো গোল করে বসেন এমবাপ্পে। ১৯ বছর বয়সী এই ফুটবলারের কাছেই মূলত হেরে বসে আর্জেন্টিনা। জোড়া গোল করে ম্যাচের নায়ক বনে যান এই পিএসজি তারকা।
ম্যাচের ৮৭ মিনিটে গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন মেসি। কিন্তু ডি বক্সের ভেতর ডান পায়ের দুর্বল শট লরিসের তালুবন্দী হয়। অতিরিক্ত সময়ের দুই মিনিটের মাথায় মেসির বাড়ানো বল থেকে হেড থেকে আর্জেন্টিনার হয়ে তৃতীয় এবং সান্তনাসূচক গোলটি করেন আগুয়েরো। ৪-৩ গোলের হার নিয়ে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হলো আর্জেন্টিনাকে। আরো একবার বিশ্বকাপের নকআউট রাউন্ডে মেসির নিষ্প্রভতা আর্জেন্টিনাকে এনে দিতে পারলো না কাঙ্ক্ষিত জয়। শূন্য হাতেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলেন মেসি।
আরআর/এমএস