এমন অবিশ্বাস্য ইনিংসের পরও যে দুঃখ পোড়াচ্ছে সোহানকে
শেষ ওভারে রংপুরের জিততে ২৬ রান দরকার। সেখানে কাইল মায়ার্সের করা শেষ ওভারে সমান ৩টি করে ছক্কা ও বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৩০ রান তুলে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে রংপুর রাইডার্সকে এক ঐতিহাসিক জয় উপহার দিয়েছেন অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান।
জেন্টল মিডিয়াম পেসার কাইল মেয়ার্সের সেই ওভারে আসলে সোহান কি প্রলয় বইয়ে দিয়েছেন সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে, আসুন জেনে নেই। প্রথম বলটি ছিল লো ফুলটচ, সেটা লং অনের ওপর দিয়ে বাতাসে ভাসিয়ে সীমানার ওপারে পাঠালেন সোহান। ছক্কা। দ্বিতীয় বল লেগ স্ট্যাম্পের ওপর শর্ট, পুল করে স্কয়ার লেগ দিয়ে বাউন্ডারি।
তৃতীয় বল লেগ মিডলে পিচ পড়া। খানিক হেলিকপ্টার শটের আদলে তুলে মেরে ওয়াইড মিড উইকেটের ওপর দিয়ে ছক্কা। চতুর্থ বল অফস্ট্যাম্প সোজা বলকে টেনে স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা হাঁকালেন। পঞ্চম ডেলিভারি ফুলটচ, কভার-এক্সট্রা কভারে মাঝখান দিয়ে মাটি কামড়ে বাউন্ডারি। অফস্ট্যাম্পের বাইরে পিচ পড়া ৬ষ্ঠ বল টেনে তুলে মারলেন ডিপ মিডউইকেটের ওপর দিয়ে ছক্কা।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুধু রংপুর রাইডার্স জিতলোই না। অধিনায়ক সোহান নতুন রেকর্ডও গড়লেন। বিপিএলে এক ওভারে সবচেয়ে রান তোলার রেকর্ডটা এখন সোহানের।
সোহানের এমন উত্তাল উইলোবাজি দেখে চোখ ছানাবড়া দুই টিভি ধারাভাষ্যকার কার্টলি অ্যামব্রোস ও আতহার আলীর। তাদের কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না শেষ ওভারে সোহান এমন বিস্ময়কর ব্যাটিং করতে পারে।
তাই কখনো ‘ইম্পসিবল’ আবার কখনো ‘ইনক্রেডিবল’ বলে বিস্ময় প্রকাশ করছিলেন; কিন্তু যিনি এমন অসাধারন ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেললেন , তার প্রতিক্রিয়া কি ?
এমন ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলার পর রংপুর অধিনায়ক সোহানের কেমন লাগছে? খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে সোহান দিলেন তার জবাব। সোহানের কথা, ‘এমন ম্যাচ উইনিং ইনিংস খেলতে পেরে অবশ্যই খুব ভাল লাগে।’
তবে এমন ম্যাচ উইনিং নক উপহার দেয়ার পর ভিতরে আনন্দ অনুভব করলেও একটা বড় আফসোসেও পুড়েছেন সোহান। কি সেই আফসোস? ‘ম্যাচের পর বার বার মনে হচ্ছিল গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের সাথে ম্যাচের কথা। সেই ম্যাচে শেষ ওভারে আমাদের জয়ের জন্য দরকার ছিল ২০ রানের। আমি মনে হয় প্রথম ৫ বলে ১৪-১৫ রানের মত নিয়ে ফেলি। শেষ বলে দরকার ছিল ৬ রানের; কিন্তু আমি ছক্কা হাঁকাতে পারিনি। ঘটনাটি ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের।’
ভারতের সাথে বৃষ্টি ভেজা ম্যাচটির ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছিল ডিএল মেথডে। শেষ বলে বাংলাদেশের দরকার ছিল ৬ রানের; কিন্তু ভারতীয় বাঁ-হাতি পেসার আর্শদিপ সিংহের করা ওই ওভারের শেষ বলে সোহান একরানের বেশি নিতে পারেননি।
তার আগে আর্শদিপ সিংয়ের ৫ বল থেকে ১৩ রান তুলে নিয়েছিলেন সোহান। দরকার ছিল ২০ রানের। সেই ওভারের প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে নুরুল হাসান সোহানকে স্ট্রাইক দিয়েছিলেন পেসার তাসকিন। সোহান স্ট্রাইক পেয়ে আর্শদিপের দ্বিতীয় বলটি ছিল শর্ট। সোহান চকিতে ডিপড স্কোয়ার লেগের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে বসেন।
পরের ৪ বলে দরকার পড়ে ১৩ রানের। তৃতীয় বলটি ব্লকহোলে পড়লে সোহান তাকে স্লগ করতে চান ডিপ স্কোয়ার লেগ আর ডিপ মিডউইকেটের ওপর দিয়ে। ব্যাটে বলে হয়নি।
শেষ ৩ বলে ১৩ রান প্রয়োজন পড়া অবস্থায় আর্শদিপের ইয়র্কার লেন্থের বলকে লংঅনে পাঠিয়ে ২ রানের বেশি নিতে পারেননি সোহান। শেষ বলে ১১ প্রয়োজন পড়লে আর্শদিপ আবারও ইয়র্কার ছোঁড়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। বলকে থার্ডম্যান আর পয়েন্টের মাঝখান দিয়ে হাঁকিয়ে ডাবলস তুলে নেন সোহান।
তারপর শেষ বলে আর ছক্কা হাঁকানো হয়নি। সেই আক্ষেপটা এখনো ভেতরে পুষে রেখেছেন সোহান। তার কথা, ‘সেই ছক্কাটি আমার খুব ইচ্ছে ছিল হাঁকানোর; কিন্তু আমি পারিনি। সেই না পারার কথা এখনো মনে হয়। ওয়ার্ল্ডকাপের মঞ্চে হিরো হওয়ার সুযোগ এসেছিল; কিন্তু পারিনি। ২০ রান লাগতো।’
আজ সিলেটে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে শেষ ৬ বল থেকে ২৬ রান দরকার থাকা অবস্থায় সমান তিনটি করে ছক্কা ও বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ২৬ রান তুলে দল জিতিয়ে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়ার আনন্দের মাঝেও ভেতরে এক নিরানন্দ কাজ করছিল সোহানের।
নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে সোহানের কথা, ‘অনেক ভাল লাগছে। মহান সৃষ্টিকর্তার অনেক দয়া ও কৃপা। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। আগের ওভারে যখন নেমেছি রাব্বি ভাই (কামরুল ইসলাম) বললো তুমিই খেলো। সোহানের কথা, প্রথম বল ছয় হওয়ায় বিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল তার। শেষ বলে ২ রান দরকার থাকা অবস্থায়ও বড় শট খেলা কেন?
সোহানের ব্যাখ্যা, সেটা পরিকল্পনাই ছিল। আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখে বড় শটের চিন্তায়ই ছিল। ১-২ নয়। আমার জোনে বল পেলে চার কিংবা ছয়ের জন্য ব্যাট চালাবো। পেলে বড় মারবো। এটাই ছিল ইচ্ছে ও পরিকল্পনা।
এআরবি/আইএইচএস/