আমরা গত বছরও আর্জেন্টিনাকে হারিয়েছি : নাইজেরিয়া কোচ
এবারের বিশ্বকাপে শুরুটা একদম মনমতো হয়নি নাইজেরিয়ার। ক্রোয়েশিয়ার কাছে তারা হেরেছে। তবে পরের ম্যাচেই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে সুপার ঈগলরা। আইসল্যান্ডের সঙ্গে দুর্দান্ত খেলেই জিতেছে। এবার সামনে গ্রুপের সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনা, যাদের বিপক্ষে বিশ্বকাপে কখনই জেতেনি নাইজেরিয়া। তবে কি আরেকবার সহজেই জিতে যাবে লিওনেল মেসির দল? নাইজেরিয়া কোচ মনে করিয়ে দিলেন, বেশিদিন হয়নি, গত বছরের নভেম্বরেই প্রীতি ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে ৪-২ গোলে হারিয়েছেন তারা।
শুধু গ্রুপর্ব নয়, গ্রুপপর্বের দেয়াল ডিঙিয়ে পরের ধাপ নিয়েও ভাবা শুরু করে দিয়েছে নাইজেরিয়া। দলের কোচ গার্নট রোর তো নিজেদের নিয়ে ভীষণ আশাবাদী। তারই একটি সাক্ষাতকার জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য...
প্রশ্ন : বিশ্বকাপের শুরুতেই ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে যাবার পরে নাইজেরিয়া এক কথায় অসাধারণ খেলেছে আইসল্যান্ডের সাথে। এই পরিবর্তন কিভাবে ঘটেছে বলে মনে করেন?
রোর : আসলে যখন আপনি প্রথম ম্যাচটি হেরে যাবেন, তখন যে কোনো কিছুই কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু আমরা আশা বা উৎসাহ কোনোটাই হারাইনি। এটি অস্বীকারের কিছু নেই যে আমরা দুইটি গোল হজম করেছি। তবে আমরা খারাপ খেলিনি। পরবর্তীতে দল তার আসল রূপে ফিরে এসেছে।
প্রশ্ন : মানে কি বোঝাতে চাচ্ছেন?
রোর : প্রত্যাশার অনেক চাপ থাকা সত্ত্বেও কিন্তু এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যখন আপনি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করবেন এবং কোনো ম্যাচ জিতবেন। আসলে কোনো ম্যাচ জয়ের পর দৃঢ়তা দেখানো খুবই সহজ কিন্তু কোনো ম্যাচ হেরে যাবার পর দলের আসল রূপ ফুটে উঠে। আমাদের প্রথম ও দ্বিতীয় খেলা তুলনা করলে দেখা যাবে অবশ্যই আমরা কিছু শিখেছি। আশা করছি তৃতীয় ম্যাচেও আমরা ভালো খেলবো।
প্রশ্ন : দলের ফরমেশন ৩-৫-২ এর পরিবর্তনই কি আইসল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ে অবদান রেখেছে বলে মনে করেন?
রোর : আইসল্যান্ড কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার সাথে ভিন্ন স্টাইলে খেলেছে এবং এটা আমরা খুব জলদি রপ্ত করতে পেরেছিলাম। আমরা ভিক্টর মোসেসকে গভীরে খেলাতে চাচ্ছিলাম। জন অবি মিকেলের ডিফেন্সিভ রোলে অনেক অবদান আছে, যেটা দলের জন্য যে কোনো সময় ভালো ফলাফল আনতে সক্ষম। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি দলকে পরিকল্পনামত গঠন করতে। এই নেতৃত্ব আমাদের দলের তরুণ দুই খেলোয়াড় আগাহনকারো ইতোবো এবং উইলফেন্ড এনদিদির জন্য সহায়ক হবে।
প্রশ্ন : ইতোবো এবং এনদিদি আপনার দলের দুজন তরুণ ফুটবলারদের মধ্যে অন্যতম, যাদের বয়স পুরো টুর্নামেন্টের সবার থেকে কম। এটি কিভাবে আপনার কাজকে প্রভাবিত করছে?
