আশরাফুলের চোখে থুসরাকে খেলতে যে ভুল করেছেন শান্ত, হৃদয় এবং রিয়াদ
লঙ্কান পেসার নোয়ান থুসারার প্রচন্ড গতি আর দূরন্ত সুইংয়ের কাছে বেসামাল বাংলাদেশ টপ অর্ডার। নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মত ব্যাটার সাজঘরে ফিরেছেন কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই।
সামনে আসবেন, না পিছনের পায়ে খেলবেন, সোজা ব্যাটে মিড অফ, মিড অনে না পয়েন্টে-কভারের আশপাশে স্কোয়ার অফ দ্য উইকেটে? তা ঠাওরে ওঠার আগে থুসারার প্রথম ওভারের পরপর ৩ বলে আউট হয়েছেন শান্ত, হৃদয় এবং রিয়াদ।
১৭৬ রানের লক্ষ্য সামনে রেখে মাত্র ৪ নম্বর ওভারে পরপর ৩ বলে তিন-তিনজন নির্ভরযোগ্য ব্যাটারকে হারিয়ে সেই যে পিছনের পায়ে চলে গিয়েছিলো বাংলাদেশ- সেখান থেকে আর ফিরে আসা সম্ভব হয়নি।
পরে লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন এবং দ্রুত গতির বোলার তাসকিন শেষ দিকে প্রতিরোধ গড়ে তুললেও তাতে ফায়দা হয়নি। ব্যবধান কমেছে শুধু। সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচে লঙ্কানদের কাছে শেষ পর্যন্ত ২৮ রানে হেরে দেড় বছর পর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে প্রথম সিরিজ হারের তেতো স্বাদ নিতে হয়েছে টাইগারদের। সে সঙ্গে শ্রীলঙ্কাকে প্রথমবার সিরিজ হারানোর স্বপ্নটাও থাকলো অধরা।
সব বোদ্ধা, বিশেষজ্ঞর মত, থুসারার ধারালো বোলিংয়ের কাছেই আসলে হেরেছে শান্তর দল। কেন এ লঙ্কান ফাস্ট বোলারের বলের তোড় সামলাতে পারলো না টাইগাররা? সমস্যা কোথায় ছিল? তবে কি অধিনায়ক শান্ত, সময়ের অন্যতম সফল উইলোবাজ তাওহিদ হৃদয় আর অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের টেকনিকে কোন ত্রুটি, কমতি বা ঘাটতি ছিল? নাকি অ্যাপ্রেচা ও অ্যাপ্লিকেশনে কোন সমস্যা ছিল?
রোববর সন্ধ্যা থেকেই টাইগার ভক্ত-সমর্থকদের মনে সেই কৌতুহলি প্রশ্ন ঘুরাপক খাচ্ছে। জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সব সময়ের সেরা ব্যাটিং প্রতিভা জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও সময়ের অন্যতম ক্রিকেট বিশ্লেষক মোহাম্মদ আশরাফুল।
আজ রোববার পড়ন্ত বিকেলে জাগো নিউজের সাথে একান্ত আলাপে আশরাফুল ৯ মার্চের সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচের পোষ্ট মর্টেম করতে গিয়ে বলেন, ‘আসলে লাসিথ মালিঙ্গার মত এমন সাইড আর্ম অ্যাকশনের বোলার খুব বেশি খেলার অভিজ্ঞতা নেই আমাদের ব্যাটারদের। পাথিরানাও প্রায় অ্যাকশনে বল করে। তবে তার বল একটু বেশী লাফিয়ে ওঠে , তাই ব্যাটে আনা তুলনামুলক সহজ হয়েছে। কিন্তু নুয়ান থুসারার বল পিচ পড়ে তেমন বেশি ওঠে না। আমাদের টপ অর্ডারের ধারণা ছিল, পাথিরানার মতো থুসারার বলেও বাউন্স থাকবে বেশি; কিন্তু বাস্তবে হয়েছে উল্টো। বাউন্সতো থাকেইনি। বরং নিচু থেকেছে। আর তাতেই ঘটেছে বিপত্তি।’
