রাশিয়া বিশ্বকাপের অজানা পাঁচ!
রাতে পর্দা উঠছে ফুটবল বিশ্বকাপের ২১তম আসরের। উদ্বোধনী ম্যাচে মাঠে সামবে স্বাগতিক রাশিয়া এবং সৌদি আরব। রাশিয়ায় হতে যাওয়া এই বিশ্বকাপের সকল খুঁটিনাটি তথ্য প্রায় সকলেরই জানা। তবু জানার কোন শেষ নেই। প্রতিনিয়তই আমাদের সামনে উপস্থিত হয় নানান অজানা তথ্য।
আসন্ন এই বিশ্বকাপকে ঘিরে জাগোনিউজ আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে তাদের পাঠকদের নতুন নতুন তথ্য দিয়ে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে রাখতে। তারই ধারাবাহিকতায় এই আয়োজনে দেখে নেয়া যাক এখনো পর্যন্ত রাশিয়া বিশ্বকাপের অজানা পাঁচটি তথ্য:
আলিরেজা বেইরানভান্দ (ইরান)
এশিয়া মহাদেশ থেকে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া অন্যতম শক্তিশালী দল ইরান। মধ্য প্রাচ্যের এই দেশটির বিশ্বকাপ টিকিট নিশ্চিত করার পথে বড় অবদান ছিল ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার গোলরক্ষক আলিরেজা বেইরানভান্দের। রাশিয়াতেও ইরানের গোলবারের দায়িত্বে থাকবেন ২৫ বছর বয়সী এই গোলরক্ষক।
অথচ এতোটা সহজ ছিলনা ইরানি এই গোলরক্ষকের প্রাথমিক জীবন। ভ্রাম্যমাণ মেষপালক পরিবারে জন্ম হওয়া আলিরেজা প্রাথমিক জীবনে করেছেন নানান সংগ্রাম। ফুটবলে আত্মপরিচিত পাওয়ার আগে জীবিকার্জনে পোশাক তৈরি কারখান ও পিজ্জা ডেলিভারি বয় হিসেবে কাজ করেন তিনি। এমনকি নিজের বাড়তি উচ্চতার কারণে গাড়ি ধৌতকরণ কারখানাতেও কাজ করতে হয়েছে তাকে। চার চাকার গাড়ি গুলো পরিষ্কার করতে তার উচ্চতা তাকে বাড়তি সাহায্য করতো।
সেখান থেকে ফুটবলের মাধ্যমেই বদলে গিয়েছে আলিরেজার জীবন। বর্তমানে তেহরান ভিত্তিক ক্লাব পারসেপলিসের হয়ে খেলেন তিনি। বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে ১২ ম্যাচের মধ্যে ১১টিতেই গোলবার সুরক্ষিত রেখে কোন গোল হজম করেননি তিনি। আসন্ন বিশ্বকাপেও তার সুদক্ষ গ্লাভসজোড়ার দিকেই তাকিয়ে থাকবে ইরানের ভক্ত-সমর্থকেরা।
হং চুল, কিম মিন উ ও জু সি জং (দক্ষিণ কোরিয়া)
যেকোন খেলায় ম্যাচ শুরুর আগে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শনে বাজানো হয় সেসব দেশের জাতীয় সঙ্গীত। জাতীয় সঙ্গীতের সুরে দেশের প্রতি আবেগ অনুভব করেন খেলোয়াড়রা। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার তিন খেলোয়াড়ের তিন খেলোয়াড়ের শুধু আবেগই নয়, জাতীয় সঙ্গীতের সময় স্পর্শ করবে পেশাদারিত্বের টানও।
হং চুল, কিম মিন উ ও মিডফিল্ডার জু সি জং পেশাগত ভাবে দেশটির সামরিক বাহিনীতে রয়েছে। ফলে দক্ষিণ কোরিয়ার ম্যাচের দিন যখন তাদের জাতীয় সঙ্গীত বাজবে, তখন পেশাদারিত্বের কারণে জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মানসূচক স্যালুট দিবেন এই তিন ফুটবলার।
বিশ্বকাপের ‘এফ’ গ্রুপে জার্মানি, মেক্সিকো এবং সুইডেনের সাথে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। ১৮ জুন সুইডেনের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে তাদের বিশ্বকাপ যাত্রা। ২৩ জুন মেক্সিকো এবং ২৭ জুন জার্মানির বিপক্ষে পরবর্তী দুই ম্যাচ খেলবে তারা।
আব্দুল্লাহ আল খাইবারি (সৌদি আরব)
সৌদি আরবের মিডফিল্ডার আব্দুল্লাহ আল খাইবারির জন্য বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ অনেকটা জ্যাকপট পাওয়ার মতোই। কেননা ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হওয়ার পর মাত্র ১৬ মাসের মাথায় ফুটবলের মহাযজ্ঞে খেলার সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন ২১ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার।
সৌদি প্রো লিগে দেশটির রাজধানী রিয়াদ ভিত্তিক ক্লাব আল শাবাবে খেলেন খাইবারি। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচেই মাঠে নামার সম্ভাবনা রয়েছে তার। উদ্বোধনী দিনে স্বাগতিক রাশিয়ার মুখোমুখি হবে সৌদি আরব।
মিলোজ ডিগেনেক (অস্ট্রেলিয়া)
অস্ট্রেলিয়ান ডিফেন্ডার মিলোজ ডিগেনেকের এবারের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণটা বেশ রহস্যজনক। সার্বিয়ায় জন্ম হওয়া ডিগেনেকের পরিবার ক্রোয়েশিয়ায় কাটিয়েছে জীবনের একটা অংশ। পরে কসোভো যুদ্ধের সময় তারা বেলগ্রেডে স্থানান্তরিত হয়।
পরে ২০০০ সালে কেবল ২ ব্যাগ কাপড় এবং ৪০০ ডলার সাথে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন ডিগেনেক। এরপর প্রথমে অস্ট্রেলিয়া অনুর্ধ্ব-১৭ দল এবং পরে সার্বিয়ার অনুর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলেন ২৪ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডার। সবাই ভাবছিল ডিগেনেক হয়তো সার্বিয়ার হয়েই খেলবেন আন্তর্জাতিক ফুটবল।
কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা বোধ থেকেই সকারুজদের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। রাশিয়া বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার পাশাপাশি খেলার সুযোগ পেয়েছে সার্বিয়াও।
ইয়ুতো নাগাটোমো (জাপান)
জাপানিজ ডিফেন্ডার ইয়ুতো নাগাটোমোর ফুটবল ক্যারিয়ার অতোটা বর্ণিল নয়। তবে জাপানের বর্তমান স্কোয়াডের একশ’র বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা তিন ফুটবলালের একজন তিনি। কিন্তু এজন্য তাকে চেনার কোন কারণ নেই।
কিন্তু ২০১৬ সালে সান সিরোতে খেলার মাঠেই জাপানিজ অভিনেত্রী আইরি তাইরাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলেছিলেন নাগাটোমো। ৩১ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডার ইতালির জনপ্রিয় ক্লাব ইন্টার মিলানের হয়েও খেলেছেন কয়েক মৌসুম। তবে বর্তমানে তুরষ্কের ক্লাব গ্যালাতাসারাইতে রয়েছেন তিনি।
এসএএস/আরআইপি