ফাহিম আশরাফের স্মৃতিচারণ
‘বাংলাদেশের বিপক্ষে ওই ইনিংসের আগে আমাকে কেউই চিনতো না’
ম্যাচটা স্বীকৃত ওয়ানডে ছিল না। সেটা ছিল ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যে হওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে গা গরমের ম্যাচ। ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে হওয়া সে প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৯ নম্বরে নেমে ৩০ বলে সমান এক হালি করে ছক্কা ও বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৬৪ রানের এক ঝোড়ো ইনিংস উপহার দিয়ে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন ফাহিম আশরাফ।
ম্যাচটির স্কোরলাইন ছিল দারুণ। প্রথম ব্যাট করে তামিম ইকবালের দুরন্ত সেঞ্চুরি (৯৩ বলে ১০২), ইমরুল কায়েসের হাফসেঞ্চুরি (৬২ বলে ৬১) আর মুশফিকুর রহিমের ঝোড়ো গতির ৪৬ (৩৫ বলে) রানের ইনিংসে ভর করে ৩৪১ রানের বড়সড় স্কোর গড়ে বসেছিল বাংলাদেশ।
জবাবে পাকিস্তান নির্ঘাত হারের অবস্থা থেকে ২ উইকেটের মনে রাখার মত জয় পায়। ১৯ রানে ২ উইকেট হারানো পাকিস্তানের ইনিংসের অর্ধেকটা খোয়া যায় ১৬৮ রানে। এক পর্যায়ে ২৪৯ রানে তারা ৮ উইকেট খুইয়ে বসেছিল।
৪৪ বলে পাকিস্তানের দরকার ছিল ৯৩ রানের। ফাহিম আশরাফ নিচের দিকে নেমে অমন ঝড়ো ইনিংস খেলে দল জিতিয়ে দেন।
ভাবছেন, সেই ৭ বছর আগের প্র্যাকটিস ম্যাচ নিয়ে এত কথা কেন? কথা এই কারণে যে, ওই প্র্যাকটিস ম্যাচের অমন ঝড়ো ইনিংসটি পাল্টে দেয় ফাহিম আশরাফের জীবন। তার পরের সিরিজেই পাকিস্তান দলে সুযোগ পান এ দ্রæত গতির বোলার কাম লেট অর্ডার।
ফাহিম আশরাফ নিজেও বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা ওই ইনিংসকে তার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখেন। আজ দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে ফরচুন বরিশালের জয়ের অন্যতম নায়ক স্বীকার করলেন সে কথা।
তার সোজা কথা, ‘ওই এক ইনিংস আমাকে এনে দেয় ব্যাপক পরিচিতি। ক্রিকেট বিশ্বে তো প্রশ্নই আসে না। পাকিস্তানের অনেকেই আমাকে চিনতেন না। কিন্তু আমি রাতারাতি পরিচিতি পাই। এবং ওই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেই শ্রীলঙ্কার সাথে ম্যাচে পাকিস্তান একাদশে সুযোগ পেয়ে যাই।’
কিন্তু কঠিন সত্য হলো, বাংলাদেশের সাথে গা গরমের ম্যাচে মাঠ গরম করলেও ওয়ানডে ক্যারিয়ারে আর কখনই অমন আকর্ষণীয় ও আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলতে পারেননি ফাহিম আশরাফ। ৩৪ ওয়ানডেতে ২৪ ইনিংস ব্যাট করা ফাহিম আশরাফের রান মোটে ২২৪। সর্বোচ্চ ২৮।
শুধু পাকিস্তান জাতীয় দলের হয়েই যে পারেননি নয়, বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টেও আর অমন বিধ্বংসী ইনিংস খেলতে পারেননি ফাহিম।
অবশেষে আজ সোমবার বিপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে খেললেন ২১ বলে ১ চার আর ৭ ছক্কায় অপরাজিত ৫৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংস।
ম্যাচসেরা না হলেও সোমবার শেরে বাংলায় ফাহিম আশরাফ ছিলেন আলোচিত। দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে ১৯৭ রানের পিছু ধেয়ে ধুঁকছিল বরিশাল। ৬১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলা বরিশাল জয়ের বন্দরে পৌঁছায় অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ আর ফাহিম আশরাফের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে।
১১২ রানে ৬ উইকেট পতনের পর বরিশালের দরকার ছিল ৪৬ বলে ৮৬ রান। ওই অবস্থায় উইকেটে গিয়ে ২১ বলে ৭ বিশাল ছক্কায় ৫৪ রানের হার না মানা ইনিংস উপহার দিয়ে বরিশালের ম্যাচ সহজ করে দেন।
খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে এসে সেই ৭ বছর আগে বাংলাদেশের সাথে ওয়ার্মআপ ম্যাচে খেলা দুর্দান্ত ইনিংসের কথা স্মরণ করলেন এই পাকিস্তানি অলরাউন্ডার।
বললেন, ‘আমার আজকের ইনিংস খেলার পর বার্মিংহামের ওই ম্যাচটির কথাই মনে হচ্ছিল। সত্যি আমি খুব খুশি এমন এক ইনিংস খেলে দল জেতাতে পেরে।’
তবে নিজের চেয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকেই বেশি কৃতিত্ব দিলেন ফাহিম। তার কথা, ‘উইকেটে এসে প্রথম দিকে কিছুই করতে পারছিলাম না। প্রথম ৭ বলে ছিল আমার ১ রান। তখন রিয়াদ ভাই এসে সাহস জোগালেন। বললেন, মাথা ঠান্ডা রাখো। ধৈর্য ধরে উইকেটে থাক। আলগা বলের অপেক্ষায় থাকো।’
ফাহিম মনে করেন, দলে রিয়াদের মত অমন সিনিয়র ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটার থাকার অনেক অ্যাডভান্টেজ আছে। যারা সংকটে বিপদে হাল ধরতে জানেন। সঙ্গীদের ভালো খেলতে সাহস জোগানোর পাশাপাশি অনুপ্রাণিতও করতে পারেন।
ফাহিম আশরাফ ভালো ইংরেজি বলতে পারেন না। বিনয়ের সঙ্গে জানিয়ে দিলেন, ‘আপনারা ইংরেজিতে প্রশ্ন করুন। আমি উর্দুতে জবাব দেব।’
ইংরেজি ভাষাটা ভালো না জানলেও মাঠের খেলাটা ভালোই জানেন, আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন ফাহিম।
এআরবি/এমএমআর/আইএইচএস