ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

সত্যিই নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামকে ‘স্তব্ধ করে’ দিলেন কামিন্স

ইমাম হোসাইন সোহেল | প্রকাশিত: ১০:১১ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০২৩

২৯তম ওভারে প্যাট কামিন্সের তৃতীয় বলটি স্ট্যাম্পের উপরে হালকা বাউন্স হয়ে এসেছিলো। বিরাট কোহলি বাহু উঁচিয়ে ব্যাট দিয়ে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে গেলেন। এর আগে এই ম্যাচেই এমন অনেকবারই বলকে ডিফেন্স করেছেন তিনি। কিন্তু এবার বল পুরোপুরি তাকে ফাঁকি দিলো। ব্যাটের নিচের কানায় লেগে বল চলে গেলো স্ট্যাম্পে।

স্ট্যাম্পের বেল পড়ে গেলো, লাইট জ্বলে উঠলো। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন ধপ করে নিভে গেলো আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের ১ রাখ ৩০ দর্শকের পুরো গ্যালারি। অবিশ্বাসভরা চোখ দিয়ে খানিক্ষণ শূন্যে তাকিয়েছিলেন বিরাট কোহলিও।

৬৩ বলে তার ৫৪ রানের ইনিংসটির যবনিকাপাত ঘটলো ওই সময়। সে সঙ্গে নিভে গেলো যেন ভারতের সম্ভাবনার প্রদীপও। পুরোপুরি চুপ হয়ে গেলো ১ লাখ ৩০ হাজার দর্শক। প্যাট কামিন্স চুপ করিয়ে দিলেন তাদের।

বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচের আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের ১ লাখ ৩০ হাজার দর্শক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে প্যাট কামিন্স বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি, আপনাকে এটা সামলাতে হবে। নিশ্চিত করেই দর্শক থাকবে একপেশে। কিন্তু খেলায় তো এমন বিপুলসংখ্যক সমর্থকদের চুপ করিয়ে দেওয়ার চেয়ে সন্তুষ্টির আর কিছু হতে পারে না। আমাদের আগামীকালের লক্ষ্য এটাই।’

বিরাট কোহলিকে বোল্ড করে পুরো স্টেডিয়ামকে প্রথমে চুপ করিয়ে দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক। এরপর ম্যাচে ৬ উইকেটে হারিয়ে ৬ষ্ঠবারের মত বিশ্বকাপ জিতে পুরো ভারতকে স্তব্ধ করে দিলো অস্ট্রেলিয়া।

Cummins

মূলতঃ আকাশে উড়তে শিখলে মাটিতে নেমে আসার কৌশলও জানতে হয়। না হয় মোক্ষম সময়ে ঠিকই মাটিতে নেমে আসবে, কিন্তু সেটা স্বাভাবিকভাবে নয়, অস্বাভাবিকভাবে।

বিশ্বকাপে স্বাগতিক হিসেবে ভারত রীতিমত আকাশে উড়ছিলো। এই উড়তে থাকার পেছনে নানা মিথ জড়িয়ে গিয়েছিলো। বিতর্কের কালো রঙও লেপ্টে গিয়েছিলো; কিন্তু কেন যেন স্বাগতিক ভারত সে সব থোড়াই কেয়ার করতে থাকে। চারদিকে তাদেরকে নিয়ে যে সমালোচনার ঢেউ তৈরি হয়েছিলো, সে দিকে তাকানোর কোনো প্রয়োজনই মনে করেনি। কোনো এক সময় যে সেই ঢেউয়ে নিজেরা হারিয়ে যেতে পারে, সে সব ভাবেনি।

যে কারণে, ‘পিচ পরিবর্তন’ শীর্ষক বিতর্ক তৈরি হওয়ার পর ‘ভদ্রলোক’ হিসেবে পরিচিত সুনিল গাভাস্কার পর্যন্ত মন্তব্য করেছিলেন, ‘এবার গাধারা নিশ্চয় থামবে’। যে কোনো কিছু নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থাকবেই। কিন্তু স্রেফ অহংকার বশে সেই সমালোচকদের ‘গাধা’ বলে সম্বোধন করলেন গাভাস্কারের মত ব্যক্তিত্ব।

পুরো টুর্নামেন্টে অসম্ভব ডমিনেটিং মনোভাব, পারফরম্যান্স দিয়ে ভারত এগিয়ে এসেছিলো ফাইনালে। কিন্তু অনেকেই বলছিলেন, ভারতের একটি পরাজয় পাওনা এই টুর্নামেন্টে। সেটা গ্রুপ পর্বে হয়ে গেলেই ভালো। তাতে, ‘পা’টা অন্তত মাটিতে থাকতো ভারতীয়দের। ভক্ত-সমর্থকদের ভাবনা, সেই পরাজয়টা নকআউট পর্বে হলো তো সব শেষ। তখন আকাশ থেকে নেমে আসাটা স্বাভাবিক থাকবে না, অস্বাভাবিক হয়ে যাবে।

স্বাগতিক ভারতীয়রা হয়তো মনে মনে খুব প্রার্থনা করেছিলো, ফাইনালে যেন প্রতিপক্ষ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া না আসে। কারণ, আর যেই হোক, যে কোনোভাবে জয়টা নিশ্চিত করা যাবে। সেটা ‘আরেকটু বিতর্ক’ তৈরি করে হলেও। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া হলে যে সেই ‘বিতর্ক’ সৃষ্টি করাটাও কোনো কাজে দেবে না! ফাইনাল মানেই অস্ট্রেলিয়া কঠিন এক প্রতিপক্ষ। সেটা ভারতের নিজেদের ‘সাজানো বাগানে’র মধ্যে হলেও।

অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্স অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখালেন। প্রথমে টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে সবাইকে অবাক করে দিলেও তিনি যে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেটাই এখন প্রমাণিত।

নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে নীল জার্সির যে সয়লাব বয়ে গিয়েছিলো, তাকে পুরোপুরি স্তব্ধ করে দিয়ে বিশ্বকাপের শিরোপা জেতা চাট্টিখানি কথা নয়। ভারদের ‘দর্প চূর্ণ’ করে সে সাফল্যই চিনিয়ে নিলেন তারা।

আইএইচএস/