ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

হাসছে বাংলাদেশ, হাসছি আমরাও

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৪:৫৬ পিএম, ০৮ অক্টোবর ২০২৩
  • এন আই মিঠু, ধর্মশালা, হিমাচল প্রদেশ, ভারত থেকে

একটু পেছনের গল্প বলি। ২০১৬ সাল, বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টার’স এসোসিয়েশন (বিসিএসএ) এর ১৬ জনের একটি দল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম পর্বের খেলা দেখতে এসেছিলেন ভারতের এই হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালা স্টেডিয়ামে। মাঠের খেলার ফলাফল যাই হোক, তাদের মানালি ভ্রমণ এবং ধর্মশালা স্টেডিয়ামের সৌন্দর্যের গল্প শুনে আসছি বিগত বছরগুলোতে।

আমি এরইমধ্যে বিসিএসএ’র হয়ে ২০১৮ সালে শ্রীলংকায় নিদাহাস ট্রফি, ২০২১ সালে আরব আমিরাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০২২ সালে কলকাতায় দিবা-রাত্রির পিংক বল টেস্ট দেখে ফেলেছি; কিন্তু তাতে কি? চা-কফির কিংবা পারিবারিক আড্ডায় যখনই কোন ট্যুরের কথা আসে তখন সবার আগে ধর্মশালা ট্যুর। ব্যাপারটা এমন, আপনি চাঁদে ভ্রমণ করে এসেছেন কিন্তু ধর্মশালা স্টেডিয়ামে খেলা দেখেননি, তারমানে আপনার জীবনটাই বৃথা।

আজ যখন হোটেল থেকে দুইটা গাড়িতে করে পাহাড়ের উঁচু-নিচু রাস্তা অতিক্রম করে স্টেডিয়ামের গেট দিয়ে ঢুকে গ্যালারিতে গিয়ে বসি তখন সূর্য মামা প্রচন্ড মেজাজ নিয়ে আমাদের উপর চড়াও হয়েছে।

team Bangladesh

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৪৫৭ মিটার বা প্রায় ৪৭৯০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত পাহাড় ঘেরা এবং পাহাড়ের উপর সাদা মেঘের ভেলা যেন এই হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম! কী এক নান্দনিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই ক্রিকেট মাঠটি! যা দেখে সূর্যের তেজকে পাত্তা না দিয়ে আমাদের বিসিএসএ’র বিশজনের দল বাংলাদেশ! বাংলাদেশ!! স্লোগানে পুরো স্টেডিয়ামকে মুখরিত করে তুললাম। এই আনন্দকে আরো বাড়িয়ে দিলেন ইদানিং টস জেতাটাকে অভ্যাসে পরিণত করা অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।

আমি ব্যক্তিগতভাবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলা হলে খুব দুশ্চিন্তায় থাকি, কারণ আমাদের দলের মধ্যে আফগান জুজু কাজ করে, তারপর এই বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচটাই ওদের বিপক্ষে।

আমার ভয়টাকে সত্যি করে আফগানিস্তানের ওপেনারদের শুরুটা হলো দারুন। তাদের বিপজ্জনক ব্যাটার রহমানুল্লাহ গুরবাজ লং অনের ওপর দিয়ে যে ছক্কাটা মুস্তাফিজের বলে মারলেন, ভাইরে ভাই... বিপক্ষ দলের সমর্থক হয়ে মাঠে বসে এটা হজম করা খুব কঠিন ছিল।

মাঝে দুই উইকেট হারিয়ে আফগানিস্তানের স্কোর যখন শতরান পার হলো, তখন স্টেডিয়ামের গ্যালারি যেন পুরোটাই আফগান সমর্থকদের দখলে। এরই মাঝে হোয়াটসঅ্যাপে বাংলাদেশি এক নামকরা ক্রিকেটারের ফ্যানের মেসেজ, ‘খেলা দেখে আমার ঘুম আসতেছে, আফগানিস্তান ৩৪০ প্লাস রান করবে।’

সবকিছু কেন জানি মনে হচ্ছে বিপক্ষে চলে যাচ্ছে। এই খারাপ সময়ের মাঝেও কিপ্টে বোলিং করে যাচ্ছেন মিরাজ। এরপর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, দলীয় ১১২ রানে তৌহিদ হৃদয়ের কাছে ক্যাচ দিয়ে মিরাজের শিকার পরিণত হলেন হাশমত (হাশমতউল্লাহ শহিদি)।

team Bd

কিন্তু এরপরের চমকটা দেখালেন মোস্তাফিজ। দারুন একটা স্লোয়ারে পথের কাঁটা হয়ে থাকা রহমানউল্লাহ গুরবাজ সমানে ব্যাট চালিয়ে বল আকাশে তুলে দিলে, বাউন্ডারি লাইন থেকে অনেকটা দৌড়ে এসে অসাধারণ দক্ষতায় ক্যাচটা তালুবন্দী করেন তানজীদ তামিম।

