ইতিহাস গড়া হলো না বাংলাদেশের, হারলো শেষ ম্যাচে
মেহেদী হাসান এবং শরিফুল ইসলামই যা ১১০ রানের পুঁজিকে রক্ষা করার জন্য লড়াই করলেন। অন্য বোলারদের আর কেউ নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি। অন্যদিকে সেই জিমি নিশামই শেষ মুহূর্তে ঝড় তুলেছিলেন। যদিও বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হয়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি আইন ডিএল মেথডে ১৭ রানে ম্যাচ জিতে নেয় স্বাগতিকরা।
১৪.৪ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ডের রান ছিল ৯৫। জিমি নিশাম এবং মিচেল সান্তনারের ব্যাটে জয়ের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিল নিউজিল্যান্ড। এমন সময়ই নামে বৃষ্টি। তুমুল বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। শেষে বৃষ্টি বন্ধ না হলে ম্যাচ রেফারি খেলা সেখানেই শেষ করে দেন। যতটুকু খেলা হয়েছে, তাতে ১৭ রান এগিয়ে ছিল নিউজিল্যান্ড।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদেরই হারিয়ে প্রথমবারের মতো সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়ার হাতছানি ছিল বাংলাদেশের সামনে। নেপিয়ারে প্রথম ম্যাচে স্বাগতিকদের উড়িয়ে দেওয়ার পর মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে ওভালে দ্বিতীয় ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায়। শেষ ম্যাচটি জিতলে ইতিহাস গড়া হতো। কিন্তু ডিএল মেথডে ১৭ রানে হারের কারণে আর ম্যাচ জেতা সম্ভব হলো না।
লড়াইয়ের পুঁজি ছিল মাত্র ১১০ রানের। যদিও মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে ওভাল যে বোলারদের স্বর্গ, তা বেশ ভালো করে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন মেহেদী-শরিফুলরা। ৪৯ রানেই কিউইদের ব্যাটিং শক্তির অর্ধেক সাজঘরে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তারা।
ভয়ঙ্কর হওয়ে ওঠা ফিন অ্যালেনকেও বোল্ড করেছেন শরিফুল ইসলাম। কিন্তু এরপরই জিমি নিশাম এবং মিচেল সান্তনার মিলে দ্রুত কিউইদের রান এগিয়ে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান। ২০ বলে ২৮ রানে নিশাম এবং সান্তনার ২০ বলে ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন।
ওপেনার ফিন অ্যালেন একপ্রান্ত ধরে কিছুক্ষণ ব্যাট না করলে হয়তো আরও বড় বিপর্যয়ে পড়তে পারতো নিউজিল্যান্ড। এমনকি জয়ের অবস্থা থাকতো বাংলাদেশেরও। সবচেয়ে বড়কথা চার ব্যাটারের সবাই যখন ১ রান করে ফিরে যান, তখন কিউইদের দুর্দশা বেশ ভালোভাবেই বোঝা যায়। মেহেদী এবং শরিফুল নিয়েছেন ২টি করে উইকেট। একজন হয়েছেন রানআউট।
১১১ রানের লক্ষ্যে নিউজিল্যান্ড ব্যাট করতে নামার পর নেপিয়ারের স্মৃতিই যেন ফিরিয়ে আনলেন শেখ মেহেদী হাসান। ওই ম্যাচেও শুরুতে কিউই ইনিংসে আঘাত হেনেছিলেন তিনি। এবারও বোলিং করতে এসে শুরুকেই ২ উইকেট তুলে নেন তিনি। ফেরালেন টিম সেইফার্ট এবং ড্যারিল মিচেলকে।
দ্বিতীয় ওভারেই দলীয় ১৬ রানের মাথায় স্ট্যাম্পিং হয়ে যান টিম সেইফার্ট। ১ রান করেন তিনি। এরপর দলীয় ২৬ রানের মাথায় আউট হয়ে যান ড্যারিল মিচেল। মেহেদীর বলে নাজমুল শান্তর হাতে ক্যাচ দেন তিনি। করেন ১ রান। এরপর কিউই শিবিরে আঘাত হানেন শরিফুল ইসলাম। তার দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে যান গ্লেন ফিলিপস। দলীয় ৩০ রানের মাথায় ৪ বলে তিনিও করেন ১ রান।
দলীয় ৩৮ রানের মাথায় মার্ক চাপম্যান রানআউট হয়ে যান। ৫ বলেও তিনিও করেন ১ রান। দলীয় ৪৯ রানের মাথায় ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা ফিন অ্যালনকে বোল্ড করেন শরিফুল ইসলাম। ৩১ বলে ৩৮ রান করেন তিনি। পরের ইতিহাস তো সবারই জানা।
এর আগে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাট করতে পাঠিয়ে সর্বোচ্চ ফায়দা লুটে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড বোলাররা। বাংলাদেশকে রানই করতে দেয়নি সঠিকভাবে। ১৯.২ ওভারে অলআউট করেছে ১১০ রানে।
নেপিয়ারে প্রথম ম্যাচ জিতে সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল নাজমুল হোসেন শান্তর দল। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে বৃষ্টির কারণে ম্যাচ শেষ করা যায়নি। পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হয়। আজ তৃতীয় ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই স্লো ব্যাটিং আর উইকেট হারানোর মিছিলে ছিল বাংলাদেশের ব্যাটাররা।
শুরুতেই টিম সাউদির বলে এলবিডব্লিউ হয়ে উইকেট পতনের সূচনা করেন সৌম্য সরকার। ৪ বলে ৪ রান করেন তিনি। রনি তালুকদার এলবিডব্লিউ হন বেন সিয়ার্সের বলে। ১০ বলে তিনি করেন ১০ রান।
নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়ছিলই। ৩১ রানে দ্বিতীয়, ৪১ রানে তৃতীয়, ৫৯ রানে তৃতীয়- এভাবে একের পর এক উইকেট পড়ছিলই। সর্বোচ্চ ১৭ রান করেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ১৬ রান আসে তাওহিদ হৃদয়ের ব্যাট থেকে। আফিফ হোসেন করেন ১৪ রান।
রিশাদ হোসেন ১০ রান করেন। এছাড়া লিটনের পরিবর্তে খেলা শামীম হোসনে পাটোয়ারী করেন মাত্র ৯ রান। শেখ মেহেদী ১৩ বলে করেন ৪ রান। শেষ পর্যন্ত ৪ বল বাকি থাকতেই ১১০ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। ৪ উইকেট নেন মিচেল সান্তনার, ২টি করে উইকেট নেন টিম সাউদি, অ্যাডাম মিলনে এবং বেন সিয়ার্স।
আইএইচএস/জেআইএম