ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

এভাবেও কেউ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়!

ইমাম হোসাইন সোহেল | প্রকাশিত: ০১:০৪ এএম, ৩০ জুন ২০২৪

১৭৭ রানের লক্ষ্য। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে এই লক্ষ্য তাড়া করা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৭১ রান করে ভারত জিতেছিলো ৬৮ রানে। ১০৩ রানে অলআউট হয়েছিলো জস বাটলাররা।

দক্ষিণ আফ্রিকাও যদি এই ম্যাচে ১৭৭ রান তাড়া করতে গিয়ে ইংল্যান্ডের মত এমন কোনো ব্যবধানে হেরে যেতো, তবুও মানা যেতো। সবাই ধরে নিতো, ভারত অনেক বেশি ভালো খেলেছে, তাদের বোলাররা অনেক বেশি ভালো বোলিং করেছে- সুতরাং এমনটা হওয়ারই কথা ছিল।

১৭৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামার পর শুরুতে রিজা হেন্ডরিক্স এবং এইডেন মারক্রামের উইকেট হারিয়ে নামকাওয়াস্তে লড়াইয়ের ইঙ্গিতই দিয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা; কিন্তু কুইন্টন ডি কক আর হেনরিক ক্লাসেন মিলে সবার ধারণা পাল্টে দিলেন।

এ দু‘জন লড়াই করলেন। ভারতের বোলারদের বুঝিয়ে দিলেন অন্যসব ম্যাচের মত এই ম্যাচে এত সহজে তাদেরকে জিততে দেবেন না। ম্যাচের ভাগ্য বদল হয়ে গিয়েছিরো প্রায় ১৫তম ওভারে। অক্ষর প্যাটেলকে পিটিয়ে হেনরিক ক্লাসেন যখন ২৪ রান নিলেন। আগের ওভারের শেষ দুই বলে কুলদিপ যাদবের কাছ থেকে ১০ রান নেন ডেভিড মিলার।

৩৬ বলে ৫৪ রান দরকার ছিল ১৫তম ওভার করার আগে। এক ওভার পর বল আর রানের ব্যবধানটা দাঁড়ায় ৩০ বলে ৩০ রান। হাতে তখনও ৬টি উইকেট। ক্রিজে সেট ব্যাটার হেনরিক ক্লাসেন এবং ডেভিড মিলার।

এমন পরিস্থিতিতে কোনো দুর্বল দলও হয়তো ম্যাচ হারার চিন্তা করবে না। অন্তত দেড় থেকে দুই ওভার হাতে রেখে জয় তুলে নেবে।

কিন্তু না, পারলো না দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথমবার কোনো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে এবং শিরোপার এত কাছে এসেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারলো না। রোহিত শর্মার অসাধারণ অধিনায়কত্ব এবং হার্দিক পান্ডিয়ার বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং, দক্ষিণ আফ্রিকাকে থামিয়ে দিলো ৭ রান আগেই।

South africa

৭ রানে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টিতে ২য়বার চ্যাম্পিয়ন হলো ভারত। অধিনায়ক রোহিত শর্মার সঙ্গে দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করা হার্দিক পান্ডিয়ার কৃতিত্ব এক্ষেত্রে অনেক বেশি।

দক্ষিণ আফ্রিকা চিরকালই `চোকার্স‘। এবার সেই চোকার্স তকমা ঘোচানোর সুযোগ ছিল তাদের সামনে। কিন্তু তীরে এসে তরি ডোবানোর পুরনো অভ্যাস থেকে বের হতে পারলো না তারা। এত কাছে এসেও এভাবে হেরে যায় কেউ? হারতে পারে? দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের পুরো ক্রিকেট ইতিহাসে বার বার দেখিয়েছে, তারা পারে এভাবে হারতে।

প্রোটিয়াদের এই হারে মূল দায়টা কুইন্টন ডি কক, হেনরিক ক্লাসেন আর ডেভিড মিলারের। মাথা গরম না করে, ভারতীয়দের কৌশল যদি ধরতে পারতো তারা, তাহলে এভাবে হারতে হতো না।

১৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে আর্শদিপকে ফাইন লেগের ওপর দিয়ে বাউন্ডারি মারলেন ডি কক। ছক্কাও হতে পারতো। বাউন্ডারির ওপর গিয়ে বলটি পড়ে। বাউন্ডারি হলো। আত্মবিশ্বাস যেন বেড়ে গেলো ডি ককের মত সিনিয়র ব্যাটারের। যে কারণে হয়তো তিনি খেয়াল করেননি, ঠিক একই জায়গায় একজন ফিল্ডার দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন রোহিত শর্মা।

আর্শদি ঠিক একই জায়গায় বল ফেললেন, একই শট খেললেন ডি কক। সেখানে তখন দাঁড়ানো কুলদিপ যাদব। অনায়াসে বল তালুবন্দী করলেন তিনি। ডি কক যদি একটু সতর্ক হতেন, তাহলে এই বলে আউট হতেন না।

হেনরিক ক্লাসেনের ক্ষেত্রে প্রায় একই পদ্ধতি অবলম্বন করে ভারত অধিনায়ক রোহিত। তিনি লক্ষ্য করলেন অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলগুলো জায়গায় দাঁড়িয়ে অনায়াসে বাউন্ডারি বা ওভার বাউন্ডারির শট খেলছেন ক্লাসনে। পান্ডিয়াকে বিষয়টা দেখিয়ে দিলেন। পান্ডিয়া আরেকটু বাইরে বলটি রাখলেন, সঙ্গে মিশিয়ে দিলেন বুদ্ধির ঝলক। যা হওয়ার তাই হলো। ব্যাটকে চুমু দিয়ে গিয়ে বল জমা পড়লো রিশাভ পান্তের গ্লাভসে।

ক্লাসেনের আউট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রোটিয়াদের আশা যেন শেষ হয়ে গেলো। তবুও তাদের প্রত্যাশা ছিল, ডেভিড মিলার উইকেটে। একটা ওভার খেলে দিলে তারা চ্যাম্পিয়ন।

শেষ ওভারে ১৬ রান দরকার। মিলার স্ট্রাইকে। হার্দিক পান্ডিয়া প্রথম বলটাই ফুলটস দিয়ে মিলারকে প্রলুব্ধ করলেন শট খেলার। ওয়াইড লং অফে ছক্কা মাররা মত শট খেললেন মিলার। বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়িয়ে অসাধারণ দক্ষতায় ক্যাচ ধরেন সূর্যকুমার যাদব। প্রোটিয়াদরে আশা সেখানেই শেষ। মিলারের মত ব্যাটার এত জোরে শট খেলেও বলকে বাউন্ডারির বাইরে নিতে পারলেন না।

পরাজয়কে যখন নিজেরাই নিজেদের ললাটে লিখে নেয়, তখন অন্য কারো সাধ্য থাকে নাম, তাকে ভালো পথে নিয়ে আসার। প্রোটিয়ারা বারবার এমন গল্প লিখেই যায়। সেই গল্পের লেখাও শেষ হয় না কখনো। এবারও হলো না। আবার কবে এমন সুযোগ পাবে তারা?

আইএইচএস/