পরের সময়টা শুধুই আমাদের। আফগানিস্তানকে কতো কম রানে অলআউট করা যায়, তা নিয়েই গ্যালারিতে আলোচনা। জসিম ভাই বললেন ১৭২ রান, শুভ বললো ২২০ রানের মধ্যে বলে সবার বকা খেলো। পরে তার বলা স্কোর শেষ পর্যন্ত ১৫০ রানের মধ্যে ঠিক হলো, ব্যাপারটা এমন যেন, আমরা যেটা বলবো সেই রানের মধ্যে অলআউট হবে আফগানিস্তান।

মাঠে বোলাররা চেপে ধরলো আফগানিস্তানকে। এমন সময় সবচেয়ে মজার একটি বিষয় ঘটলো। হঠাৎ আলমগীর মাতবর ভাইয় নতুন স্লোগান ধরলেন, ‘আফগানিস্তান..., আমরা সবাই বলি দেড়শো, দেড়শো... আফগানিস্তান।’ আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাত্র ৬ রান বেশি করে আফগানিস্তান অলআউট হয়ে গেলো ১৫৬ রানে। গ্যালারিতে আমাদের সেকি আনন্দ!

লক্ষ্য কঠিন না, কিন্তু মাত্র ১৯ রানে অহেতুক রানআউট তানজীদ তামিম, ২৭ রানে লিটন বাইরের বলকে ভেতরে টেনে নিয়ে প্লেইডঅন হওয়ায় কিছুটা ভয় কাজ করছিলো আমাদের মাঝে। ৩৮ রানের মাথায় জাদরান যদি মিরাজের ক্যাচটা ধরে ফেলতো তাহলে গল্পটা অন্য রকম হতে পারতো।

ক্যাচটা ফেলে দিয়ে মিরাজের এই দুর্দান্ত ইনিংস দেখার সুযোগ করে দেওয়ায় উনি একটা ধন্যবাদ পেতেই পারেন। মিরাজ-শান্ত’র ৯৭ রানের জুটি আফগানিস্তানকে ম্যাচ থেকে একেবারে ছিটকে দিলো। রহমত শাহের অসাধারণ ক্যাচের শিকার হয়ে মিরাজ যখন প্যাভিলিয়নের দিকে যাচ্ছিলো, তখন বিশ্বকাপে ৩৪ উইকেট আর ১১৪৬ রানের মালিক (সাকিব) ব্যাট হাতে উইকেটে আসছিলেন।

supporters

একই দলে দু’জন জেনুইন অলরাউন্ডার, সাকিব-মিরাজের মতো ক্রিকেটার থাকা যে কোন দেশের জন্য গর্বের ব্যাপার। এদিকে বিপক্ষ দলের রশিদ খান বেধড়ক মার খাওয়ায়, গ্যালারিতে নতুন শ্লোগান, রশিদ খান রশিদ খান... চিনি না জানি না, চিনি না জানি না..., রশিদ খান রশিদ খান।’

সাকিবের আউটের পরও শান্ত দেখে-শুনে ব্যাটিং করে, চার মেরে যখন বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়ছিলো, তখন গ্যালারিতে রিপন ভাইয়ের নাচ, শুভর নাচ, সাজু ভাই নাচতে না পারলেও বিশাল শরীর নিয়ে হাত পা ছোড়াছুড়ি, মিরাজ, সুমন, শাকিল, মিল্টন ভাই, কিরণ ভাই, সেলিম ভই, তুহিন ভাই, শোয়েব আলী, ক্রিকেটার মুশফিকের বাবা তারা আংকেল, এবারের বিশ্বকাপসহ ছয়টি বিশ্বকাপ সরাসরি মাঠ থেকে দেখা তানভীর ভাইসহ সবাই যে যার মতো করে জয় উদযাপন করছেন, হাসছেন।

বিশ্বকাপের আগে ক্রিকেট দলকে ঘিরে যে অস্বস্তিকর একটা পরিবেশ ছিলো, প্রথম ম্যাচেই আফগানিস্তানকে উড়িয়ে দিয়ে সেটির অবসান ঘটালো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।

সে সঙ্গে স্বস্তির সুবাতাস চারিদিকে, দেশে। হাসছে বাংলাদেশ, গ্যালারিতে হাসছি আমরাও।

আইএইচএস/