মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরি মিস
আফগানদের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দিলো বাংলাদেশ
রীতিমত ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে ব্যাট করা শুরু করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সঙ্গী ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দু’জনের ব্যাটে উঠলো ১৪৫ রান। ৬৬ রান করে মিরাজ বিদায় নিলেও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ দাঁড়িয়েছিলেন সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু শেষ ওভারে কাঙ্খিত রান তুলতে পারলেন না তিনি। মাত্র ২ রানের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত হলেন রিয়াদ। ৯৮ রানে শেষ বলে রানআউট হলেন তিনি।
ক্যারিয়ারে ৫ম ওয়ানডে সেঞ্চুরি মিস করলেও বাংলাদেশ দলকে দারুণ এক লড়াকু ইনিংস উপহার দিয়েছেন বর্ষিয়ান এই ব্যাটার। তার ৯৮ রানের ওপর ভর করে আফগানিস্তানকে ২৪৫ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছে টাইগাররা।
ফাইনাল না হলেও আক্ষরিক অর্থে আজকের ম্যাচটা ‘ফাইনাল।’ আজ যে জিতবে সিরিজ তার। শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগের দুই ম্যাচে ১-১ সমতা। এমন সমীকরণের ম্যাচে টস জিতলেন প্রথমবার অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড পরা মেহেদী হাসান মিরাজ। টস জিতেই ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি।
দুই ওপেনার সৌম্য সরকার এবং তানজিদ হাসান তামিম মিলে উদ্বোধনী জুটিটা বেশ ভালোই করলেন। ৮.৩ ওভার পর্যন্ত খেলে স্কোরবোর্ডে যোগ করলেন ৫৩ রান।
কিন্তু এ পর্যায়ে এসে ভুলটা করে বসলেন সৌম্য সরকার। আগের দুই ম্যাচের মতোই ভালো খেলতে খেলতে অতি আত্মবিশ্বাসে ভুগতে শুরু করেছিলেন। যার ফলে আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের অফ স্ট্যাম্পের বাইরে থাকা বলকে ব্যাটের কানায় লাগিয়ে ভেতরে টেনে আনেন। ফল যা হওয়ার তাই হলো। বোল্ড হয়ে গেলেন।
২৩ বলে ২৪ রান করে আউট হলেন সৌম্য সরকার। মাঠে নামেন নাজমুল হোসেন শান্তর পরিবর্তে খেলা জাকির হাসান। কিন্তু কোনো জুটিই গড়ে উঠলো জাকির আর তামিমের। কারণ ১০ম ওভারের প্রথম বলেই মোহাম্মদ নবির সাজানো ফিল্ডিংয়ের ফাঁদে পড়ে উইকেট বিলিয়ে দিলেন তানজিদ তামিম।
মোহাম্মদ নবি কভার পয়েন্টে একটি ফিল্ডার রেখে এমনভাবে বলটা ডেলিভারি দিলেন এবং সে ডেলিভারিতে খেলতে বাধ্য করলেন তানজিদ হাসান তামিমকে। হাশমতউল্লাহ শহিদির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন তানজিদ তামিম। ২৯ বলে তিনি খেলেন ১৯ রানের ইনিংস।
মাঠে নামেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। জাকির হাসানের সঙ্গে জুটি গড়বেন কি, তার আগেই ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হলেন জাকির হাসান। মিরাজের কলে জাকির ননস্ট্রাইক প্রান্ত থেকে অনেকদূর দৌড়ে চলে যান।
কিন্তু মিরাজ যখন তাকে ফিরিয়ে দিলেন, তখন নিজের ক্রিজে গিয়ে পৌঁছাতে পারেননি। নানগেয়ালিয়া খারোতের সরাসরি থ্রোতে রানআউট হয়ে গেলেন। অর্থাৎ বিনা উইকেটে ৫৩ থেকে ৩ উইকেটে ৫৮ রান বাংলাদেশের।
এরপর উইকেট হারালেন তাওহিদ হৃদয়।মিরাজের সঙ্গে জুটি বাধা হলো না তার। ৭২রানের মাথায় রশিদ খানের বলে গুলবাদিন নাইবের বলে আউট হন হৃদয়।
৭২ রানে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ যখন গভীর সঙ্কটে, তখন দলের হাল ধরেন নতুন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ এবং অভিজ্ঞ ব্যাটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এ দু’জনের ব্যাটে এরই মধ্যে ১৪০ রানের বেশি জুটি গড়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, প্রথমে মাহমুদউল্লাহ এবং এরপর হাফ সেঞ্চুরি করলেন মেহেদী হাসান মিরাজও।
গত বছর অক্টোবরে ইডেন গার্ডেন্সে বিশ্বকাপে সর্বশেষ ফিফটি করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। এরপর আরও ৭টি ওয়ানডে খেলেছিলেন তিনি। কিন্তু সর্বোচ্চ ছিল ৩৭। অবশেষে ১৩ মাস পর এসে ফিফটির দেখা পেলেন তিনি। এমন এক সময়ে রিয়াদের ব্যাটে ফিফটি এলো, যখন দলের জন্য খুব প্রয়োজন ছিল। ৬৩ বলে ৪ বাউন্ডারি এবং ১ ছক্কায় ফিফটির মাইলফলকে পৌঁছান তিনি।
মেহেদী হাসান মিরাজের ফিফটি এলো অনেক বেশি বল খরচায়। ১০৬ বল খেলে মাত্র ২টি বাউন্ডারিতে ফিফটির দেখা পান তিনি। যদিও মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে তার জুটিটা ছিল সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ওয়ানডেতে ১৬ ম্যাচ পর, ১৭তম ম্যাচে এসে ফিফটির দেখা পেলেন মিরাজ। তিনিও ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর আফগানিস্তানের বিপক্ষেই হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন। যদিও এই সিরিজের আগে তার ব্যাটিং অর্ডার ছিল সাত কিংবা আট। এবার তিনি উঠে এসেছেন চার নম্বরে।
৭২ রান থেকে এ’দুজন মিলে ২১৫ রান পর্যন্ত টেনে নিয়ে যান মিরাজ এবং রিয়াদ। এ সময় ৬৬ রান করে আউট হন মেহেদী হাসান মিরাজ। ১১৯ বল খেলে ৬৬ রান করে আউট হন তিনি। এরপর মাঠে নামেন জাকের আলি। ১ রান করে আউট হন তিনি। নাসুম আহমেদ নেমে করেন ৫ রান। তিনি বোল্ড হন আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের বলে।
২ রান করে অপরাজিত থাকেন শরিফুল ইসলাম। শেষ মুহূর্তে সেঞ্চুরি মিস হয়ে গেলো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। আজমতউল্লাহ ওমরজাই নেন ৪ উইকেট। মোহাম্মদ নবি ও রশিদ খান নেন ১টি করে উইকেট। গজনফার ৭ ওভারে ৪৯ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি।
আইএইচএস/