‘আমার পরবর্তী স্বপ্ন বিশ্বকাপে আম্পায়ারিং করা’
বাংলাদেশের প্রথম নারী আম্পায়ার হিসেবে সাবেক ক্রিকেটার সাথিরা জাকির জেসি শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিতব্য নারী এশিয়া কাপে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছেন। ৮ দলের এই টুর্নামেন্ট শুরু হবে ১৯ জুলাই। শেষ হবে ২৮ জুলাই।
নারী এশিয়া কাপে আম্পায়ার হিসেবে সুযোগ পাওয়ার পর সাবেক ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার সাথিরা জাকির জেসি জাগোনিউজের সঙ্গে আলাপে জানিয়েছেন তার পরবর্তী স্বপ্নের কথা। জেসির সঙ্গে কথোপকথন তুলে ধরা হলো পাঠকদের উদ্দেশ্যে।
জাগোনিউজ: এশিয়া কাপ পরিচালনার জন্য শ্রীলঙ্কা যাচ্ছেন কবে?
সাথিরা জাকির জেসি: ১৭ তারিখ তারিখ যাবো শ্রীলঙ্কায়। ১৯ তারিখ টুর্নামেন্ট শুরু হবে। ১৮ তারিখ উদ্বোধনসহ কী কী আনুষ্ঠানিকতা আছে যেন। একদিন আগেই আমরা সেখানে গিয়ে পৌঁছাবো।
জাগোনিউজ: এশিয়া কাপে কয়টি ম্যাচ পরিচালনার সুযোগ পাবেন? কোনো সূচি কী পেয়েছেন? এর মধ্যে ফিল্ড আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন কয়টি ম্যাচে?
জেসি: ৭ থেকে ৮টি ম্যাচ পরিচালনার সুযোগ পাবো আশা করি। কারণ, সব মিলিয়ে ১৫টি ম্যাচ তো। ফাইনাল ছাড়া প্রতিদিন ২টি করে ম্যাচ। এ কারণে ৭টার বেশি ম্যাচ পাবো না। ফাইনাল পেলে ৮টা ম্যাচ হবে। এর মধ্যে ফিল্ড, টিভি বা ফোর্থ আম্পায়ার- সব দায়িত্বই পালন করবো হয়তো। ফিল্ড আম্পায়ার হিসেবে ৩/৪টা ম্যাচ পেতে পারি।
জাগোনিউজ: আম্পায়ারিং ডেভলপমেন্ট প্যানেলে তো আপনি সহ মোট ৫জন রয়েছেন। এর মধ্যে বহুজাতিক কোনো টুর্নামেন্টে কী এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো নারী আম্পায়ার দায়িত্ব পালন করবেন আপনি?
জেসি: এবারই প্রথম নয়, এরপর আগেও ২টি বহুজাতিক টুর্নামেন্টে দায়িত্ব পালন করেছি। ২০২৩ সালে হংকংয়ে অনুষ্ঠিত ইমার্জিং এশিয়া কাপ এবং কিছুদিন আগে মালয়েশিয়া এসিসি প্রিমিয়ার কাপে। বাংলাদেশের নারী আম্পায়ার হিসেবে আমিই প্রথম বহুজাতিক টুর্নামেন্টে দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পেয়েছি। আর এশিয়া কাপে তো প্রথমই বলতে হবে।
জাগোনিউজ: ডেভেলপমেন্ট প্যানেলের বাকি চারজনের অবস্থা কী?
জেসি: তারাও ভালো করছে। এবারের এশিয়া কাপে যদি আমি ভালো করতে পারি, আশা করি পরের টুর্নামেন্ট বা সিরিজগুলোতে তারাও সুযোগ পাবে।
জাগোনিউজ: এশিয়া কাপে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাওয়ার পর কী মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের নারীদের জন্য নতুন একটি দিক উন্মোচন হলো?
জেসি: তাতো অবশ্যই। এশিয়া কাপের মত একটি বড় টুর্নামেন্টে দায়িত্ব পালন করবো আম্পায়ার হিসেবে- এটা তো বাংলাদেশের নারীদের জন্য অনেক বড় একটি দিক। আমি আশা করি, আমার দেখাদেখি নারী আম্পায়ার হিসেবে এখন অনেকেই উঠে আসবে। অনেকেই ক্যারিয়ার গড়তে চাইবে। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দিয়ে এশিয়া কাপে আম্পায়ারিং শুরু করবো। এটা তো অবশ্যই বড় একটি পাওয়া। অবশ্যই নারীদের জন্য নতুন একটি দিকের উন্মোচন হতে যাচ্ছে এর মাধ্যমে।
জাগোনিউজ: ছিলেন ক্রিকেটার, এরপর ধারাভাষ্য। এরপর এলেন আম্পায়ারিংয়ে। এই যে একেকটা ধাপ অতিক্রম করলেন, কতটা কঠিন ছিল এই পথচলা?
