সৌম্যর বদলে যাওয়া রূপ পাল্টে দিলো ওপেনিংয়ের জীর্ণ দশা
শুক্রবার প্রায় গ্যালারি ভর্তি ভক্ত ও সমর্থকের সামনে শেষ ৪২ রানে ১০ উইকেট আর তারও পরে ২২ রানে শেষ ৮ উইকেট হারানোর পরও জিতেছে বাংলাদেশ। শেষ পরিণতি যাই হোক না কেন, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শুক্রবারের ম্যাচে বাংলাদেশের একটা বড় স্বস্তি আছে। প্রাপ্তিও আছে কিছু। তার সবটুকুই ওপেনিং জুটি কেন্দ্রিক।
বেশ কিছুদিন ধরে কাঁচ ভঙ্গুর হয়ে পড়া টাইগার ওপেনিং জুটি আজ জ্বলে উঠেছে। প্রথম উইকেটে রান ১০০ পেড়িয়ে (১১.২ ওভারে ১০১) গেছে। অন্যদিন যেখানে ৩৫ থেকে ৪২-৪৩ রানে এক বা ২ উইকেট পড়ে যায়, সেখানে শুক্রবার পাওয়ার প্লে’তে নিকট অতীত ও সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সর্বাধিক ৫৭ রান উঠেছে এবং দুই ওপেনার তানজিদ তামিম (৩৭ বলে ৫৭) আর সৌম্য সরকারের (৩৪ বলে ৪১) ব্যাটে রানের দেখা পাওয়া।
ফর্মের বাইরে থাকা লিটন দাসকে বাদ দিয়ে আজ একাদশে সৌম্য সরকার। আরেক বাঁহাতি তানজিদ তামিমের সঙ্গে সৌম্য সরকার এদিন ওপেন করতে নামেন এবং রান পেয়েছেন। শুরু দেখে মনে হচ্ছিল রান যা করার করবেন তানজিদ তামিম।
কারণ পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভার শেষে টিম বাংলাদেশের স্কোর ছিল বিনা উইকেটে ৫৭। যার ৮০ শতাংশ রান এসেছিল তানজিদ তামিমের ব্যাট থেকে। প্রথম ৬ ওভার শেষে তানজিদ তামিমের রান ছিল ২৮ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ৪০। আর সৌম্য সরকারের রান তখন ৯ বলে ৬। তারপর ধীরে ধীরে বেড়েছে সৌম্যর রান।
১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান কোনো উইকেট না হারিয়ে ৯০। তানজিদ তামিম পৌঁছে গেছেন পঞ্চাশের ঘরে (৩৬ বলে ৫২)। আর সৌম্যর স্কোর তখন তামিমের অর্ধেক (২৪ বলে ২৫ )।
শুরুতে কেন এত স্লো খেলা? এটা কি গেম প্ল্যান? নাকি তার নিজের লক্ষ্য-পরিকল্পনার অংশ? সৌম্য সরকারের কথা শুনে মনে হলো তিনি তাড়াহুড়ো না করে ইনিংসকে যতটা সম্ভব লম্বা করতে চেয়েছিলেন। খেলা শেষে রাতে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে এসে সৌম্যর ব্যাখ্যা, ‘আমি জোর করে রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করিনি। তানজিদ তামিম ভালো খেলছিল, তার শটগুলোর পারফেক্ট টাইমিং হচ্ছিল। রানের গতিও ছিল বেশ ভালো। আর সে স্ট্রাইকও পেয়েছে অনেক বেশি। আমি শুরুর দিকে স্ট্রাইক পেয়েছি অনেক কম এবং শুরুতে সেট হতে সময়ও লেগেছে বেশি। তারপরও কোনোরকম তাড়াহুড়ো করিনি। উইকেটে থেকেই রানের গতি বাড়ানোর চিন্তা ছিল মাথায়।’
সৌম্যকে যারা চেনেন, তাদের জানা এমন সব প্রেক্ষাপট ও দৃশ্যপটে সৌম্য তেড়েফুঁড়ে মারতে যান এবং ঝুঁকি নিয়ে খেলতে চেষ্টা করেন। তাতে বেশিরভাগ সময় তার ইনিংসের অপমৃত্যু ঘটে। আজ শুক্রবার তা হয়নি। সৌম্য অনেক দেরিতে ছন্দ ফিরে পান, শেষ পর্যন্ত ১২০.৫৮ স্ট্রাইক রেটে ৪১ রানের একটি কার্যকর ইনিংস খেলেন এবং সেটাই অবস্থা পাল্টে দিয়েছে। তার মানে জাতীয় দলের বাইরে থেকে নিজেকে খানিক পাল্টানোর চিন্তা ও চেষ্টা ছিল সৌম্যর। নিজের মন-মতলবি আর চিরায়ত ঢংয়ে নয়, পরিবেশ-পরিস্থিতি ঠাউরে খেলাই শেষ কথা। এ উপলব্ধিটা অন্তত এসেছে।
টিম পারফরমেন্স যেমনই হোক আর বাংলাদেশ যতই খুঁড়িয়ে জিতুক, সৌম্যর ওই এক ইনিংসে ওপেনিং জুটির জীর্ণ-শীর্ণ চেহারাটা অন্তত পাল্টেছে।
কিন্তু উদ্বোধনী জুটির অমন আশা জাগানিয়া ব্যাটিংয়ের পর ৪২ রানে ১০ উইকেট পতন কেন? কেনই বা শেষদিকে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়? সৌম্যর জবাব, ‘বল নতুন থাকতে ব্যাটে এসেছে চমৎকার গতিতে। বল পুরোনো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টাইমিং করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। বল ডাবল পেসে ব্যাটে আসছিল। পরের দিককার ব্যাটাররা তা ঠাউরে না উঠে তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে তাই চটজলদি আউট হয়েছে।’
এআরবি/ইএ