অবশ্যই সেমিফাইনাল খেলার সামর্থ্য আছে আমাদের: সুজন
খালেদ মাহমুদ সুজন বিশ্বকাপে রয়েছেন বাংলাদেশ দলের ডিরেক্টর হিসেবে। অর্থ্যাৎ ম্যানেজারের মূল কাজটা আঞ্জাম দিচ্ছেন তিনি। সে সঙ্গে টিম ম্যানেজমেন্টেও বড় দায়িত্ব পালন করছেন। ড্রেসিংরুমে বাংলাদেশ দলকে একতাবদ্ধ রেখে মাঠের সাফল্য বের করে আনার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা অপরিসীম।
বিশ্বকাপে দলকে নিয়ে ভারতের শহর থেকে শহরে ঘুরছেন। মাত্রই বিশ্বকাপ শুরু হলো। আরও অনেক লম্বা পথ বাকি। জয়দিয়ে শুরু করাটা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সেটা হলো আফগানিস্তানকে হারিয়ে। এবার বাংলাদেশের সামনে আরও বড় লক্ষ্য- সেমিফাইনাল। সাবেক অধিনায়ক এবং টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন মনে করেন, অবশ্যই বাংলাদেশ দলের সেমিফাইনালে খেলার সামর্থ্য আছে। জাগোনিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেছেন এর বিস্তারিত ব্যাখ্যাও।
জাগো নিউজ: টিম বাংলাদেশের কাছে আপনার প্রত্যাশা কি?
সুজন: আমি স্বপ্ন দেখি অনেকদুর যাওয়ার। আশা করি সেমিফাইনাল খেলার।
জাগো নিউজ: সত্যিই কি শেষ চারে খেলার সামর্থ্য আছে বাংলাদেশের?
সুজন: হ্যাঁ আছে। অবশ্যই আছে। কেন থাকবে না? সম্ভাব্য সেমিফাইনালিস্ট হিসেবে যাদের কথা ভাবা হচ্ছে, তাদের বিপক্ষে কি আমরা কখনো জিতিনি? জিতেছি। এদের মধ্যে কারো কারো বিপক্ষে সিরিজ বিজয়ের রেকর্ডও আছে আমাদের। কাজেই অতীতে যেহেতু পেরেছি এবার বিশ্বকাপেও পারবো। আমি আসলে এভাবেই চিন্তা করছি। আর তাই বলছি সেমিতে খেলার স্বপ্ন দেখাই যায়।
জাগো নিউজ: কিন্তু আপনার কি মনে হয়, সব কিছু মিলে এ দলটির শেষ চারে খেলার সামর্থ্য রাখে?
সুজন: হ্যাঁ রাখে। কোনরকম দ্বিধা সংকোচ ছাড়াই বলছি, আমাদের যে দলটি বিশ্বকাপ খেলছে, সেই দলের সেমিতে খেলার সামর্থ্য আছে।
জাগো নিউজ: আপনার মনে হয় কি ধরনের ক্রিকেট খেললে শেষ চারে পৌঁছানো সম্ভব?
সুজন: আমার মনে হয়, আমাদের সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে দিতে হবে। এক কথায় ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিং তিন শাখায় সামর্থ্যের শতভাগ নিংড়ে দিতে হবে। এবং আমাদের দল হিসেবে ভাল খেলতে হবে।
জাগো নিউজ: ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ের কোন জায়গার ওপর আপনি বেশি দৃষ্টি দিতে চান?
সুজন: অবশ্যই টপ অর্ডার ব্যাটিং। কাঙ্খিত লক্ষ্য পূরণের পূর্ব শর্তই হলো দল হিসেবে ভাল করা। একটা ইউনিট হয়ে খেলা। টিম পারফরমেন্স করা। আমি সবার আগে চাই ব্যাটিংটা ভাল হোক। টপ অর্ডাররা ভাল খেলুক। রান করুক। স্কোরবোর্ডটা মোটা তাজা থাকুক। বোলাররা লড়াকু পুঁজি পাক।
আর আমার মনে হয় টপ অর্ডার ভাল না খেললে সেই কাজটা করা কঠিন হবে। প্রথম কাজ হবে হবে আমাদের টপ অর্ডারের ভাল খেলা। তাই আমি চাই টপ অর্ডার ভাল খেলুক। লিটন দাস, তানজিদ তামিম ও শান্তর ব্যাট থেকে লম্বা ইনিংস বেরিয়ে আসা।
জাগো নিউজ: টপ অর্ডারের ভাল খেলা বলতে আপনি কি বোঝাতে চাইছেন?
সুজন: আমি জানি প্রতিদিন সবাই ভাল খেলবেন না। সবার পক্ষে সবদিন ভাল খেলা সম্ভবও না। তবে আমি খুব করে চাইবো আমাদের তিন টপ অর্ডার তানজিদ তামিম, লিটন ও নাজমুল শান্ত ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলুক। অন্তত একজনের ব্যাট থেকে সেঞ্চুরি বেরিয়ে আসুক।
জাগো নিউজ: কেন সেটা চাচ্ছেন, ওপরের দিকে একজন সেঞ্চুরি করতে পারলে স্কোর কত হতে পারে?
