আফ্রিকানদের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছে সেনেগাল
আফ্রিকানরা আমুদে এক জাতি। তারা জীবনের প্রতিটা সময়ই উপভোগ করতে চায়। ফুটবল বিশ্বকাপও তাদের এ আমুদে স্বভাব থেকে মুক্ত নয়। প্রতিটি বিশ্বকাপেই দেখা যায় কোন গোল দেয়ার পর আফ্রিকানদের অদ্ভুত সব উদযাপন। সে দিক থেকে এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপটি একটু ব্যতিক্রমই।
রাশিয়াতে আফ্রিকা মহাদেশ থেকে অংশ নেয়া ছয়টি দলের পাঁচটিই রয়েছে খাঁদের কিনারায়। এর মাঝে ইতোমধ্যেই বিদায়ঘণ্টা বেজে গেছে মরক্কো ও মিসরের। মরক্কো তাদের প্রথম দুই ম্যাচে ইরান ও পর্তুগালের কাছে হেরে দেশে ফেরার দিন গুণছে। অন্যদিকে প্রতিশ্রুতিশীল মিসরও প্রথম ম্যাচে উরুগুয়ে এবং পরের ম্যাচে স্বাগতিক রাশিয়ার কাছে হেরে বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে ফেলেছে।
বাকি দলগুলোর অবস্থাও সুবিধার নয়। ‘সুপার ঈগল’ খ্যাত নাইজেরিয়া তাদের প্রথম ম্যাচেই হেরে গিয়েছে ক্রোয়েশিয়ার কাছে। আবার সামনে তাদের হট ফেভারিট আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচ বাকিই রয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে নাইজেরিয়ায় বিদায়ও মোটামুটি নিশ্চিতই বলে দেয়া যায়। এদিকে তিউনিসিয়াও নিজেদের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছে শেষ মূহুর্তের গোলে। বেলজিয়াম আর ইংল্যান্ডকে টপকে পরের রাউন্ডে যেতে হলে যে তাদের শতভাগেরও বেশি দিতে হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
অন্যদিকে এক সময়ের আফ্রিকান পরাশক্তি ক্যামেরুন আর ঘানা তো বিশ্বকাপে সুযোগই পায়নি। বিশ্বকাপে আফ্রিকানদের সর্বোচ্চ সাফল্যও এ ক্যামেরুন আর ঘানাই এনে দিয়েছিলো। ১৯৯০ বিশ্বকাপের প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে ক্যামেরুন পৌঁছে গিয়েছিলো কোয়ার্টার ফাইনালে। সেবার গ্রুপ পর্বে ডিয়াগো ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনাকেও হারিয়েছিলো তারা। আর প্রতিবারই দর্শকদের বিনোদনের খোরাক ঘানাও বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে গিয়েছিলো ২০১০ বিশ্বকাপে।
এবার কি তবে আফ্রিকানদের উন্মত্ততা দেখতেম পারবে না বিশ্বকাপ? এ জায়গাতেই ব্যতিক্রম সেনেগাল। অন্য আফ্রিকান দলগুলো যেখানে খাবি খাচ্ছে সেখানে রাশিয়ায় আফ্রিকার পতাকা হাতে একা বুক চিতিয়ে লড়ে যাচ্ছে সেনেগাল। ১৬ বছর পর বিশ্বকাপে ফিরেই উড়ন্ত সূচনা করেছে সেনেগালিজরা। প্রথম ম্যাচেই পোল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়েছে ২-১ গোলে। পরবর্তী পর্বে যাওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল হয়ে গেলো এতে।
তবে সেনেগালের জন্য এটা নতুন কিছু নয়। সেই ১৬ বছর আগে প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে এসেই তাক লাগিয়ে দিয়েছিলো তেরাঙ্গার সিংহরা। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই তখনকার ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে হারিয়ে দিয়েছিলো সেনেগাল। শেষ অব্দি গিয়েছিলো কোয়ার্টার ফাইনালে। তাদের সে তাক লাগানো খেলার মুগ্ধতা এখনো ফুটবলপ্রেমীদের চোখে লেগে আছে। যেন কোরিয়া-জাপানে যেখানে শেষ করেছিলো সেনেগাল রাশিয়ায় এসে সেখান থেকেই শুরু করলো তারা। তাদের প্রথম ম্যাচেই গোলের পর দেখা গিয়েছে টিপিকাল আফ্রিকান উৎযাপন।
আফ্রিকার অন্য দলগুলো যেখানে হতাশ করেছে সেখানে সেনেগাল স্বমহিমায় উজ্জ্বল। আফ্রিকানদের আমুদে উৎযাপনগুলো দেখার জন্যে হলেও সেনেগালের বিশ্বকাপ যাত্রার দীর্ঘায়ুই কামনা করবে ফুটবল প্রেমীরা।
ডিকেটি/এসএএস/এমএস