নতুন বছরে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ব্যস্ত থাকবে বাংলাদেশ
স্মৃতির পাতা থেকে হারিয়ে গেলো আরও একটি বছর। পুরোনোকে ঝেড়ে নতুন শুরুর প্রস্তুতি আগেরদিন থেকেই শুরু হয়েছিল। আজ সারা বিশ্বেই হচ্ছে নতুন বছরকে বরণ। আন্তর্জাতিক ক্রীড়ায় ঠাসা থাকছে ২০১৮ সালটি। বিশ্ব কাঁপিয়ে দেয়া ফুটবলের মহাযজ্ঞ বিশ্বকাপ আছে জুন-জুলাইয়ে রাশিয়ায়। আছে বেশ কয়েটি আন্তর্জাতিক গেমস।
অস্ট্রেলিয়ায় কমনওয়েলথ গেমসের আসর বসবে এপ্রিলে। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ইন্দোনেশিয়ায় আছে এশিয়ান গেমস। বাংলাদেশও বাইরে থাকছে না এই ক্রীড়াযজ্ঞের। বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যস্ত সময় কাটাবে আন্তর্জাতিক ফুটবল অঙ্গনে। পুরুষ ও নারীদের জাতীয়, বয়সভিত্তিক এবং ক্লাব পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা থাকবে বছরজুড়ে।
গত ১৪ মাস আন্তর্জাতিক কোনো ম্যাচ খেলেনি জাতীয় দল। ২০১৬ সালের ১০ অক্টোবর ভুটানের কাছে হারের পর ফিফা এবং এএফসি আয়োজিত ম্যাচ খেলার দরজা বন্ধ হয়ে যায় লাল-সবুজ জার্সিধারীদের। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও (বাফুফে) জাতীয় দলের জন্য কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলানোর উদ্যোগ নেয়নি। তবে নতুন বছরে জাতীয় দলের ম্যাচ দিয়েই শুরু হতে পারে আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের ব্যস্ততা। মার্চে দুটি ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাফুফে। কম্বোডিয়া গিয়ে ২২ মার্চ এবং ইন্দোনেশিয়াকে ঢাকায় এনে ২৭ মার্চ ম্যাচ দুটো খেলার পরিকল্পনা দেশের ফুটবলের অভিভাবক সংস্থাটির।
এ দুটি ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ হলে তার বাইরে জাতীয় দলের খেলা আছে সেপ্টেম্বরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে। ৪ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় এ টুর্নামেন্টের দশম আসর বসবে ঢাকায়। নতুন বছরে হওয়ার কথা আছে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপও। জাতির জনকের নামের এ টুর্নামেন্ট এপ্রিলে আয়োজনের পরিকল্পনা আছে বাফুফের। না হলে, চলে যাবে রাশিয়া বিশ্বকাপের পর।
সাফ, বাফুফে আয়োজিত টুর্নামেন্ট এবং ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ ছাড়া ২০১৮ সালে আর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ নেই বাংলাদেশের। ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন (বিওএ) পুরুষ ফুটবল দল পাঠাবে কিনা তা অনিশ্চিত। যদিও বাফুফের প্রত্যাশা, মেয়েদের পাশাপাশি পুরুষ ফুটবল দলও থাকবে এশিয়ান গেমসে। ছেলেদের সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপও আছে নতুন বছরে।
বিদায়ী বছরের মতো নতুন বছরে বেশি ম্যাচ থাকছে নারী ফুটবলের। ডিসেম্বরে আছে নারীদের সিনিয়র সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। দক্ষিণ এশিয়ার অনূর্ধ্ব-১৮ ও অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপও হবে ২০১৮ সালে। মার্চে হংকং আয়োজন করবে নারী অনূর্ধ্ব-১৫ আমন্ত্রণমূলক চারজাতি টুর্নামেন্ট। বাংলাদেশকে ওই টুর্নামেন্টে খেলবে।
যদিও বাংলাদেশ ও হংকং ছাড়া অন্য দুটি দল এখনো চূড়ান্ত হয়নি। মে মাসে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য ফুটসাল টুর্নামেন্ট খেলতে যাবে লাল-সবুজ জার্সিধারী মেয়েরা। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো এশিয়ান গেমসে খেলবেন সাবিনা, কৃষ্ণা, মারিয়ারা। সেপ্টেম্বরে আছে মেয়েদের এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ও অক্টোবরে অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপ।
নতুন বছরে ক্লাব ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ম্যাচও আছে। এএফসি কাপে অংশ নেবে বাংলাদেশের দুটি ক্লাব। এশিয়ার ক্লাব পর্যায়ের দ্বিতীয় সেরা টুর্নামেন্ট এএফসি কাপে খেলা নিশ্চিত আবাহনীর। দ্বিতীয় দলটির নাম জানা যাবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে দলগুলোর অবস্থান চূড়ান্ত হওয়ার পর। এএফসি কাপের জন্য আবাহনী ছাড়াও এন্ট্রি করেছে মোহামেডান ও সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। লিগ শেষে টেবিলে এই দুই দলের মধ্যে যারা উপরে থাকবে তারাই সুযোগ পাবে দ্বিতীয় দল হিসেবে এএফসি কাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডে খেলার।
সাইফ ও মোহামেডানের যে দল এএফসি কাপে সুযোগ পাবে তারা কোয়ালিফাইং রাউন্ড টপকালে খেলবে আবাহনীর সঙ্গে ‘ই’ গ্রুপে। আবাহনীকে গ্রæপের তিন নম্বর দল রেখেই ফিকশ্চার চূড়ান্ত করেছে এএফসি। ভারতের আইজল এফসি, মালদ্বীপের নিউ রেডিয়েন্ট ও গ্রুপের চার নম্বর দলের বিপক্ষে আবাহনীর ম্যাচ হবে ৬ ও ১৩ মার্চ, ১০ ও ২৫ এপ্রিল এবং ২ ও ১৬ মে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় দলটি গ্রুপ পর্ব পর্যন্ত উঠলে তাদের খেলাগুলো ৬, ১৩ ও ১৬ মার্চ, ২ ও ২৫ এপ্রিল এবং ২ মে।
বাংলাদেশের যে ক্লাবটি দ্বিতীয় দল হিসেবে এএফসি কাপে খেলবে তাদের প্রি-কোয়ালিফাইং রাউন্ডের মালদ্বীপের টিসি স্পোর্টসের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ ২৩ জানুয়ারি ও দ্বিতীয় ম্যাচ ৩০ জানুয়ারি। জিতলে ভারতের ব্যাঙ্গালুরু এএফসি ও ভুটানের ট্রান্সপোর্ট ইউনাইটেডের মধ্যকার বিজয়ী দলের বিপক্ষে খেলা ১৩ ও ২০ ফেব্রুয়ারি।
মার্চ-এপ্রিলে হওয়ার কথা চট্টগ্রাম আবাহনী আয়োজিত শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ চ্যাম্পিয়নশিপ। এ টুর্নামেন্ট হলে চট্টগ্রাম আবাহনী ছাড়া আরো বাংলাদেশের আরো দুটি ক্লাবের খেলার সুযোগ হবে।
আরআই/আইএইচএস/এমএস