জেসি: আম্পায়ারিংটা আসলেই কঠিন। ক্রিকেট তো খেলি সেই ছোটবেলা থেকে। ক্রিকেট ভালোবাসতাম। এরপর খেলা শুরু করেছি। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়েও খেলেছি। এরপর ধারাভাষ্য দিতাম। এগুলো আসলে আম্পায়ারিংয়ের চেয়ে বেশি কঠিন না। ধারাভাষ্য পার্ট টাইম। এতটা মনসংযোগ দিতে হয় না। কিন্তু আম্পায়ারিং অনেক কঠিন। এখানে আপনাকে পূর্ণ মনযোগ ধরে রাখতে হবে। অনেক স্টাডি করতে হবে, পরীক্ষা দিতে হবে। ম্যাচ পরিচালনার সময় পূর্ণ মনযোগ সহকারে প্রতিটি বল এবং প্রতিটিক্ষণ আপনাকে ধৈর্য্য ধরে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং সিদ্ধান্ত দিতে হবে।
জাগোনিউজ: অনেকেই হতে চান কোচ। আপনি আম্পায়ার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?
জেসি: কোচিংয়ের চেয়ে আম্পায়ার হওয়ার ইচ্ছাটাই ছিল আমার বেশি। সবচেয়ে বড় কথা ক্রিকেট ছেড়ে দিলেও আম্পায়ার হতে পারলে মাঠের মাঝখানে থাকা যায়। আমি চাই সব সময় মাঠের মাঝখানে থাকতে। একজন কোচ যখন কোনো একটি দলের দায়িত্ব পালন করেন, ম্যাচের আগ পর্যন্ত তার কাজ। ম্যাচের সময় পারফর্ম করার সুযোগ থাকে না তার। কিন্তু একজন আম্পায়ারের মাঠের মাঝে থেকে পারফর্ম করার সুযোগ থাকে।
দলের জয়-পরাজয়ে কোচদের আনন্দ-বেদনার সঙ্গী হতে হয়। কিন্তু আম্পায়ারকে তেমন কিছুর অনুভূতি নিতে হয় না। শুধু টাইট ম্যাচ হলে, শেষ ওভার বা শেষ বলের উত্তেজনা সামলাতে হয়। এটাও আবার মাঠের মাঝখানে থেকে উপভোগ করার মত বিষয়। মোট কথা, আমি মাঠের মাঝে থাকতে চাই সব সময়, এ কারণেই আম্পায়ার হওয়ার সিদ্ধান্ত।
জাগোনিউজ: আর কয়েক মাস পরেই তো (অক্টোবরে) বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে নারী বিশ্বকাপ। আপনার লক্ষ্য কী? বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে?
জেসি: আমার এখন বড় স্বপ্নই হলো বিশ্বকাপে আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা। এতদিন স্বপ্ন ছিল এশিয়া কাপে আম্পায়ারিং করবো। কারণ, বিশ্বকাপের পর এশিয়া কাপই সবচেয়ে বড় আসর। এই স্বপ্ন এখন পূরণ হতে যাচ্ছে। পরবর্তী স্বপ্ন বিশ্বকাপে আম্পায়ারিং করা। আশা করি, এশিয়া কাপে ভালো করতে পারবো এবং ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপেও আম্পায়ারিংয়ের সুযোগ পাবো।
জাগোনিউজ: নারীদের মধ্যে যারা আম্পায়ার হতে চান, তাদের জন্য আপনার বার্তা কী?
জেসি: যে সব নারীরা আম্পায়ার হতে চায়, তাদেরকে আমি সব সময় সহযোগিতা করতে চাই। আমিই তাদেরকে ডেকে ডেকে নিয়ে আসি। কিছুদিন আগেও প্রায় ২৫জন মেয়েকে নিয়ে আম্পায়ারিং কোর্স করিয়েছি। তাদেরকে গড়ে তুলতে চাই। তাহলে নারীদের ম্যাচগুলো সব নারী আম্পায়ার দিয়েই পরিচালনা করা যাবে। আর পুরুষ আম্পায়ারের প্রয়োজন হবে না।
যারা ক্রিকেট ছেড়ে আম্পায়ার হতে চায়, বা যাদের ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছা ছিল; কিন্তু হতে পারেনি, তারাও চাইলে আম্পায়ার হতে পারবে। এ জন্য শুধু ধৈর্য, সংকল্প এবং মনযোগ প্রয়োজন। যাদের ইচ্ছা আছে তাদেরকে আমি বলবো, তারা যেন এগিয়ে আসে এবং এই চ্যালেঞ্জিং ক্যারিয়ার গ্রহণ করে।
জাগোনিউজ:আপু, আপনাকে ধন্যবাদ।
জেসি: আপনাকেও এবং জাগোনিউজের পাঠকদেরও ধন্যবাদ।
আইএইচএস/