‘সাকিব’ হয়ে ওঠার পথে বাধা কী, জানালেন মিরাজ
ঠিক তুলনা বলা যায় না। তবে সাকিব আল হাসানের সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে মেহেদী হাসান মিরাজকেই ভাবা হয়। না ভাবার কারণই বা কী! বাংলাদেশে স্পিন অলরাউন্ডার বলতে এখন শুধু মিরাজই আছেন। এতকাল এ জায়গায় বোঝাতো শুধুই সাকিবকে। কিন্তু তিনি টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরে নিয়েছেন। টেস্ট থেকেও অবসরের ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন।
কাজেই টেস্টে সাকিবের বিকল্প খুঁজতেই হচ্ছে। টিম ম্যানেজমেন্ট বা অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত শুধু নন, গোটা বাংলাদেশ হন্যে হয়ে একজন স্পিন অলরাউন্ডার খুঁজছেন। যিনি সাকিবের মতো ব্যাটিং ও বোলিংয়ে সমান দক্ষ না হলেও অন্তত আবশ্যিক কাজ চালাতে পারেন।
এক সময় স্পিন অলরাউন্ডার হিসেবে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও নাসির হোসেন। মাহমুদউল্লাহ অস্তগামী সূর্য। তিনি টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন অনেক আগেই। অন্যদিকে নাসির নেতিবাচক ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে এখন মাঠের বাইরে। যে কারণে সাকিবের অভাব পূরণের চিন্তা এলেই মিরাজের নাম আসে সবার আগে।
ভারত সফরে থাকতেই সাকিব ঘোষণা দেন, শেরে বাংলায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলবেন। তখন থেকেই সাকিবের বিকল্প খোঁজা শুরু। এরপর যখন জানা গেল, সাকিব যখন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলতে পারবেন না। তখন সাকিবের অভাব একটু বেশিই অনুভূত হলো। আর সে জায়গায় মিরাজের নামই উচ্চারিত হয়েছে বেশি।
অনেকে মিরাজের মধ্যেই সাকিবের ছায়া খুঁজে বেড়াচ্ছেন। মিরাজের বোলিং সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন নেই। টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরুতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টে তিন বা তার বেশি উইকেট শিকারসহ ১৯ উইকেট দখল করে মিরাজ জানান দিয়েছেন তার সামর্থ্য।
এখনো মিরাজই দেশের এক নম্বর অফস্পিনার হিসেবে পরিগণিত। তবে ব্যাটিংয়ে সেভাবে জ্বলে ওঠেনি। তবে চলতি বছর মিরাজ নিজেকে মেলে ধরেছেন।
এ বছর ৭টি টেস্ট খেলে ৪৬১ রান করেছেন মিরাজ। সেঞ্চুরি নেই একটিও, তবে ফিফটি আছে ৪টি। সবগুলোই ‘বিগ ফিফটি (৮১*, ৭৭, ৭৮ ও ৯৭)। সবগুলো ইনিংসই ৭ থেকে আট নম্বরে নেমে (সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংস ছাড়া বাকি তিনটিই ৮ নম্বরে নেমে)।
মিরপুর টেস্টে মিরাজের মধ্যে অনেকেই আগামীর সাকিবকে খুঁজে পেয়েছেন। এত নিচে নেমেও মিরাজ চেষ্টা করেছেন দলকে কিছু দিতে। দল জেতাতে হয়তো পারেননি। তবে দলকে ইনিংস হারের লজ্জা থেকে বাঁচিয়ে ১০৫ রানের লিড এনে দিয়েছেন মিরাজই।
অনেকে সাকিবের সঙ্গে তুলনা করলেও তেমনটা মনে করেন না মিরাজ। সাকিবের সঙ্গে নিজের তুলনাও পছন্দ করেন না ডানহাতি অলরাউন্ডার। মিরাজের অভিমত, সাকিবকে অনেক বড় অলরাউন্ডার। দুই জনের জায়গা সম্পূর্ণ আলাদা।
মিরাজ বলেন, ‘সবাই সবসময় একটা কথা বলে যে, সাকিব ভাইয়ের জায়গায় আমি আসবো। একটা জিনিস দেখেন, সাকিব ভাই কিন্তু অনেক বড় কিছু অর্জন করেছেন বাংলাদেশের হয়ে। প্রায় ১৭ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন তিনি। একজন কিংবদন্তি ক্রিকেটার। আমারটা যদি দেখেন, ধারাবাহিক রান করা শুরু করেছি মাত্র এক-দুই বছর। সাকিব ভাই শুরু থেকেই রান করেছেন।’
প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গায় নিজেদের সেরাটা দেন। এখানে কারও সঙ্গে কারও তুলনা করতে চান না মিরাজ। ডানহাতি এই অলরাউন্ডার বলেন, ‘সাকিব ভাইয়ের জায়গায় সাকিব ভাই, আমি আমার জায়গায়। একজন ক্রিকেটারকে আরেকজনের সঙ্গে তুলনা না করাই শ্রেয়, আমার মনে হয়।
আমরা সবাই জানি, সাকিব ভাইয়ের অর্জন কতটা।
অবশ্য সাকিব হয়ে ওঠার পথে একটি বাধাও দেখছেন মিরাজ। ডানহাতি এই অলরাউন্ডার মনে করেন, সাকিব ব্যাটিং করতেন টপঅর্ডারে। আর তিনি ব্যাট করছেন সাত বা আট নম্বরে। এত নিচে ব্যাটিংয়ে নেমে তো সাকিবের মতো পারফর্ম করা সম্ভব নয়।
মিরাজ বলেন, আমি ব্যাটিং করি ৭-৮ নম্বরে। সাকিব ভাই সবসময় টপর্অডারে ব্যাটিং করেছেন। তো এটা একটা বাধা। আমার যখন সময় আসবে, অবশ্যই আমি চেষ্টা করবো দলের প্রয়োজনে ভালো করতে।’
এআরবি/এমএইচ/এমএস