টি-টোয়েন্টি ছেড়ে সৌম্যকে ওয়ানডে আর টেস্ট খেলার পরামর্শ আশরাফুলের
শুরু দেখে মনে হয়েছিল, সৌম্য সরকার হবেন বাংলাদেশের ‘মার্ক গ্রেট ব্যাচ’। পিঞ্চ হিটিংটা খুব ভালো পারতেন। পেস ও স্পিন বোলিংয়ের বিপক্ষে স্বচ্ছন্দ্যে খেলার ক্ষমতা ছিল। উইকেটের সামনে ও দুই দিকে বাহারি চটকদার এবং বিগ শট খেলার সমান দক্ষতাও দেখিয়েছেন।
পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার মত ধারালো বোলিং শক্তির বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম বছর (২০১৫-২০১৬) সৌম্যর আগ্রাসী আর আক্রমণাত্মক ব্যাটিং ও ম্যাচ জেতানো ইনিংস দেখে আশাবাদী হয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু কঠিন সত্য হলো, সৌম্যর ব্যাটের সেই ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে যায় সময়ের প্রবাহতার সাথে সাথে।
এবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে আহামরি কিছু করতে না পারলেও তিন খেলাতেই (৪৫ বলে ৩৩, ৪৯ বলে ৩৫ আর ২৪ বলে ২৩) সাবলীল ছিল সৌম্যর ব্যাট। ভালো শুরু করেছিলেন প্রতি ম্যাচেই। কিন্তু ২০ থেকে ৩০-এর ঘরে গিয়েই ছন্দপতন; এবং আউট হয়ে যাওয়া।
দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে প্রতিভাবান ব্যাটার ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলের বিশ্বাস, সৌম্য যদি মনোযোগ ও মনোসংযোগ বাড়াতে পারেন, তাহলে অন্তত ২ ফরম্যাটে জাতীয় দলের ওপেনিং দুর্বলতা কাটাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন।
জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপে সৌম্য সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে আশরাফুল বলে ওঠেন, ‘আমরা অতীতে দেখেছি। জানি সৌম্যর সে সামর্থ্য আছে। সে বড় রান করতে পারে। তার নিউজিল্যান্ডের মত দলের বিপক্ষে তাদের মাটিতে ১৬৮ রানের বড়সড় ইনিংস আছে। আমার মনে হয় সৌম্যর মনোযোগটা বাড়ানো দরকার। যদি সে তার মনোযোগ ও মনোসংযোগ বাড়াতে পারে, তাহলে অবশ্যই ভালো করতে পারে।’
টেস্ট ক্রিকেটের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ানের ধারণা, সৌম্য যদি রানে ফেরে সেটা হবে টিম বাংলাদেশের জন্য বিরাট প্লাস পয়েন্ট। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সৌম্যর ব্যাটিং দেখে আশরাফুলের মনে হয়েছে, সৌম্য সেট হয়ে যাতে আউট না হয়ে যায় এটা নিয়েই তার কাজ করতে হবে।
আশরাফুল বলেন, ‘সৌম্য তো আর ইয়াং না। ১০ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে ফেলেছে। অভিজ্ঞ ব্যাটার হিসেবে মাঠে সে তার রিটার্ন দিতে পারছে না। প্রতিবার সে সেট হচ্ছে আর আউটগুলো চোখে লাগছে।’
তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সৌম্যর ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ ভালো লেগেছে আশরাফুলের। তার মূল্যায়ন, ‘সৌম্য আফগানদের সাথে খানিক আনলাকি ছিল। তাকে আমি এনসিএলেও খেলতে দেখেছি এবার। আমার তাকে খুব কমফোর্টেবল মনে হয়েছে।’
আশরাফুল যোগ করেন, ‘শারজায় আফগানিস্তানের সাথে প্রথম ম্যাচে সে যে পুলটা করেছে, সেটা একটু ডানে বা বাঁয়ে গেলে চার হতো। আর একটু ভালো টাইমিং হলে হয়তো ছক্কা হতে পারতো। পরের ম্যাচে সে রিভিউ নিলে হয়তো বেঁচেও যেতে পারতো। তারপরও আর একটু মনোযোগ বাড়ানো দরকার।’
এদিকে সৌম্যকে ভালো মত খেয়াল করে একটি পরামর্শ দিয়েছেন আশরাফুল। তার মতে, আগামীতে সৌম্যর শুধু দুই ফরম্যাটে জাতীয় দলে খেলা উচিত।
আশরাফুলের কথা, ‘সৌম্যর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের চিন্তা বাদ দিয়ে ওয়ানডের পাশাপাশি টেস্টে জাতীয় দলে মনোযোগী হওয়া উচিত। আমরা ওপেনিংয়ে স্ট্রাগল করছি। সেখানে সৌম্য ১০ বছরের অভিজ্ঞ পারফরমার। যদি নিয়মিত পারফরম করে , তাহলে দলের জন্য কমপক্ষে ২ ফরম্যাট বিশেষ করে ওয়ানডে আর টেস্ট ম্যাচে আমরা সৌম্যকে চিন্তা করতেই পারি। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আমি মনে করি সৌম্যকে চিন্তা না করা উত্তম।’
‘সৌম্য দুই ফরম্যাটে ভালো খেলছে। সাম্প্রতিক সময়ে এনসিএলে ভালো খেলছে। তার প্রথম শ্রেণির রেকর্ডও ভালো। যেহেতু এখন ওয়ানডেতে ভাল করছে, আমার মনে হয় সৌম্যর নিজের টি-টোয়েন্টি নিয়ে চিন্তা না করা ভালো হবে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সবাই খেলতে চায়। না খেললেই সৌম্যর জন্য ভালো। সৌম্য যদি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে স্টেবল পারফরমার হতে চায়, নাম করতে চায় , তাহলে টি-টোয়োন্ট বাদ দিয়ে ওয়ানডে আর টেস্ট খেলায় মনোযোগ দেওয়া উচিত।’
এমএমআর/জেআইএম