রোর : আপনার দলে যখন তরুণ খেলোয়াড়রা থাকবে তখন অবশ্যই আপনাকে ধৈর্য্যশীল হতে হবে। এটা মেনে নিতেই হবে যে, ভুল হবেই। কারণ সেগুলো খেলার অবিচ্ছেদ্য অংশ। তারা প্রত্যেকেই যত দ্রুত সম্ভব অনেক শিখতে চায়। আর এক্ষেত্রে বিশ্বকাপ একটি ভালো জায়গা, যেটি তাদেরকে অভিজ্ঞতা অর্জনে এবং নিজেদেরকে বিকশিত করতে সহায়তা করবে। এমনকি আমাদের প্রথম ও দ্বিতীয় খেলার মধ্যবর্তী সময়েও আমি তাদের মধ্যে শেখার চেষ্টা লক্ষ্য করেছি এবং দলটি তাদের পরবর্তী খেলায় অবশ্যই আরও ভালো করবে।
প্রশ্ন : আর্জেন্টিনার সাথে খেলা পড়ায় শেষ ষোলোতে জায়গা করে নেয়া কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। উল্লেখ্য যে, বিশ্বকাপে নাইজেরিয়া কখনোই লা আলবিসেলিস্তাতের হারাতে পারেনি। তাহলে এবার কোন কারণটি আপনাদেরকে আশাবাদী করছে?
রোর : যথামুহূর্তে ধাবিত বিষয়গুলোর অবসান ঘটতেই হয়। আমরা আত্মবিশ্বাসী, কারণ আমরা গেল বছরে প্রীতি ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে হারিয়েছি। আমরা প্রথমার্ধে ২-০তে পিছিয়ে ছিলাম কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৪-২ ব্যবধানে জিতেছি। লিওনেল মেসি সেই ম্যাচে খেলেননি। কিন্তু তারপরও আমরা ৪টি অসাধারণ গোল করেছিলাম। আর এই জিনিসটাই ছেলেদেরকে আশা যুগিয়েছে। আমরা বারবার হেরেও জয়ের জন্য পিপাসু। কিন্তু হ্যাঁ, অবশ্যই আর্জেন্টিনা ফেবারিট।
প্রশ্ন : যদিও আর্জেন্টিনা এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে তাদের সেরাটা দেখাতে সক্ষম হয়নি...
রোর : আপনাকে অবশ্যই আর্জেন্টিনার তথাকথিত দুর্বলতাকে পরিপ্রেক্ষিত হিসেবে ধরে নিতে হবে। প্রথম খেলায় তাদের ভাগ্য খারাপ ছিল বিধায় পেনাল্টি মিস করেছিল, না হলে ফলাফল অন্যরকম হতো। তাদের কাছে বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় রয়েছে এবং গোটা দলেরই রয়েছে অবিশ্বাস্য দক্ষতা। কিন্তু এটি সত্যি যে, সবকিছুর জন্যই আপনি নিজেকে প্রস্তুত করতে পারবেন না। আর এটা খেলারই একটা অংশ।
প্রশ্ন : আপনার দল এটিকে কীভাবে সামলাচ্ছে?
রোর : বাধাবন্ধনহীন তারুণ্য, উদ্যমতা এবং ইচ্ছাশক্তির দ্বারা। আমাদের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই চায় সেই উচ্চতায় যেতে যেখানে আর্জেন্টাইনরা ইতোমধ্যেই আছেন। পুরো বিশ্ব এই খেলাকে উপভোগ করছে আর তাই আমরা কি করতে পারি, সেটা তাদেরকে দেখিয়ে দেবার এটাই একটি বড় সুযোগ।
প্রশ্ন :খেলার সময় স্নায়বিক উত্তেজনা কতখানি প্রভাব ফেলে?
রোর : আমি আশা করছি যে, খেলোয়াড়েরা খুব বেশি বিচলিত হবে না। আমরা তীব্র সংকল্প ও মনোযোগের সঙ্গে ওই সবকিছুই করবো, যাতে করে আমরা আমাদের অদম্য সাহসিকতাটুকু হারিয়ে না ফেলি।
প্রশ্ন :পরের রাউন্ডে যেতে পারলে সেটা নাইজেরিয়ার জন্য কতটুকু অর্থবহ হবে?
রোর : অবশ্যই এটি আমাদের তরুণ দলের জন্য চমকপ্রদ একটি বিষয় হবে, যদি আমরা নকআউট পর্বে যেতে পারি। আমরা অনেক নিচ থেকে দলকে টেনে এনে এই গ্রুপে এসেছি, কাজেই আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিলো- আমরা যেখানেই শেষ করি, শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাবো। আমাদের জন্য ভালো হবে যদি আমরা রানার্সআপ হয়ে শেষ করতে পারি। তাহলে শেষ ষোলোতে ফ্রান্সের বিপক্ষে খেলতে পারার স্বপ্নটা পূরণ হবে।
আরআর/এমএমআর/জেআইএম