‘লেগি’ রশিদ খান যা পারলেন, ব্যাটার লিটন তা পারলেন না
সব হিসেব-নিকেশ পক্ষে চলে এসেছিল। শুধু আজ মঙ্গলবার ক্যারিবীয় দ্বীপ সেন্ট ভিনসেন্টের আরনোস ভ্যালিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১২.১ ওভারে ১১৬ রান করলেই সেমিফাইনালে পৌঁছে যেতো বাংলাদেশ।
কিন্তু সেই কাজটিও করতে পারলো না নাজমুল হোসেন শান্তর দল। শুরু দেখে মনে হলো, ৬৭ বলে ১১৬ রান করার জন্যই যাত্রা করেছে টাইগাররা। কিন্তু পাওয়ার প্লের ৬ ওভার না যেতেই বোঝা গেলো, সেমির লক্ষ্যে নয়, শেষ খেলায় আফগানদের হারিয়ে গা বাঁচানোর চেষ্টা।
শেষ পর্যন্ত তাও হলো না। ঘুরিয়ে বললে সেমিফাইনালে খেলার সমীকরণের বাস্তবরূপ দিতে না পারাই শুধু নয়, ১৯ ওভার ব্যাট করার সুযোগ পেয়েও লক্ষ্য ছুঁতে পারলো না শান্তর দল। দেখা গেলো, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যাটাররা যা পারেন না, লেগস্পিন গুগলি বোলার রশিদ খান ঠিকই তা পারেন।
ভাবছেন, আফগানিস্তান ম্যাচ জিতলো পেসার নাভিন উল হকের বারুদে বোলিংয়ে। তিনিই হলেন ম্যাচসেরা। সেখানে রশিদ খানের কথা আসছে কেন?
আসছে এই কারণে যে, আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যাচসেরা নাভিন হলেও আসলে আজকের ম্যাচে আফগানদের জয়ের রূপকার ও নায়ক অধিনায়ক রশিদ খান। বল হাতে ৪ উইকেট দখলের আগে শেষ ২ ওভারে রশিদ খান ১০ বলে ৩ ছক্কায় ১৯ রানের যে ক্যামিও ইনিংসটি খেলেছেন, কার্যত সেটাই ম্যাচ ভাগ্য গড়ে দিয়েছে।
১৭ ওভার শেষে আফগানদের স্কোর ছিল ৪ উইকেটে ৯৩ রান। ১৮ নম্বর ওভারের চার নম্বর ডেলিভারিতে তাসকিনের বলে ফিরে গেলেন মোহাম্মদ নবি। উইকেটে এসে দ্বিতীয় বলেই তাসকিনকে বিশাল এক ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে ১০০‘র দোরগোড়ায় পৌঁছে দেন রশিদ। কিন্তু ১৯ নম্বর ওভারে মোস্তাফিজের কাটার ও স্লোয়ারের মুখে টানা ৪ বল রান করতে পারলেন না আফগান অধিনায়ক।
অবশেষে তানজিম সাকিবের করা ইনিংসের শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে স্ট্রাইক মিললো। স্ট্রাইক পেয়েই তানজিম সাকিবকে পয়েন্টের ওপর দিয়ে বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে বসলেন রশিদ। আর ইনিংসের শেষ ডেলিভারিকে স্লগ করে ডিপ মিডউইকেটের ওপর দিয়ে হাঁকালেন এক বিশাল ছক্কা। বল গিয়ে আছড়ে পড়লো ৯৮ মিটার দূরে। আফগানরা পৌঁছে গেলো ১১৫ রানে।
ঠিক প্রায় একই পরিস্থিতিতে ছিলেন লিটন দাসও। কিন্তু রশিদের চেয়ে বেশি সময় উইকেটে থেকেও লিটন সেই দরকারি কাজটি পারেননি। শেষ ৩০ বলে ২২ দরকার ছিল বাংলাদেশের।
লিটন দাস তখন একপ্রান্তে ওয়েল সেট হয়ে অর্ধশতকের দোরগোড়ায় (৩৯ বলে ৪৬*)। কিন্তু অবাক করা সত্য হলো, সেখান থেকে লিটন শেষ ১০ বলে ৩ ছক্কা তো পরে, একটি ছক্কাও হাঁকাতে পারেননি।
রহস্যময় স্পিনার নুরের বলে একটি সোজা ব্যাটে বাউন্ডারি ছাড়া শেষ ৯ বলে আর ৪টি সিঙ্গেলস নিয়েছেন লিটন। শেষ দিকে তাসকিন তার সঙ্গী হওয়ার পরও নিজে ঝুঁকি নিয়ে হাত খুলে খেলার চেষ্টা ছিল না লিটনের।
১২ বলে ১৪ রান প্রয়োজন থাকা অবস্থায়ও নাভিন উল হকের বলে দুটি সিঙ্গেলস নিলেন লিটন। শেষ সিঙ্গেলসটি আসলো তিন নম্বর ডেলিভারিতে। আর সেটাই কাল হলো।
পরের ২ বলে প্রথমে তাসকিনকে বোল্ড আর পরের বলে মোস্তাফিজকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে আফগানদের ডিএল ম্যাথডে ৮ রানের অবিস্মরণীয় জয় উপহার দিলেন পেসার নাভিন উল হক। অন্যপ্রান্তে লিটন দাসের ৪৯ বলে ৫৪ রানের হার না মানা ইনিংসটি গেলো বিফলে।
সেট ব্যাটার হয়েও লিটন দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শট না খেলে সিঙ্গেলস নিয়ে তাসকিনকে কেন ছেড়ে দিলেন নাভিন উল হকের হাতে? প্রশ্নটা রয়েই গেলো।
অথচ নিজে স্ট্রাইকে থেকে লিটন একটু ঝুঁকি নিয়ে একটি ছক্কা হাঁকাতে পারলেই ম্যাচ জিতে যেতো বাংলাদেশ। কিন্তু তাসকিনকে স্ট্রাইক দেওয়ায় সেটি আর হয়নি। লোয়ার অর্ডার এই ব্যাটারকে বোল্ড করে দিলেন নাভিন। পরের বলে আউট মোস্তাফিজও। লিটন অন্যপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সেই সর্বনাশটা নিজের চোখেই দেখলেন।
ব্যাটার রশিদ হয়তো অনেক বড় কিছু করেননি। তার চেয়ে রশিদের ৪ ওভার বোলিংটাই ছিল চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশের ৪ ব্যাটারকে সাজঘরে ফিরিয়েছেন এই লেগস্পিনার।
কিন্তু লিটন যে পরিস্থিতিতে ছিলেন, তেমনই পরিস্থিতিতে থেকে রশিদ খান যেভাবে ১০ বলে ১৯ রানের ক্যামিও উপহার দিয়েছেন; বাংলাদেশের টপঅর্ডার একজন ব্যাটার কেন সেটি পারলেন না? আক্ষেপটা সেখানেই।
এআরবি/এমএমআর/এএসএম