ইংলিশ ফুটবলে তারুণ্যের জয়গান
স্টিভেন কুপারের চোখে-মুখে তৃপ্তির হাসি। প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ ফুটবলের শিরোপা জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে তিনি মিডিয়ার তৃষ্ণা মেটালেন দীর্ঘ সময় বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে। কিশোর ফুটবলারদের ৩৭ বছর বয়সী এ ইংলিশ কোচের হাত ধরে যোগ হলো দেশটির তারুণ্যের সাফল্যের মালায় আরেকটি ফুল। এ নিয়ে ৬ মাসে চারটি বয়স ভিত্তিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠে তিনটি ট্রফি। যার দু’টি বিশ্বকাপের। একটি দেশের তরুণ ফুটবলাররা এর চেয়ে বড় আগমনী বার্তা আর কী দিতে পারে?
দক্ষিণ এশিয়ায় ফুটবলের প্রথম কোনো বিশ্বকাপ। চার মাস আগে দক্ষিণ কোরিয়ায় হয়েছে আরেকটু সিনিয়র অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ। দুটি ট্রফিই উড়িয়ে নিয়ে গেলো ইংলিশ যুবারা। ৫ মাসে বয়সভিত্তিক ফুটবলের সবচেয়ে বড় ও মর্যাদার টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়া ছাড়াও ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপেও সাফল্য দেখিয়েছে ইংল্যান্ডের নতুন প্রজন্ম।
মে মাসে ইউরোপিয়ান অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠে ক্রোয়েশিয়া থেকে ট্রফি নিয়ে ঘরে ফিরতে না পারলেও দুই মাস পরই জর্জিয়া থেকে ইউরোপিয়ান অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট নিয়ে আসে ইংলিশ যুবারা। আর শনিবার কলকাতার বিবেকানন্দ যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনেতো রূপকথা লিখে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ জিতলো ববি চার্লটন, গ্যারি লিনেকার ও ডেভিড বেকহ্যামদের দেশ।
অনূর্ধ্ব-১৭ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে স্পেনের এ দলটির কাছেই টাইব্রেকারে হেরেছিল ইংল্যান্ড। ২-২ গোলে শেষ হওয়া ফাইনালের ভাগ্য নির্ধারণ হয়েছিল টাইব্রেকারে। ইংল্যান্ড করতে পেরেছিল একটি গোল। ৪-১ ব্যবধান জিতে ছোটদের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সেরা হয়েছিল স্প্যানিশ কিশোররা। সেই হারের কী মধুর প্রতিশোধই নিলো ইংল্যান্ডের ছেলেরা!
ফুটবল বিশ্বকাপের ট্রফির রং কী তা তো ভুলেই গিয়েছিল ইংলিশরা। ১৯৬৬ সালের পর বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় মঞ্চে আর কখনও উঠতে পারেনি তারা। এবার চারমাসের ব্যবধানে দু’দুটি বিশ্বকাপ ট্রফি। হোক না বয়সভিত্তিক। এরাইতো আগামীর তারকা। বয়সভিত্তিক বিশ্বকাপের দুটি ট্রফি জিতলে দীর্ঘদিন মূল বিশ্বকাপ না জেতার দুঃখ কমবে না ইংলিশদের। তবে দেশটির ফুটবলে তারুণ্যের যে জয়গান এখন চলছে তাতে কে জানে অচিরেই তারা হাতে তুলবে না সবচেয়ে বড় ট্রফিটি?
কিশোরদের কোচ স্টিভেন কুপার মনে করেন, বয়সভিত্তিক এ দলগুলোর হাতেই উঠবে আগামীতে ইংলিশদের পতাকা, ‘ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল ডেভেলপমেন্টে জোর দিয়েছে। তার ফল বয়সভিত্তিক দলগুলোর সাম্প্রতিক সাফল্য। এদের মধ্যে থেকেই তৈরি হবে ভবিষ্যত জাতীয় দল। ওদের লড়াই করার যে মানসিকতা গড়ে উঠছে তাতে আমি সামনে রঙিন কিছুই দেখতে পাচ্ছি।’
শনিবার ফাইনালে স্পেনের বিরুদ্ধে ২-০ গোলে পিছিয়েও থেমে যায়নি ইংলিশবয়রা। এই বয়সের ছেলেরা মাঠে কোচের প্রেসক্রিপশন এভাবে বাস্তবায়ন করবে সেটা দেখিয়েছে জুনিয়র লায়নরা। ‘আমি ছেলেদের শিখিয়েছি, কখনোই ভেঙ্গে যাওয়া চলবে না। মাঠে ওরা সেটাই ফলো করেছে। ওরা মানসিকভাবে শক্তিশালী ছিল বলেই এভাবে ম্যাচে ফিরে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। আমি বলবো ইংলিশ ফুটবলের জন্য বিশেষ দিন এটি। এটা কেবল একটি ট্রফিই নয়, আমাদের ফুটবল আরো এগিয়ে যায়ার ভিত। ট্রফি জয়ের সব কৃতিত্ব ছেলেদের। আমি শুধু দায়িত্বটুকুই পালন করেছি। দলের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ট্রফি উৎসর্গ করতে চাই’- চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বলছিলেন ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৭ দলের কোচ স্টিভেন কুপার।
আরআই/আইএইচএস/জেআইএম