অন্যরা না পারলেও কীভাবে পেরেছেন লিটন-মিরাজ?
প্রথম ৬ জন মিলে করেছেন মোটে ২৬ রান। সাদমান (১০) ছাড়া জাকির (১), অধিনায়ক শান্ত (৪), মুমিনুল (১), মুশফিক (৩) ও সাকিবের (২) কেউ দু’অংকের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি। সেই খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে লিটন দাস (১৩৮) আর মেহেদি হাসান মিরাজ (৭৮) সপ্তম উইকেটে জীবনপণ লড়াই করে ১৬৫ রানের বিরাট জুটি গড়ে দলকে খেলায় ফিরিয়ে এনেছেন এবং তাদের হাত ধরে রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টেও জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ।
প্রথম ৬ জন যেখানেই দাঁড়াতে পারেননি। সেখানে লিটন আর মিরাজ সফল হলেন কিভাবে? তাদের ব্যাটিংয়ে কি যাদু ছিল? দেশ বরেণ্য ক্রিকেট বোদ্ধা, বিশ্লেষক ও বর্তমানে বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদিন ফাহিম আজ রোববার রাতে জাগো নিউজের সাথে আলাপে সেই ব্যাখ্যাই দিয়েছেন।
ফাহিম মনে করেন, ‘নিজের মত খেলার চেষ্টা না করে জুটি হিসেবে খেলার চিন্তা ও চেষ্টা ছিল লিটন-মিরাজের। নিজেরা কোন টার্গেট সেট করেনি ওরা। আমি অত করবো, সে চিন্তায় না গিয়ে পার্টনারশিপ গড়ে যত দীর্ঘ সময় উইকেটে থাকা যায়, সে চেষ্টাই করেছে তারা। তাতেই জুটি বড় হয়েছে।’
ফাহিমের ব্যাখ্যা, ‘শুরুতে অনেক উইকেট পড়ে গেছে , ছয় ছয়জন প্রতিষ্ঠিত ব্যাটার আউট হয়ে গেছেন। আর কোন উইকেট দেয়া যাবে না। তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। প্রথম দিকে তো মিরাজ আর লিটনের একটাই কাজ ছিল। ওদের প্রথম দিকে এ চিন্তা মাথায় নিয়েই খেলতে হয়েছে। একটা পর্যায়ে গিয়ে তাদের মনে হলো আমরা কিছু রান করতে পারি।’
‘আমি লিটন ও মিরাজের ব্যাটিং নিয়ে আলাদা করে বলার চেয়ে জুটির কথা বলবো। তারা একদম পার্টনারশিপ গড়ার লক্ষেই খেলেছে। তাদের গেম প্ল্যানই ছিল জুটি গড়ে যতদুর যাওয়া যায়, ততদুর যাব। দু’জন দু’জনকে কমপ্লিমেন্ট করলো। আমার মনে হয় না তারা স্কোর বোর্ডের দিকে তাকিয়ে খেলেছে। রান হচ্ছে, দু’জন মিলে রান করে পাকিস্তানের স্কোরের কতটা কাছাকাছি যাওয়া যায়, সে চিন্তায়ই খেলেছে দু’জন। শুরুতে হয়ত অত চিন্তা করেনি। কিন্তু একটা সময় তারা নিশ্চয়ই তারা চিন্তা করেছে যে, পাকিস্তানের রানও টপকে যাওয়া যাবে। এই মেন্টাল ডিসিপ্লিনটাই তাদের খেলার নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছে।’
লিটন ও মিরাজের ধৈর্য্য, মনোযোগ ও মনোসংযোগের প্রশংসা করে ফাহিম বলেন, ‘অনেক সময় খেলা কন্ট্রোল করার পরও একটা সময় আমরা অযথা ও অপ্রয়োজনীয় কিছু করতে গিয়ে উইকেট দিয়ে আসি। কিন্তু আজকে অনেকটা সময় লিটন ও মিরাজ তেমন কিছু করেনি।’
লিটন ও মিরাজ জুটির প্রশংসা করে বিসিবি পরিচালক ফাহিম বলেন, ‘এই পার্টনারশিপটা ছিল একদমই ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডের। পাকিস্তান বেশ ভাল দল। দেশের মাটিতে তারা বরাবর কঠিন প্রতিপক্ষ, তাদের সাথে এমন একটা পার্টনারশিপ, সত্যিই চোখ চেয়ে দেখার মত। ওখানে এত চাপের মুখে এমন খেলা, রীতিমত অভাবনীয়। এরপর হাসান মাহমুদের কথাও বলতে হবে। মিরাজ আউট হওয়ার পর লিটন দাসের সাথে নবম উইকেটেও কি অসাধারণ ব্যাটিং করেছে হাসান মাহমুদ। ওিই জুটিটাই শেষ পর্যন্ত আমাদের পাকিস্তানের খুব কাছে নিয়ে গেছে।’
ওদিকে পাকিস্তানের বোলাররাও একটা সময় হতোদ্যম হয়ে বাজে বোলিং করেছেন বলে মনে হয় ফাহিমের। তাই তার মুখে অমন কথা, ‘পাকিস্তানীদের জন্যও ২৬ রানে ৬ উইকেট ফেলে দেয়ার পর আর উইকেট ফেলতে না পারাটা ছিল রীতিমত হতোদ্যম ও হতাশায় নিমজ্জিত হওয়ার মত ব্যাপার এবং সত্যি কথা বলতে কি সেই হতোদ্যম ও হতাশায় পাকিস্তানী বোলাররা পরের দিকে খানিক এলোমেলো বলও করেছে। কিছু আলগা ডেলিভারিও ছুঁড়েছে। সেটার পুরো ফায়দা নিতে পেরেছি আমরা।’
এআরবি/আইএইচএস