ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

রং ছড়াতে শুরু করেছে বিশ্বকাপ

রফিকুল ইসলাম | প্রকাশিত: ০৬:৩৪ পিএম, ০৮ জুন ২০২৪

ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাট টি-টোয়েন্টি। এই ফরম্যাটের বিশ্বকাপের নবম আসর এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ১ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে স্বাগতিকদের জয়ে রাঙানো ম্যাচ দিয়ে বেজেছে বিশ্বকাপের দামামা। যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের প্রথম ম্যাচে হারিয়েছে প্রথমবারের মতো টি-২০ বিশ্বকাপে খেলতে আসা কানাডাকে।

এবারের বিশ্বকাপে যে তিনটি দেশ নতুন তাদের একটি কানাডা। অন্য দুটি উগান্ডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র খেলছে স্বাগতিক হিসেবে। কানাডা ও উগান্ডা জায়গা করে নিয়েছে বাছাই পর্ব টপকে। বিশ্বের সব অঞ্চলের প্রতিনিধিদের নিয়ে আয়োজিত এবারের বিশ্বকাপ পরিসরে আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। ১৭ বছর আগে ১২ দেশ নিয়ে শুরু হওয়া টি-২০ বিশ্বকাপের এবারের আসরে দেশ ২০টি। বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই বিশ্বকাপ হয়তো প্রতিদ্বন্দ্বিতায়ও ছাড়িয়ে যাবে আগের আসরগুলো।

বিশ্বকাপ বলতেই সবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে ফুটবল বিশ্বকাপের আনন্দ। যে বিশ্বকাপ নিয়ে মেতে থাকে গোটা বিশ্ব। সে তুলনায় ক্রিকেটের বিশ্বকাপ তো নস্যি। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ তো আরো কম।

তবে যে দেশগুলো বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে থাকে সেই দেশগুলোর মানুষের মধ্যে আনন্দ-উদযাপনের কমতি থাকে না। ফুটবল বিশ্বকাপে যেমন অংশ না নিলেও প্রতিটি দেশের মানুষ মেতে থাকে মাঠের লড়াই নিয়ে। ক্রিকেটের ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারী দেশের বাইরে সাড়া কমই ফেলে। তারপরও বিশ্বকাপ তো বিশ্বকাপই। যে বিশ্বকাপ ছড়ায় নানা রং। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে চলমান বিশ্বকাপ রং ছাড়াতে শুরুও করেছে।

সব খেলাই ঘিরে থাকে অনিশ্চয়তা। তবে এই ‘অনিশ্চয়তা’ শব্দটা বেশি লেগে আছে ক্রিকেটের সঙ্গে। তাই তো ক্রিকেটকে বলা হয় গৌরবময় অনিশ্চিয়তার খেলা। এই বিশ্বকাপের প্রথম সপ্তাহেই যা দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব।

সাবেক চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানকে হারিয়ে পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বকাপে বেশি রং তো ছড়াচ্ছে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রই। এই বিশ্বকাপের আগে টেস্ট পরিবারের দেশের বিপক্ষে খেলার তেমন অভিজ্ঞতাই ছিল না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। অথচ প্রথম সাক্ষাতেই তারা কুপোকাত করেছে বাংলাদেশকে। আর বিশ্বকাপমঞ্চে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে পেয়েছে পাকিস্তানের মতো দেশের বিপক্ষে স্মরণীয় জয়।

২০ জাতির মিলনমেলা বিশ্বকাপ। নানা বর্ণ, নানা ভাষাভাষী মানুষকে এই মঞ্চের নিচে হাজির করেছে বিশ্বকাপ। ব্যাট-বলের বিশ্বযুদ্ধ কেন্দ্র করে ভেন্যুর শহরগুলোয় এখন উৎসবের আমেজ।

খেলাধুলার বৈশ্বিক আসর এমনই। তারপর সেটা যদি হয় বিশ্বকাপের মতো প্রতিযোগিতা। আমেরিকা থেকে এশিয়া, এশিয়া থেকে ইউরোপ ও ইউরোপ থেকে আফ্রিকা কোথায় নেই এই বিশ্বকাপের উত্তাপ?