এটা কি টেকনিকে কোনো সমস্যা? আশরাফুল সরাসরি হ্যাঁ বা না- কিছু না বলে বোঝানোর চেষ্টা করেন, ‘আমার মনে হয় না এটা খুব বড় টেকনিক্যাল সমস্যা। শান্ত, হৃদয় ও রিয়াদরা ভেবেছিল বল একটু উঠবে; কিন্তু ওঠেনি। বরং তাদের প্রত্যাশার চেয়ে খানিক নীচু থেকেছে।’
নতুন বলে যদি এমন প্রচন্ড গতির সাথে সুইং হয়, তাহলে উইকেটে গিয়ে ফেইস করা একটু কঠিন। তিনজনই ক্রিজে গিয়ে উইকেটসোজা এমন ভাল বলের মুখোমুখি হয়ে আউট হয়েছে। আসলে হঠাৎ ‘সারপ্রাইজ’ এক বোলার চলে আসায় শুরুতে তাকে রিড করা সম্ভব হয়নি।
কিন্তু পরের দিকে তাসকিন আর রিশাদ সেই থুসারাকেই ভাল খেলেছে। তার কারন কী? আশরাফুলের ব্যাখ্যা, ‘তখন বল পুরনো হয়ে গিয়েছিল। ঔজ্জ্বল্য কমার পাশাপাশি তখন বলের ধারও গিয়েছিল কমে।’
তাহলে শ্রীলঙ্কার এই সাইড আর্ম অ্যাকশনের ফাস্ট বোলার নুয়ান থুসারাকে সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে হলে করণীয় কি? তাও বাতলে দিয়েছেন আশরাফুল।
তার পরামর্শ, ‘থুসারা যে লাইন ও লেন্থে বল করে এবং তার বল যেভাবে একটু লেট সুইং করে, সেই ডেলিভারির বিপক্ষে শুধু মাথা নয়, পুরো শরীরটা একটু নিচু করে খেলতে হবে। বাউন্স আশা করেছে। তা হয়নি। অথচ সে ভাল বলও করেনি। এ ধরনের সাইড আর্ম অ্যাকশনের ফাস্ট বোলারদের খেলার একটা ভিন্ন টেকনিক আছে। লাসিথ মালিঙ্গাকে যখন আমি খেলতাম, তখন একটু ব্যান্ড হয়ে ব্যাট পেতে দিতাম। কারণ, এই ডেলিভারিগুলো পরে স্কিড করে। বাউন্স তেমন থাকে না। পাথিরানার বল স্কিডও করে আবার বাউন্সও করে। পাথিরানা লম্বা। তাই তার বল পড়ে একটু ওপরে ওঠে। আমাদের ব্যাটারদের শরীরের ওজনটা ওপরের দিকে ছিল বেশি। বডি ওয়েট একটু নিচে রাখতে পারলে খেলা যেত।’
তবে কি থুসারাকে নিয়ে কোন হোমওয়ার্ক ছিল না টিম বাংলাদেশের? আশরাফুলের ব্যাখ্যা, ‘না না, তা থাকবে না কেন। অবশ্যই ছিল।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হোম ওয়ার্ক না করে কি আর কেউ খেলে? তাহলে মূল সমস্যা কি ছিল? দেশসেরা ব্যাটিং প্রতিভার শেষ কথা, ‘আসলে উইকেটে গিয়ে বেশির ভাগ ব্যাটারেরই ফাস্ট বলে নার্ভ খুব ভাল কাজ করে না। অনেক সময় ফুটওয়ার্কও হয় না। তিনজনেরই তাই হয়েছিল।’
তারপরও আশরাফুলের ধারনা, অ্যাপ্লিকেশনটা যথাযথ হয়নি। তাই মুখে একথা, ‘আরেকটু বেটার অ্যাপ্লিকেশন করতে পারলে ভাল লাগতো।’
এআরবি/আইএইচএস/