সুজন: দেখেন, ওপরের দিকের একজন ব্যাটার যদি সেঞ্চুরি করেন, তখন একদিক ওয়েলসেট থাকে। বাকিদের স্বচ্ছন্দে ভাল খেলা একটু হলেও সহজ হয়। স্কোরবোর্ডটাও লম্বা-চওড়া হয়। এ কারণে আমি বিশ্বাস করি, টপ অর্ডারের একজনকে দায়িত্ব নিয়ে প্রতি খেলায় দীর্ঘ ইনিংস খেলতে হবে। তাহলেই দেখবেন রান ৩০০ ছাড়িয়ে যাবে।
জাগো নিউজ: তবে কি আপনিও ৩০০ প্লাস রানকে বিশেষ মানদন্ড ধরছেন? মানে ৩০০ প্লাস থেকে সাড়ে তিনশো রানকে নিরাপদ ভাবতে চান?
সুজন: আমি তা বোঝাতে চাইনি। আমার কথা হলো উইকেট অনেক ভাল। এখানে সাড়ে তিনশো রানও উঠতে পারে। হয়ত উঠবেও। তাই আপনাকে ধরে নিতে হবে আমাদের ৩০০ প্লাস করতে হবে।
জাগো নিউজ: আপনার কি মনে হয় ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড আর পাকিস্তানের মত দলের বিপক্ষে ৩০০’র বেীশ রান করার ক্ষমতা আছে বাংলাদেশের?
সুজন: অবশ্যই আছে। আমি বিশ্বাস করি বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে বড় শক্তির বিপক্ষে ৩০০ করার সামর্থ্য আছে বাংলাদেশের।
জাগো নিউজ: সেটা কিভাবে?
সুজন: এইতো সেদিন শ্রীলঙ্কার কলম্বোয় ভারতের বিপক্ষে ২৬৫ রান করে জিতেছিলাম আমরা। ওই উইকেটে সেটা কম রান ছিল না মোটেও। বিশ্বকাপের উইকেট থাকবে সেই ম্যাচের উইকেটের চেয়ে অনেক ভাল, অনেক বেশি ব্যাটিং সহায়ক। ভারতের সাথে এশিয়া কাপে যে ব্যাটিংটা হয়েছিল, বিশ্বকাপে সেটা করতে পারলেই ৩০০ রান হয়ে যাবে।
জাগো নিউজ: এবার বোলিং নিয়ে কিছু বলেন?
সুজন: পেস বোলাররা ফর্মে আছে। আমি পেসারদের নিয়ে আশাবাদী। তারা ভাল করবে। স্পিনারদের নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। সাকিব, মিরাজ, নাসুম আর শেখ মাহদির গড়া স্পিন বোলিং বেশ সমৃদ্ধ। শক্তিশালী। তাদের ওপর আস্থা রাখাই যায়। আমাদের স্পিন বোলিংটা শুধু শক্তির জায়গাই নয়। আমাদের অনেক বড় অ্যাডভান্টেজও।
জাগো নিউজ: সেমির লক্ষ্যে আপনারা কি কোন বিশেষ ৫-৬টি দলকে টার্গেট করে এগুনোর কথা ভাবছেন?
সুজন: না, না। মোটেই তা না। আমরা কোন দলকেই টার্গেট করিনি। করবোও না। আমাদের প্রথম কাজ হবে প্রসেস ঠিক রেখে খেলা। আমরা জানি কার শক্তি কেমন? এটা মানতে দ্বিধা নেই অন্তত ৪/৫ টি দল আছে যারা কাগজে কলমে আমাদের চেয়ে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী।
কিন্তু শেষ চারে পা রাখতে হলে আপনার তাদেরও হারাতে হবে। তাই আপনি কোনো বিশেষ বা নির্দিষ্ট দলকে টার্গেট রেখে এগুতে পারবেন না।
জাগো নিউজ: তাহলে কিভাবে এগুতে চান আপনারা?
সুজন: দেখেন, সেমিফাইনাল খেলতে হলে যত বেশি সম্ভব ম্যাচ জিততে হবে। লক্ষ্য ও পরিকল্পনা থাকবে প্রতিটি ম্যাচ জেতার। আমরা জানি ৪ থেকে ৫টি দল কাগজে কলমে আমাদের চেয়ে বেটার। কিন্তু অভিষ্ট লক্ষ্য পূরণ করতে হলে সেই দলগুলোকেও হারাতে হবে।
প্রতিপক্ষ দল ও উইকেট বুঝে প্ল্যান করতে হবে। কার বিপক্ষে কোন উইকেটে কেমন কম্বিনেশন ও প্ল্যানিং প্রয়োজন, সেটা বুঝে ঠিক করতে হবে। আর মাঠে জায়গামত সেই পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নও দরকার। তবেই কাঙ্খিত লক্ষ্য পূরণ সম্ভব।
এআরবি/আইএইচএস