মেক্সিকোকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন সুইডেন
‘এফ’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে সবচেয়ে জটিল সমীকরণের সামনে ছিল সুইডেন। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে গ্রুপের শীর্ষে থাকা মেক্সিকোর বিপক্ষে পেতে হতো অন্তত ২ গোলের জয়, তাকিয়ে থাকতে হতো জার্মানি-দক্ষিণ কোরিয়া ম্যাচের ফলাফলের দিকেও।
এতসব সমীকরণের ধার ধারেনি সুইডিশরা। মেক্সিকোকে সরাসরি ৩-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপের শীর্ষ দল হিসেবেই দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করেছে সুইডেন। তবে ম্যাচ হেরে গিয়েও কোন ক্ষতি হয়নি মেক্সিকোর। কারণ গ্রুপের অন্য ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ২-০ গোলে জার্মানিকে হারিয়ে দেয়ায়, গ্রুপের দ্বিতীয় দল হিসেবে দ্বিতীয় পর্ব নিশ্চিত হয়েছে মেক্সিকোর।
একাতেরিনবার্গ স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুর মিনিটেই বিশ্বরেকর্ডে নাম লেখান মেক্সিকান খেলোয়াড় হেসুস গ্যালার্ডো। মাত্র ১৩ সেকেন্ডের মাথায় হলুদ কার্ড দেখেন তিনি। বিশ্বকাপের ইতিহাসের এর চেয়ে দ্রুত হলুদ কার্ড দেখার রেকর্ড নেই আর কোনো।
সেই ফাউল থেকে পাওয়া ফ্রি-কিকে সুইডেনকে প্রায় এগিয়েই দিয়েছিলেন আন্দ্রেস গ্রাঙ্কভিস্ট। হেক্টর মোরেনোর দুর্দান্ত রক্ষণে সে যাত্রায় রক্ষে পায় মেক্সিকো। পুরো প্রথমার্ধ জুড়েই ছিল দুই দলের খেলোয়াড়দের এমন গোলের সুযোগ মিসের ছড়াছড়ি।
চতুর্থ মিনিটে মেক্সিকান গোলরক্ষক গুইলের্মো ওচোয়া ডি-বক্সের বাইরে হ্যান্ডবল করেও অল্পের জন্য বেচে যান গোল হজম করা থেকে। আরও একবার কপাল পুড়ে সুইডিশদের। পাল্টা আক্রমণ করতে ছাড়েনি মেক্সিকানরাও। মার্কাস বার্গের দুর্দান্ত এক ফ্রিকিক ঠেকিয়ে দেন সুইডেনের গোলরক্ষক রবিন ওলসেন।
এরপর দৃশ্যপটে হাজির হন কার্লোস ভেলা। হার্ভিং লোজানোর অসাধারণ এক পাস থেকে গোলরক্ষককে একা পেয়ে যান এলা। কিন্তু গোলের এই সহজতম সুযোগটিও হাতছাড়া করে বসেন ভেলা। যার ফলে স্কোর লাইন থেকে যায় গোল শূন্যই।
ম্যাচের ২৬তম মিনিটে লোজানোকে পেছন থেকে বাজে ফাউল করায় সুইডিশদের পক্ষে প্রথম হলুদ কার্ড দেখেন সেবাস্তিয়ান লারসন। ৩০তম মিনিটে ডি-বক্সের মধ্যেই হ্যান্ডবল করে বসেন হাভিয়ের হার্নান্দেজ। তবে অনিচ্ছাকৃত হওয়ায় সেটিকে পেনাল্টির ঘোষণা দেননি রেফারি।
কর্ণার থেকে দুর্দান্ত এক আক্রমণ সাজায় সুইডেন। সেই আক্রমণের চেয়েও বেশি ক্ষিপ্র গোলকিপিংয়ে দৃষ্টান্ত দেখান ওচোয়া। গোলবারের খুব কাছ থেকে মার্কাস বার্গের শট ফিরিয়ে দেন তিনি। এর খানিকবাদে আবারো গোল মিস করেন ভেলা। ডি-বক্সের মধ্যে খালি জায়গায় বল পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন তিনি। ফলে গোলশূন্য ড্র নিয়েই মাঠ ছাড়তে বাধ্য হয় দুই দল।
বিরতি থেকে ফিরেই গোলের তালা ভাঙে সুইডেন। ৫০তম মিনিটে ভিক্টর ক্লায়েসনের পাস থেকে দলকে এগিয়ে দেন লুডউইগ অগাস্টিনসন। গোলবারের মাত্র ১০ গজ দূর থেকে করা শটটি হাতে লাগিয়েও ঠেকাতে পারেননি মেক্সিকান গোলরক্ষক ওচোয়া।
এক গোলে পিছিয়ে পড়ে ছন্নছাড়া হয়ে মেক্সিকানরা। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে সুইডিশরা। এরই মাঝে ডিবক্সের মধ্যে মার্কাস বার্গকে ফেলে দেন হেক্টর মোরেনো। হলুদ কার্ডের পাশাপাশি সুইডেনের পক্ষে পেনাল্টি বাঁশি বাজান রেফারি।
গোলের সহজতম সুযোগ পেয়ে ম্যাচের ৬২তম মিনিটে দলকে ২-০ গোলে এগিয়ে দেন আন্দ্রেস গ্রাঙ্কভিস্ট। দ্বিতীয় পর্বে যাওয়ার পথ তখন পরিষ্কার হয়ে যায় সুইডিশদের জন্য। ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে পড়ে মেক্সিকো। কিন্তু কাজের কাজ আর হয়নি।
উল্টো ম্যাচের ৭৪তম মিনিটে নিজেদের জালেই বল ঢুকিয়ে দেন এডসন আলভারেজ। সুইডিশ খেলোয়াড়ের করা শট ফেরাতে গিয়ে আত্মঘাতী গোল করে বসেন আলভারেজ। ৩-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে মূলত ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় মেক্সিকো।
বাকিসময়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলতে ছিল কেবল মেক্সিকান খেলোয়াড় মিগুয়েল লাইয়ুন এবং সুইডিশ খেলোয়াড় মিকায়েল লাসটিগের হলুদ প্রাপ্তির ঘটনা। ৩-০ গোলে ম্যাচ হেরেও, অন্য ম্যাচে জার্মানির পরাজয়ে গ্রুপের দ্বিতীয় দল হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে চলে গেল মেক্সিকো।
এসএএস/এমএস