ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

খালেদ মাহমুদ সুজনের দাবি

‘টিম ম্যানেজমেন্টের ভুলেই হারতে হয়েছিল আফগানিস্তানের কাছে’

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশিত: ০৯:০৯ পিএম, ৩০ জুন ২০২৪

জাতীয় দলের বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টি পারফরম্যান্স ও ফল নিয়ে বিসিবির আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি এখনো। কারণ বোর্ড প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন কোন সংবাদ সম্মেলনে এসে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও প্রচার মাধ্যমের সাথে কথা বলেননি।

তবে বিসিবির সিনিয়র পরিচালক ও ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসের কথা শুনে মনে হচ্ছে, বিসিবি শান্ত বাহিনীর বিশ্বকাপ পারফরম্যান্সে পুরোপুরি তৃপ্ত ও সন্তুষ্ট না হলেও গ্রুপ পর্বে ৩ ম্যাচ জেতা ও সুপার এইটে ওঠায় কিছুটা সন্তুষ্টি তাদের মধ্যে কাজ করছে।

কিন্তু সুপার এইটের পারফরম্যান্স এবং শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের অ্যাপ্রোচ, লক্ষ্য ও পরিকল্পনা নিয়ে চাপা ক্ষোভ আছে অনেক পরিচালকেরই। ধারণা করা হচ্ছে, পরশু মঙ্গলবারের বোর্ড সভায় জাতীয় দলের পারফরম্যান্স ও ফল নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হবে।

অবশ্য জাতীয় দলের পরিচর্যা ও তত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসও গতকাল শনিবার ইঙ্গিত দিয়েছেন বিশ্বকাপের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা, পর্যালোচনা ও খুঁটিয়ে দেখা প্রয়োজন।

তবে অপর পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন সরাসরি কিছু টেকনিক্যাল ও ট্যাকটিক্যাল বিষয় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। আজ রোববার সন্ধ্যায় জাগো নিউজের সাথে আলাপে বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স ও ফল নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বিসিবি পরিচালক ও গেম ডেভোলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ সুজন আফগানিস্তানের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ট্যাকটিক্যাল ভুল-ত্রুটি এবং কিছু ভাইটাল সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেন।

তার দাবি, কোচ ও টিম ম্যানেজমেন্ট ভাইটাল ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে লক্ষ্য-পরিকল্পনা আঁটতে এবং কার্যকর কৌশল অবলম্বন করতে ব্যর্থ হয়েছে।

সুজন ঝাঁঝের সাথে বলেন, ‘আমাদের বিপক্ষে আফগানিস্তানের ডানহাতি ফাস্ট বোলার নাভিন-উল হক ৪ উইকেট দখল করেছেন। একটু ভালমতো লক্ষ্য করুন, ওই ম্যাচে নাভিন-উল হকের বলে আউট হয়েছেন আমাদের তিন বাঁ-হাতি প্রতিষ্ঠিত ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্ত, সৌম্য সরকার এবং সাকিব আল হাসান। এদের পর নাভিন উল হকের চতুর্থ শিকার ছিলেন মূলতঃ ফাস্ট বোলার তাসকিন আহমেদ। ডান হাতে বল ছুড়লেও তাসকিন ব্যাট করেন বাঁ-হাতে।’

মোটকথা চার বাঁ-হাতিকে আউট করেছেন নাভিন-উল হক। সুজনের দাবি, আমাদের টিম ম্যানেজমেন্টের কৌশলগত ভুলে নাভিন-উল হক ওই চার বাঁ-হাতি ব্যাটারকে আউট করার সুযোগ পেয়েছেন। সেটা কিভাবে?

তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন। তার সোজা ব্যাখ্যা, ‘অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওই ম্যাচে নাভিন-উল হক অসি ব্যাটিংয়ের দুই স্তম্ভ ও টপ অর্ডার বাঁ-হাতি ডেভিড ওয়ার্নার ও ট্রাভিস হেডকেও আউট করেছিলেন। তার মানে ওই ম্যাচেই বোঝা গেছে নাভিন-উল হক বাঁ-হাতিদের বিপক্ষে বেশী কার্যকর।’

‘অথচ আমরা আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে এক পর্যায়ে শান্ত, সৌম্য আর সাকিব তিন বাঁ-হাতিকে পরপর ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছি। আমাদের গেম প্ল্যানে এবং কৌশলে নাভিন-উল হকের বোলিং কার্যকরিতা কমানোর কোন পরিকল্পনাই ছিল না। কিচ্ছু না, তানজিদ তামিমের পর শান্ত, সৌম্য আর সাকিবকে পরপর না নামিয়ে তাওহিদ হৃদয় আর মাহমুদউল্লা রিয়াদকে পাঠালেই নাভিন-উল হকের বোলিং লাইন বদলাতে হতো। তাকে ভিন্ন কিছু করতে বাধ্য করা যেত। হয়ত তখন আর তার বলে অত ধার থাকতো না; কিন্তু আমরা সে পথে হাঁটিনি।’

সুজনের দাবি, শুধু নাভিন-উল হকের বোলিং কার্যকরিতা কমানোর লক্ষেই নয়, আমাদের জয়ের সম্ভাবনা বাড়াতেও লিটন দাসের সাথে তানজিদ তামিমসহ তিনে শান্ত, চারে সাকিব আর পাঁচ নম্বরে সৌম্যকে খেলানোও ছিল চরম ভুল। আর সেই ভুলে খেসারত হিসেবেই বাংলাদেশ ১২.১ ওভারে ১১৫ রানের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। পরে ম্যাচও জিততে পারেনি।

সুজনের সোজা সাপটা কথা, ‘আমরা জানি যে, আমাদের সামনে টার্গেট হলো ১২.১ ওভারে ১১৫ রান করতে হবে। তাহলেই আমরা সেমিফাইনাল খেলবো। তাহলে আমাদের ব্যাটিং অর্ডারটা সেভাবেই সাজানো উচিৎ ছিল। সেখানে লিটন, তানজিদ তামিমের পরে শান্ত আর তারপর ২ অফফর্ম সাকিব ও সৌম্যকে নামানো কোনভাবেই উচিৎ হয়নি। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ ছিল প্রথম ৬ ওভারে যে করেই হোক ৬০-এর ঘরে পৌঁছে যাওয়া এবং সে জায়গায় সবচেয়ে কার্যকর হতে পারতো তাওহিদ হৃদয়। তাকে ওয়ান ডাউন খেলালেই বেশি কার্যকর হতো। হৃদয় বেশি স্ট্রাইক পেলে আমাদের রানের গতি বাড়তো। আমরা পাওয়ার প্লে’তে এগিয়ে যেতে পারতাম।’

সুজন যোগ করেন, ‘সাকিব দলের এক নম্বর পারফরমার হলেও এবারের বিশ্বকাপের আগের ম্যাচগুলোয়ই প্রমাণ মিলেছে, সে চিরচেনা ও স্বাভাবিক ছন্দে নেই। আর সৌম্য নিজেকে হারিয়ে খুঁজছে। সেখানে সাকিব ও সৌম্যকে চার এবং পাঁচ নম্বরে খেলানোর অর্থ ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়া। কার্যত তাই হয়েছে। আমার মনে হয়, যেহেতু হৃদয় ও রিয়াদকে টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট ব্যাটার হিসেবে দলে নেয়া হয়েছে, তাদের দু’জনকেই যথাক্রমে ৩ ও ৪ নম্বরে খেলানো উচিৎ ছিল।’

‘তাহলে দল মোমেন্টাম পেত। ৬ ওভার শেষেই বাংলাদেশ হয়ত ষাটের ঘরে পৌঁছে যেতে পারতো। তারপরে শান্ত, সাকিবরা বাকিদের নিয়ে দল জেতাতে পারতেন; কিন্তু হৃদয় ও রিয়াদকে পরে নামানোর কারণেই তা আর হয়নি। বরং শান্ত ও সাকিব পরপর ২ বলে আউট হওয়ায় দল লক্ষ্য পূরণের পথে অনেক পিছিয়ে পড়ে। জয়ের সম্ভাবনাও যায় অনেক কমে।’

এআরবি/আইএইচএস