কি ফুটবল, কি ক্রিকেট কি হকি-মাঠে ১১ জন লড়লেও সেই লড়াইয়ে কাঁপে কোটি কোটি মানুষ। বিশ্বের একপ্রান্তে ফুটবলে গোল আর ক্রিকেটে ছক্কা হলে তোলপাড় শুরু জয় অন্যসব প্রান্তে। বিশ্বকাপ মানুষকে হাসায় মানুষকে কাঁদায়। সবচেয়ে বড় কথা মানুষকে আনন্দ দেয়। সেই আনন্দই দিয়ে যাচ্ছে মার্কিন মুল্লুকের বিশ্বকাপ।

এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কেমন করবে তা সময়ের জন্যই রেখে দেওয়া যায়। তবে এটা বলা যায়, বাংলাদেশ দল যখন দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে গেলো তখন মানুষের প্রত্যাশার বেলুন যতটা ফোলা ছিল তেমনটা এখন নেই। একটু চুপসে গেছে। আর তার কারণ কিন্তু এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই।

বিশ্বকাপ শুরুর আগে আমেরিকার কাছে সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে স্বাগতিকরা কম শক্তির দল নামানোয় বাংলাদেশ হোয়াইট ওয়াশের লজ্জা থেকে বেঁচেছে। অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচটি হয়নি বৃষ্টির কারণে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ২ ম্যাচ হারের পরই যে বাংলাদেশকে নিয়ে প্রত্যাশা কমেছে মানুষের তা ঠিক। বরং, নিজেদের প্রথম ম্যাচে আজ কষ্টে হলেও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে শুভ সূচনা করেছে বাংলাদেশ। তাতে প্রত্যাশার বেলুন আরও বেশি ফুলতে শুরু করেছে বাংলাদেশের সমর্থকদের। অন্যদিকে আজই আবার নিউজিল্যান্ডকে ৭৫ রানে অলআউট করে বিশ্বকাপের রঙ অনেকদূর ছড়িয়ে দিয়েছে আফগানিস্তান।

প্রত্যাশার চাপ কমা একটা সুবিধারও। ভালো কিছু করতে না পারলেও মানুষের কষ্ট কম লাগে। আর ভালো কিছু হয়ে গেলেতো কথায়ই নেই। তবে এটা সত্য যে বাংলাদেশ এখনো টি-টোয়েন্টির এর দল হয়ে উঠতে পারেনি। যদিও বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা সেটা মানতে চান না। তাদের ধারণা, বাংলাদেশ যে কোনো ভার্সনে, যে কোনো ফরম্যাটে অপ্রতিরোধ্য দল। ম্যাচের আগে গণমাধ্যমও মানুষের প্রত্যাশাকে উস্কে দেয়। মাঠে তার প্রফিলন ঘটে না। অনেকে মজা করে বলেন ’বাংলাদেশ প্রিভিউ এর দল।’

বিশ্বকাপটা টি-২০ বলেই সব দল সমান। আর খেলাটা ক্রিকেট বলেতো অবশ্যই। এই সূত্রে বাংলাদেশও এই বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট দল। বাকি ১৯ দলও সেই প্রত্যাশা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে। শেষ পর্যন্ত ফাইনালমঞ্চে কোন দুই দল উঠবে এবং শেষ পর্যন্ত কোন দল শেষ হাসি দেবে তা তো নির্ধারণ করে দেবে অনিশ্চয়তা শব্দটাই। পথ অনেক লম্বা। গ্রুপ পর্ব টপকে সুপার এইট। তারপর নকআউট পর্ব, মানে সেমিফাইনাল ও ফাইনাল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বিশ্বকাপে কোন দেশ চ্যাম্পিয়ন হবে তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে আরো।

