ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

ওপেনারদের কারণেই বারবার নাকানি-চুবানি খাচ্ছে বাংলাদেশ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশিত: ০৭:২২ পিএম, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

পাকিস্তানের মাটিতে গত ২-০ ব্যবধানের ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয়ের পর থেকেই হারের বৃত্তে আটকা বাংলাদেশ। টানা পঞ্চম টেস্ট হারের দোরগোড়ায় টাইগাররা।

এর মধ্যে ভারতের সাথে চেন্নাই ও কানপুরে দুটি আর ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আরও ২ টেস্টে নাকানি -চুবানি খাওয়ার পর এবার অ্যান্টিগায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছেও হারের খুব কাছাকাছি মেহেদী হাসান মিরাজের দল।

অতি নাটকীয় কিছু না ঘটলে কিংবা শেষ প্রতিষ্ঠিত ব্যাটার জাকের আলী লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে অতি মানবীয় কিছু করতে না পারলে অনিবার্য পরাজয়ই দেখতে হবে বাংলাদেশকে।

এই যে শেষ টানা ৫ টেস্টে ব্যর্থতার সাতকাহন, তার পেছনের কাহিনী খুঁজতে গেলে সবার আগে বেরিয়ে আসবে ব্যাটিং ব্যর্থতা। আর ব্যাটারদের ব্যর্থতা শুরুই হচ্ছে উদ্বোধনী জুটি থেকে। যেখানে নিয়মিতই হতাশ করছেন ওপেনাররা।

পরিসংখ্যান ও খেলার চালচিত্রগুলো পর্যালোচনায় পরিষ্কার, ওপেনারদের চরম ব্যর্থতা আর জরাজীর্ণ অবস্থার কারণেই টেস্টে এখন খাবি খাচ্ছে বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাকফুটে চলে যাচ্ছে। সেখান থেকে আর সামনে এগিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না।

শেষ ৫ টেস্টের ১০ ইনিংসে বাংলাদেশের ওপেনাররা একবারও একটা শক্ত ভিত গড়তে পারেননি। এ সময়ের মধ্যে মাত্র একবার প্রথম উইকেটে পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের জুটি গড়তে পেরেছেন ওপেনাররা। সেটা ছিল ভারতের বিপক্ষে চেন্নাই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে।

সাদমান ইসলাম (৩৫) আর জাকির হাসান (৩৩) প্রথম উইকেটে তুলে দিয়েছিলেন ৬২ রান। বাকি ৯ ইনিংসে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি ভেঙেছে শুরুর পরপরই। আসুন দেখে নেই, ওই টেস্টগুলোয় বাংলাদেশের শুরুটা কেমন ছিল...

ভারতের সাথে চেন্নাইতে প্রথম টেস্টের অপর ইনিংসে সাদমান ও জাকির হাসানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে মাত্র ২ রানে। আর কানপুরে জাকির ও সাদমান প্রথম ইনিংসে তুলে দেন ২৬। দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের জুটিতে আসে ১৮ রান।

অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসে সাদমান ও জাকির হাসানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে মাত্র ৬ রানে। ইনিংস শেষ হয় ১০৬ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে একই জুটি আটকে গেছে ৪ রানে। টিম স্কোর ছিল ৩০৭।

চট্টগ্রামে সাদমানকে রেখে জাকির হাসানের বদলে ওপেনার হিসেবে মাহমুদুল হাসান জয়কে খেলানো হয়। আর জাকির খেলেন তিন নম্বরে। কিন্তু অবস্থা একই। এবার সাদমান ও জয়ের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে যথাক্রমে ১০ ও ১৫ রানে।

এবার অ্যান্টিগায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওপেনিং জুটিতে পরিবর্তন। সাদমান ড্রপ। জাকির আর মাহমুদুল হাসান জয় ওপেন করেছেন। কিন্তু অবস্থার কোনই পরিবর্তন নেই। এই জুটি প্রথম ইনিংসে তুলেছিল ২০ রান, পরে ইনিংসে ১।

