ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

ভারত মাতাচ্ছে কক্সবাজারের ক্ষুদে মেসি!

জেলা প্রতিনিধি | কক্সবাজার | প্রকাশিত: ১০:৫৬ এএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

১২ বছরের মেয়ে শাহেদা আকতার রিফা। শখ তার ফুটবল খেলা। শিশুকাল থেকে বাড়ির উঠান ও পাড়ার মাঠে খেলার ছলে খেললেও ২০১৩ সাল থেকে খেলাটাই তার পেশা হয়ে উঠেছে। বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট তাকে সেই স্বপ্ন ছোঁয়ার সুযোগটা এনে দিয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণিতে থাকাকালীন প্রথম খেলতে নেমে সবার দৃষ্টি কাড়ে রিপা। আক্রমণ ভাগে দাঁড়িয়ে বিশ্ব বরেণ্য মেসির আদলে করেছে প্রতিটি গোল। এ কারণে স্কুল এবং পাড়ায় তার নাম দেয়া হয় মেসি। প্রতি বছর এ টুর্নামেন্টে বিদ্যালয়ের হয়ে তার নৈপুণ্য রিফা নামটি আড়াল করে দিয়েছে। এলাকায় এখন মেসি নামেই বেশি পরিচিতি তার।

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জালিয়া পালং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি গ্রামের দরিদ্র জালাল আহমদ (৫১) ও শামশুন্নাহার (৪০) দম্পতির সন্তান রিফা ওরফে মেসি দারিদ্র্যের মাঝে বেড়ে উঠেছে। এরপরও তার নৈপুণ্য দিয়ে স্থান করে নিয়েছে বিকেএসপি'র মতো প্রতিষ্ঠানে। বিকেএসপির হয়েই দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতে ফুটবল জাদুর কসরত দেখাচ্ছে উখিয়ার এই ক্ষুদে মেসি।

গতকাল ফোনে কথা হলে, ‘বিকেএসপিতে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া শাহেদা আক্তার রিফা জানায়, বিস্ময় ফুটবলার কন্যা হয়ে দেশের ক্রীড়াপ্রেমী কোটি দর্শকের মনে স্থান করে নিয়ে বিশ্ব দরবারে দেশের নাম উজ্জল করতে চাই।’

messi

২০১৩ সালে সোনাইছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হয়ে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে শুরু হয়েছিল তার খেলোয়াড়ি জীবন। উখিয়ার ক্ষুদে এই ফুটবল খেলোয়াড়ের পরিবারের দুঃখ-কষ্টের গল্প শুনলে যে কারো চোখের জল এসে যাবে। রিফা দারিদ্র্যকে জয় করে সাফল্যের বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। বর্তমানে ভারতের মাঠিতে সুব্রত মুখার্জী ফুটবল টুর্নামেন্টে বিকেএসপির পক্ষে খেলছেন।

দিন মজুর জালাল আহমদের ভিটে-বাড়ি ছাড়া কোনো সহায়-সম্পদ নেই। তাই দারিদ্র্যের মাঝে বেড়ে ওঠা ক্ষুদে রিপা অদম্য ইচ্ছা পূরণে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেন। মেয়ের খেলাধুলার সরঞ্জাম যোগাতে নানা প্রতিকূলতা পার করতে হয় পরিবারের। কিন্তু সেই কষ্ট আজ হাসি হয়ে উজ্জ্বল করছে সবার মুখ। মেয়ে প্রতিটি পর্যায়ের খেলায় অসাধারণ নৈপুণ্যে জালাল দারিদ্রতার কষ্টকে কষ্ট মনে করেন না। রিফার সাফল্যের গল্পে তিনি এখন গর্বিত বাবা-সুখী মানুষ।

বিকেএসপি মহিলা ফুটবল দলের অন্যতম খেলোয়াড় রিফা ও নিজ গ্রামের ক্ষুদে মেসি ভারতের মাটিতে সুব্রত মুখার্জী ফুটবল টুর্নামেন্টে কৃতিত্বের সঙ্গে খেলে দেশের মুখ উজ্জ্বল করছেন। ২০১৩ সালে শুরুর পর থেকে প্রতিটি খেলায় অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করে আসছে। গত বছর বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ খেলে চট্রগ্রাম বিভাগে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয় রিফা। তার অসাধারণ নৈপুণ্যে তার স্কুল বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে জেলা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তার অদম্য ইচ্ছায় টানা তৃতীয়বারের মত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ খেলার পরে বিকেএসপি'তে ট্রায়েল দেন। ট্রায়েলে সে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। এছাড়া সে অসংখ্য বার সর্বোচ্চ গোলদাতা, ম্যান অব ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন।

বর্তমানে ভারতে মাঠে বিকেএসপির হয়ে প্রথম ম্যাচে ত্রিপুরা রাজ্যের বিরুদ্ধে মাত্র ৪০ সেকেন্ডে গোল করে সুনাম অর্জন করেছে। এছাড়া সে ধারাবাহিক ভাবে দিল্লির ও হরিয়ানা প্রদেশের বিরুদ্ধে ১টি করে গোল করে দলের জয়ে বিরাট ভূমিকা রাখেন।

রিফার ব্যাপারে তার আপন বড় ভাই ফারুক হোসাইন ও স্থানীয় প্রতিবেশি নুরুল আবছার নান্নু জানান, ‘ছোটবেলা থেকে ফুটবল খেলার খুব শখ দেখে পরিবার থেকে তাকে বাধা দেয়া হয়নি। অভাব অনটনের মাঝেও পরিবার থেকে তাকে খেলার উৎসাহ জুগিয়েছে। আজ রিফা এতদূর আসার পেছনে এলাকাবাসীর সহযোগিতা ও সমর্থন ছিল। যার কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেষ করা যাবে না। বিশেষ করে সানা উল্লাহ ও শামশুল আলম সোহাগের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। তারা দায়িত্ব নিয়ে ছোট্ট রিফার মনে সাহস জুগিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে বিকেএসপিতে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। ফলে রিফা আজ এতদূর আসতে পেরেছেন। দেশবাসীর কাছে রিফার ভবিষ্যত সাফল্য কামনা করে দোয়া চান তারা।’

ক্ষুদে ফুটবলার রিফা ওরফে মেসির খেলার প্রশংসা করে জালিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরীর বড় ছেলে চট্টগ্রাম জর্জ কোর্টের আইনজীবি শাহ আমিন চৌধুরী বলেন, ‘ক্ষুদে মেসির ভারতের মাঠে চমৎকার নৈপুণ্য যারা দেখেছে তারা অনায়াসে স্বীকার করবে রিফা বেকআপ পেলে সত্যি দেশের নাম করা খেলোয়াড় হবে। দোয়া করি মেসি যেন আরো ভালো খেলা আমাদের উপহার দিতে পারে। আশা করছি মেসি আমাদের ইউনিয়ন তথা পুরো দেশের সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখবে।’

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অনুপ বড়ুয়া অপু বলেন, ‘আমি প্রতি বছরই রিফার খেলা দেখেছি। মেসি-নেইমারের মতো ক্ষীপ্রতায় গোলে আক্রমণ করে ক্ষুদে এ নারী ফুটবলার। শুরুতে যখন বিকেএসপির মতো জায়গায় গেছে তাই খেলার প্রতি যত্নশীল হলে ভবিষ্যতে নাম করা খেলোয়াড় হবে রিফা।’

এমআর/আইআই

আরও পড়ুন