২০০৭ সালে শুরু হওয়া টি-২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সুপার এইটে পেরেছে একবার। প্রথমবার দক্ষিণ আফ্রিকার সেই আসরই বাংলাদেশের জন্য সুখস্মৃতি হয়ে আছে। এর পর বাংলাদেশকে প্যাভেলিয়নে ফিরতে হয়েছে গ্রæপপর্ব থেকেই। ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে কি দুর্দান্ত শুরুটাই না করেছিল বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়াকে হেসেখেলে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করে বাংলাদেশ শেষ করেছিল হতাশা দিয়ে। সুপার টেনে উঠে বাংলাদেশ চার ম্যাচের একটিও জিততে পারেননি। সেই বিশ্বকাপ যতটাই রঙ ছড়াক, বাংলাদেশের জন্য ছিল একদম রঙহীন।

সুপার টেনে ওঠার পথে অস্ট্রেলিয়া ও নেপালকে হারালেও গ্রুপের শেষটা কিন্তু চরম হতাশায়ই ছিল বাংলাদেশের জন্য। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে গ্যালারিভর্তি দর্শকের সামনে ওই দিন হংকংয়ের কাছে ভেঙ্গে পড়েছিল বাংলাদেশ। গ্রুপের শুরুটা যেমন ছিল, শেষটা হয়েছিল তার উল্টো শেষটা। আর তারই নেতিবাচক প্রভাব ছিল সুপার টেনের ৪ ম্যাচে। গ্রুপ প্রতিপক্ষ ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া সবার কাছেই হেরেছিল বাংলাদেশ। পয়েন্ট টেবিলে সবার নিচে থকে ঘরের মাঠের বিশ^কাপ শেষ করেছিল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।

এভাবে বিশ্বকাপ আসে, বিশ্বকাপ যায়। প্রতিটি আসর আসরে বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা প্রত্যাশার বেলুন ফোলায়। কিন্তু কোনোবারই আশা পূরণ হয় না। শুরুর আগে সম্ভাবনার অনেক সমীকরণ বের করা হলেও টুর্নামেন্ট শেষে সামারি টানা হয় এভাবে ‘বাংলাদেশ তো টি-২০’র দল না।’ এই বিশ্বকাপ নিয়ে বাংলাদেশের যে প্রত্যাশা ছিল তা কিছুটা কমেছে। স্বয়ং অধিনায়কই প্রত্যাশার পারদ বশি ওঠাতে বারণ করেছেন। ক্রিকেট বিশ্লেষকরাও বলছেন সংক্ষিপ্ত ভার্সনের পরাশক্তি হতে হয়তো আরো অপেক্ষা করতে হবে।

বাংলাদেশ কবে টি-২০’র দল হয়ে উঠবে সেটাও সময় বলে দেবে। তাই বলে তো সংক্ষিপ্ত ভার্সনের এই ক্রিকেটের বিশ্বকাপ থেমে থাকবে না। ক্রিকেট নিজস্ব রং, জস আর অনিশ্চয়তার আভায় রাঙাবে প্রতিটি বিশ্বকাপ। সেই রঙ ছাড়ানো বিশ্বকাপ একেক আসরে একেক দলকে মাথায় তুলে দেবে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট।

ক্রিকেটে জাতীয় দল এখনো কোনো ট্রফি জিততে পারেনি। যা বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তদের আবেগের সঙ্গে যায় না। তারপরও সেটা মেনে নিয়ে তাকিয়ে থাকতে হবে আগামীর দিনের দিকে। এই বিশ^কাপ না হোক পরের বিশ্বকাপ। তা না হোক কোনো এক বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ট্রফি উঁচিয়ে ধরবে সেই প্রত্যাশায়ই বছরের পর পর বছর কাটিয়ে দিচ্ছেন ক্রিকেট ভক্তরা। ক্রিকেটের প্রকৃত রঙটা তখন ছড়াবে বাংলাদেশের ভক্তদের মনেও।

আরআই/আইএইচএস/