ওপরের পরিসংখ্যানে পরিষ্কার, শেষ ৫ টেস্টে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটির অবস্থা কতটা খারাপ ছিল। আসুন এবার জানা যাক, এই টেস্টগুলোয় বাংলাদেশের যে ৩ ওপেনার খেলেছেন, সেই সাদমান ইসলাম, জাকির হাসান ও মাহমুদুল হাসান জয়ের ব্যাটিংয়ের হাল হকিকত কেমন ছিল।

একটা বিষয় উল্লেখ করা মত, সাদমান, জাকির ও জয়ের ৩ জনেরই ক্যারিয়ারের শুরুটা দারুণ। তারপর যত সময় গড়িয়েছে, ততই তাদের ব্যাট ঔজ্জ্বল্য হারিয়েছে।

২০১৮ সালের নভেম্বরে টেস্ট অভিষেকে ব্যাট হাতে নেমেই ফিফটি (১৯৯ বলে ৭৬) হাঁকিয়েছিলেন সাদমান ইসলাম। কিন্তু এ বছর আগস্টে পাকিস্তানের সাথে রাওয়ালপিন্ডিতে ৯৩ রানের ইনিংস খেলার পর তার ব্যাট রান খরায় ভুগছে।

শেষ ১১ ইনিংসে (৯*, ১০, ২৪, ২, ৩৫, ২৪, ৫০, ০, ১, ০, ৬) একটি মাত্র হাফসেঞ্চুরি। আর শেষ ৪ ইনিংসে দুটি শূন্য। একবারও দুই অংকে পৌঁছাতে পারেননি সাদমান।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সাথে চট্টগ্রামে টেস্ট অভিষেক জাকির হাসানের। প্রথম ইনিংসে ২০ রানে ফিরলেও দ্বিতীয় ইনিংসেই সেঞ্চুরি (৩১৫ মিনিটে ২২৪ বলে ১০০) করে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন এই বাঁহাতি।

ঢাকার মিরপুরের শেরে বাংলায় পরের টেস্টে আবার ফিফটি (৫১)। কিন্তু তারপর যত সময় গড়িয়েছে, ততই নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন জাকির। শেষ ১৩ ইনিংসে (১৯, ১২, ১৫*, ১, ৪০, ৩, ৩৩, ০, ১০, ২, ৭, ১৫, ০) কোনো ফিফটি নেই। সর্বোচ্চ ৪০।

একই অবস্থা মাহমুদুল হাসান জয়েরও। জয় অভিষেক টেস্টে পাকিস্তানের সাথে ০ আর ৬ রানে ফিরলেও ঠিক পরের টেস্টেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মুঙ্গানুইতে ২৯২ মিনিট ক্রিজে থেকে ২২৪ বলে ৭৮ রানের ইনিংস খেলেন। পরের ইনিংস ব্যাট করেননি।

ঠিক তার পরের টেস্ট ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দুর্দান্ত শতক (৪৪২ মিনিটে ৩২৬ বলে ১৩৭ রান) উপহার দিয়ে আলোচনায় আসেন জয়। কিন্তু তারপরের ১৩ টেস্টে আর সেঞ্চুরি নেই। শুধু ৩টি হাফসেঞ্চুরি সঙ্গী। আর শেষ ১৩ ইনিংসে (৮, ১৪, ২, ১২, ০, ২১, ২৪, ৩০,৪০, ১০,১১, ৫, ৬) একটি ফিফটিও নেই জয়ের।

তিন ওপেনারের এই বেহাল দশায় বাংলাদেশ দল বারবার শুরুতেই হোঁচট খাচ্ছে। কোনোকিছুতেই কিছু হচ্ছে না। একজনও যদি ফর্মে ফিরতে না পারেন, তবে সেই বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের দৈন্যদশাও সহসাই কাটবে না। তাই ওপেনারদের ফর্মে ফেরার বিকল্প নেই।

এআরবি/এমএমআর/এএসএম