বাংলাদেশের প্রধান কোচ হিসেবে যে অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চান সিমন্স
বাংলাদেশ তার জন্য নতুন নয়। খেলোয়াড়ী জীবনের শেষ দিকে ১৯৯৮ সালে ঢাকায় হওয়া আইসিসি নকআউট বিশ্বকাপ খেলেছেন ফিল সিমন্স। তিনি ছিলেন ওই আসরের রানার্সআপ ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিয়মিত একাদশের সদস্য।
এরপর বাংলাদেশে আরও একবার এসেছেন সাড়ে ৬ ফুটের ওপরে লম্বা ২৬ টেস্ট আর ১৪৩ ওয়ানডে খেলা ত্রিনিদাদের বিশাল বপুর অধিকারী সিমন্স। সেটা ২০০৮ সালে। সেবার তিনি এসেছিলেন আয়ারল্যান্ডের কোচ হয়ে। কিন্তু সে সফরটি সুখের ছিল না। ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে সিমন্সের কোচিংয়ে বাংলাদেশের কাছে নাস্তানাবুদ হয়েছিল আয়ারল্যান্ড।
এর ৯ বছর পর আবার বাংলাদেশে আসেন সিমন্স। বাংলাদেশের কোচ হওয়ার স্বপ্ন বুকে নিয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর ঢাকায় পা রেখেছিলেন এ ত্রিনিদাদিয়ান।
তখন হাথুরুসিংহে হেড কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়ালে বিসিবি কোচের জন্য বিজ্ঞাপন দেয়। তা দেখে বাংলাদেশের কোচ হতে চেয়ে স্ব-শরীরে ঢাকা এসেছিলেন সিমন্স। বিসিবিতে সিভি দেয়ার পাশাপাশি একটা ‘প্রেজেন্টেশনও’ দিয়েছিলেন সেবার। কিন্তু বিসিবি তাকে পছন্দ না করে কোচ হিসেবে বেছে নিয়েছিল ইংলিশ স্টিভ রোডসকে।
ঠিক দেড় বছর পর স্টিভ রোডসকে দায়িত্বচ্যুত করার পর আবার কোচের বিজ্ঞাপন দেয়া বিসিবি। তখনো এপ্লাই করেন সিমন্স। জুমে ইন্টারভিউও দেন; কিন্তু বিসিবি তাকে না নিয়ে বেছে নেয় হাথুরুসিংহেকে। অবশেষে এবার সেই হাথুরুর জায়গায়ই টাইগারদের হেড কোচ হলেন সিমন্স।
নিজ দেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছাড়া এতকাল দুটি দেশের হেড কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন সিমন্স। যার প্রথমটি জিম্বাবুয়ে আর পরেরটি আয়ারল্যান্ড।
১৯৯৭ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে পেশোয়ারে শেষ টেস্ট খেলেছেন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ইতি ঘটেছে ১৯৯৯’র বিশ্বকাপে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলোয়াড়ী জীবন শেষ করে ২০০২ সালের দিকে প্রথমে জিম্বাবুয়ের হারারে কেন্দ্রীক এক একাডেমির হয়ে প্রশিক্ষণ শুরু করেন ফিল সিমন্স।
এরপর ২০০৪ সালের মে মাসে জিম্বাবুয়ের প্রধান কোচ হয়ে টেস্ট খেলুড়ে দলের ক্যারিয়ার শুরু হয় ফিল সিমন্সের; কিন্তু শেষটা ভাল হয়নি। তার কোচিংয়ে বাংলাদেশ আর নিউজিল্যান্ডের কাছে হারের পর ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের হেড কোচ থেকে পদচ্যুত হন ফিল সিমন্স।
এরপর আয়ারল্যান্ডের প্রশিক্ষকের দায়িত্ব নেন এ ক্যারিবিয়ান। তারপর তিনি দায়িত্ব নেন নিজ দেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজেরও। তার কোচিংয়ে ২০১৬ সালে ভারতের মাটিতে টি-টোয়েন্টি আসরে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বরাবরের উদাসীন, ক্যারিয়ার অসচেতন ক্যারিবীয়দের এক সুঁতোয় গেঁথে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিশ্ব সেরার মুকুট পরিয়ে সিমন্সকে হেড কোচ করে সিমন্স সম্পৃক্ত হন আফগানিস্তানের। প্রথমে আফগানদের ব্যাটিং কোচ হওয়ার পর ২০১৭ সালে আফগানিস্তানের পুরোদস্তুর হেড কোচ হয়ে যান সিমন্স।
অবশেষে এবার বাংলাদেশের হেড কোচ সিমন্স। কেমন করবেন তিনি? বাংলাদেশের কোচ হিসেবে তিনি নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চান। বিশেষ করে আফগানদের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতাটাকে খুব গুরুত্ব দিতে চান সিমন্স।
তার বিশ্বাস, ‘কোচিং ক্যারিয়ারের পূর্ব অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের কোচ হিসেবে কাজ শুরু করার ক্ষেত্রেও বিশেষ সহায়ক উপাদান হিসেবে কাজ করবে। আমার দেশ ছাড়া আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের হেড কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে কাজ করতে সহায়ক হবে।’
এমনটা বলে সিমন্স জানান, ‘আফগানিস্তানের কোচ হিসেবে কাজ শুরু করতে গিয়ে প্রথমে ভাষা বিভ্রাট হয়েছে। সেটা একটা বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল। পরে তা অতিক্রম করেছি। আর আয়ারল্যান্ডে কাজ করতে হয়েছে একঝাঁক তরুণ ও নবীন ক্রিকেটারদের নিয়ে। যারা নিজেদের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে উন্নতি করতে চাচ্ছিলেন।
সিমন্স সেই দুটি অভিজ্ঞতাই কাজে লাগাতে চান। তার অনুভব ভুল নয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সাথেও ভিনদেশি বিশেষ করে ইংলিশ ভাষী কোচদের কাজ করতে ভাষাগত সমস্যা হয়। তিনি সেটা জানেন। তাই আফগানদের সাথে অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগাতে চান। একইভাবে টিম বাংলাদেশেও আছেন একঝাঁক তরুণ ও সম্ভাবনাময়ী ক্রিকেটার। তাদের গড়ে তুলতে তিনি আয়ারল্যান্ডের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চান।
এআরবি/আইএইচএস/