ওজিল-গুন্দোগান বিতর্ক পাশ কাটাতে পারবে জার্মানি?
গায়ে গতবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের তকমা। তার ওপর বর্তমান কনফেডারেশন্স কাপ চ্যাম্পিয়ন। দলে প্রতিভার ছড়াছড়ি। ফুটবল পণ্ডিতদের মতে, জার্মানদের দলের স্কোয়াড ডেপথ এতটাই বিস্মৃত যে, তাদের খেলোয়াড়দের দিয়ে অন্তত ৪টি বিশ্বমানের দল বানানো যাবে। এত কিছুর পরেও জার্মান দলে নেই স্বস্তির বাতাস। কোথায় দাপটের সঙ্গে ফুরফুরে মেজাজে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে নামার কথা ছিল জার্মানদের, সেখানে আজ তারা বিতর্ক এবং সমালোচনায় জর্জরিত এক দল।
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দুর্দান্ত জার্মানিকে কেবল পোল্যান্ড ছাড়া হারাতে পারেনি আর কোন দলই। গ্রুপ সেরা হয়ে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়ার পর বিশ্বকাপের আগে শেষ পাঁচটি ম্যাচের মাত্র একটিতে জয়। কিন্তু জার্মানিকে এসব দিয়ে বিবেচনা করা যায় না। বিশ্বকাপ আসলেই যেন তাদের আতঙ্কে ভয়ে থাকে বিপক্ষ দলের ফুটবলাররা।
শেষ চারটি বিশ্বকাপেরই সেমি ফাইনাল খেলা দলটির সামনে ইতিহাস গড়ার হাতছানি। ব্রাজিল ও ইতালির পর কোন দেশই পারেনি টানা দুবার বিশ্বকাপ জিততে। দলের তরুণ তুর্কিদের নিয়ে সেই ইতিহাসে ভাগ বসানোর সুবর্ণ সুযোগ জোয়াকিম লোর শিষ্যদের সামনে। কিন্তু শুরুতেই যেন বেশ ঝামেলার মধ্যে জড়িয়ে গেছে জার্মান দল।
বিতর্কের শুরু মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগানের সঙ্গে দেখা করেন জার্মান ফুটবলার গুন্দোগান ও মেসুত ওজিল। তুর্কি বংশোদ্ভুত এই দুই ফুটবলার তাকে ক্লাবের দুটি জার্সি উপহার দেন। বিশ্বকাপের ঠিক আগে এরদোগানের সঙ্গে দেখা করাটাকে ভালো চোখে নেয়নি জার্মানরা। বিশ্বকাপের আগেই তাদেরকে দল থেকে বাদ দেওয়ার চাপ আসে বিভিন্ন মহল থেকে। কিন্তু কোচ লো তাদেরকে ঠিকই রাখেন জার্মান দলে।
জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা ম্যার্কেলের পাশাপাশি জার্মান প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও তারা দেখা করে ব্যাপারগুলো বুঝিয়ে বলেন। জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি এক বিবৃতিতে প্রকাশ করে ওজিল ও গুন্দোগানের পাশে দাঁড়ায়। তারা বলে, ‘তারা কোন রাজনৈতিক বার্তা প্রদান করতে সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। তারা মাঠে ও মাঠের বাইরে আমাদের (জার্মান) মর্যাদার জন্য লড়ে বেড়ায়।’
রাশিয়ায় আসার আগে জার্মান দলের অনুশীলন দেখতে গিয়েছিলেন চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা ম্যার্কেল। সেখানে বসেই ওজিল ও গুন্দোগানের সঙ্গে এই ব্যাপারে কথা বলে তাদের পাশে থাকার ঘোষণাও দেন তিনি। সৌদি আরবের বিপক্ষে ম্যাচে মাঠে নেমে সমর্থকদের দুয়োধ্বনি শুনতে হয়েছিল গুন্দোগানকে। এর ঠিক পরেই জার্মান কোচ বলেন, ‘খেলোয়াড়েরা আরো ভালো কিছু প্রত্যাশা করে সমর্থকদের কাছ থেকে।’
জার্মান কোচের এই বুলি হয়তো ঢোপে টিকবে না জার্মান সমর্থকদের কাছে। কেননা, পৃথিবীর অন্যান্য সমর্থকদের থেকে একটু বেশিই কঠিন তারা। সাবেক জার্মান খেলোয়াড় এফিনবার্গের মতে দল থেকেই তাদের বাদ দেওয়ার কথা বললেন। তার ব্যক্তিগত মতো অনুযায়ী জার্মান ফুটবল ফেডারেশন অনেক দয়ালু ছিল বিধায় বিশ্বকাপ থেকে তাদের এখনও বাদ দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘আপনি যদি এমন কিছু করেন অবশ্যই আপনাকে বাহিরে ছুঁড়ে ফেলা উচিৎ। ডিএফবি সত্যিই খুব বেমানান কাজ করেছে আর এক্ষেত্রে মোটেও দ্রুত কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি তারা।’
মেক্সিকোর বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নামার আগে মাঠ তথা মাঠের বাইরের খেলাকেও সামলাতে হচ্ছে জোয়াকিম লোকে। ইতোমধ্যে, জানিয়েও দিয়েছেন প্রথম ম্যাচে খেলছেন না মেসুত ওজিল। খুব বেশি সমস্যা না হলেও গুন্দোগানকেও হয়তো খেলতে দেখা যাবে না। বিশ্বকাপে এর আগে কখনোই নিজেদের প্রথম ম্যাচে হারের মুখ দেখেনি মেক্সিকো। সেই দলটির বিপক্ষে বিতর্ককে পেছনে সামর্থ্য অনুযায়ী কতটুকু খেলতে পারবে জার্মানি সেটাই দেখার বিষয়। কেননা, এই ম্যাচেও গুন্দোগান ও ওজিলদের পেছনে থাকবে দুয়োধ্বনি। তবে দলটি জার্মানি বলেই সবকিছুই সম্ভব, এমনটাই মনে করছেন সমর্থকরা।
আরআর/এমএস