‘২০০-এর আগে গুটিয়ে যাওয়া দলের’ তকমা পাচ্ছে বাংলাদেশ?
আপনি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে নিয়ে একটা বাজি ধরতেই পারেন। সেটা অন্ধের মতো ধরলেও সমস্যা নেই। বাজিতে হারবেন না। হারার সম্ভাবনা খুব কম। জেতার সম্ভাবনা ৯০ ভাগেরও বেশি।
কী সেই বাজি? তা হলো- দেশে কিংবা বিদেশে, যে দলের সঙ্গেই টেস্ট খেলা হোক, উইকেটের অবস্থা যেমনই হোক, শতভাগ ব্যাটিংবান্ধব পিচ হোক, তবুও বাংলাদেশ নেমেই মুখ থুবড়ে পড়বে।
যে পিচে প্রতিপক্ষ দল রানপাহাড় গড়ে, সেই উইকেটেও বাংলাদেশের ব্যাটাররা ভোগের চরম অস্বস্তিতে। শুরু থেকেই পিছনের পায়ে যেতে শুরু করেন। তাদের ইনিংস শুরুই হয় বিপর্যয় দিয়ে। তারপর দেড়শো রানের আশপাশে গিয়ে প্রথম ইনিংস শেষ।
বেশি দূর পিছনে তাকাতে হবে না। একটি ছোট পরিসংখ্যানেই বিষয়টা পরিষ্কার হবে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৭টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। এসব টেস্টের ১৪ ইনিংসের ১২টিতে নেমেই মুখ থুবড়ে পড়েছে বাংলাদেশ। যে দুই ইনিংসে ভালো খেলেছে সেগুলো হলো ৫৬৫ ও ২৬২ রানের। বাকি ইনিংসগুলোতে ১০০ থেকে ১৭০ রানের আশপাশে শেষ বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস।
ব্ছরের অষ্টম টেস্ট সবে শুরু হয়েছে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। এই পিচে গত প্রায় দুইদিন (আজকের শেষ ঘণ্টা ছাড়া) ব্যাট করে ৫৭৫ রানের হিমালয় সমান স্কোর গড়লো দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়াদের ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে উইকেট শতভাগ ব্যাটিং সহায়ক। একবারের জন্যও মনে হয়নি, পিচে বোলারদের জন্য কিছু আছে।
তিন প্রোটিয়া ব্যাটার টনি ডি জর্জি (১৭৭), ত্রিস্টান স্টাবস (১০৬), উইয়ান মুলদার (১০৫) সেঞ্চুরি করলেন ইচ্ছেমতো শট খেলে। আর দুইজন (ডেভিড বেডিংহাম, ৫৯ ও সেনুসান মুথুসামি অপরাজিত ৬৮) অর্ধশতক হাঁকালেন অবলীলায়।
প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার ৮ জন ব্যাটিং করেছেন। এরমধ্যে ৩ জন সেঞ্চুরিয়ান, দুইজন হাফ-সেঞ্চুরিয়ান। তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম ছাড়া কেউ এতটুকু প্রভাবও বিস্তার করতে পারেননি।
তাইজুল একাই ৫ উইকেট দখল করেন। তাও ৫২.২ ওভারে ১৯৮ রান দিয়ে। আর দ্রুত গতির বোলার নাহিদ রানার পকেটে জমা পড়েছে এক উইকেট। হাসান মাহমুদ, মেহেদী হাসান মিরাজরা শুন্য হাতেই থেকেছেন।
ঠিক সেই পিচে বুধবার পড়ন্ত বিকেলে ব্যাটিং শুরু করেই বিভীষিকাময় পরিস্থিতি বাংলাদেশ টপঅর্ডারদের। নামতে না নামতেই ৪ জন আউট। দিন শেষে স্কোর ৪ উইকেটে ৩৮। এখান থেকে নাজমুল হোসেন শান্তর দল কতদূর যায় সেটাই দেখার।
পরিসংখ্যানও আশা জাগাচ্ছে না। কারণ, টেস্টে প্রথম ইনিংসে বাজে খেলে উইকেট দিয়ে আসা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটারদের। ছোট্ট পরিসংখ্যানেই মিলবে তার প্রমাণ।
মার্চে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কা সিরিজ
• শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ১৮৮ রানে অলআউট।
• পরের ইনিংসেও একই অবস্থা; ১৮২ রানে অলআউট।
•দ্বিতীয় টেস্টে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার ৫৩১ রানের জবাবে ১৭৮ রানে অলআউট।
•লঙ্কানদের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩১৮ রান করেও ১৯২ রানে পরাজয়। কারণ, লঙ্কানরা ফলোঅন করায়নি।
আগস্টে পাকিস্তান সফর
• রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের করা ৪৪৮ রানের জবাবে বাংলাদেশ ৫৬৫ রান।
• দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকদের ২৭৪ রানের জবাবে শুরুতেই ২৬ রানে ৬ উইকেট নেই। হারিয়ে খাদের কিনারায় পরে যাওয়া। লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজের সপ্তম উইকেটে ১৬৫ রানের জুটিতে মোট ২৬২ রান।
সেপ্টেম্বরে ভারত সফর
• চেন্নাইতে প্রথম টেস্টে ভারতের ৩৭৬ রানের জবাবে ১৪৯ রানে অলআউট। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩৪ রান করেও ২৮০ রানে হার।
• কানপুরে দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসে ২৩৩ রান অলআউট। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৬ রানে গুটিয়ে ৭ উইকেটে হার।
ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ
• মিরপুর টেস্টে প্রথম ইনিংসে ১০৬ রানে অলআউট। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩০৭ করেও ৭ উইকেটে হার।
• চট্টগ্রাম টেস্টে প্রোটিয়াদের ৫৭৭ রানের জবাবে ৩৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চরম বিপাকে পড়া।
এআরবি/এমএইচ/জিকেএস