এক বছরেই উল্টো চিত্র: সেই জাদেজা আর এই জাদেজায় কত অমিল!
মোহিত শর্মার শেষ দুই বলে দরকার ১০ রান। স্ট্রাইকে রবিন্দ্র জাদেজা। আগের চার বলে একটিও বাউন্ডারি হজম না করা মোহিতের কাছ থেকে কী শেষ দুই বলে ১০ রান নিতে পারবেন ভারতীয় এই অলরাউন্ডার?
পুরো মোতেরা স্টেডিয়ামে তখন পিন-পতন নীরবতা। দুই দলের সমর্থকরাই চুপ। ম্যাচ পেন্ডুলামের মত দুলছে দুইদিকেই। কিন্তু স্ট্রাইকে যিনি, তার মধ্যে তৈরি হলো দারুণ এক দৃঢ়তা। যেভাবেই হোক, বলকে বাউন্ডারির বাইরে পাঠাতে হবেই। যে চিন্তা সে কাজ, পঞ্চম বলটা ওভার বাউন্ডারি। শেষ বলে মেরে দিলেন বাউন্ডারি।
কাঙ্খিত জয় নিশ্চিত হতেই ব্যাট নিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে দৌড়। মাঠে নেমে আসা সতীর্থরা চেষ্টা করলেন জাদেজাকে ধরতে। কিন্তু তিনি সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলেন সোজা ডাগআউটে দাঁড়ানো ধোনির কাছে। গিয়েই লাফ দিয়ে উঠলেন ধোনির কোলে। যেন এই জয়ের সব কৃতিত্ব একমাত্র ধোনির জন্যই রাখা। তাকে গিয়েই তাই আগে জানাতে হবে কৃতজ্ঞতা। ধোনিও শিশুর মত লাফিয়ে ওঠা জাদেজাকে আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরলেন। কয়েক মুহূর্ত কেটে যাওয়ার পর দু’জন বিচ্ছিন্ন হলেন।
For MSD #IPL2023 #IPLFinal #CSKvGT pic.twitter.com/OAbOwkhip5
— ESPNcricinfo (@ESPNcricinfo) May 29, 2023
অথচ ঠিক এক বছর আগে চিত্রটা ছিল ভিন্ন। এই জাদেজাকে অধিনায়ক বানিয়ে তার পারফরম্যান্স তো হারিয়ে দেয়া হয়েছিলোই, সঙ্গে হারিয়ে যেতে বসেছিলো চেন্নাই সুপার কিংসও।
মহেন্দ্র সিং ধোনি ইচ্ছা করেই চেন্নাই সুপার কিংসের নেতৃত্ব ছাড়লেন। উদ্দেশ্য নতুন নেতৃত্ব তুলে আনা। তিনি অবসরে চলে গেলে দলটিকে কে নেতৃত্ব দেবে? সে চিন্তা থেকেই রবিন্দ্র জাদেজার কাঁধে তুলে দেয়া হলো নেতৃত্বের গুরুভার।
জাতীয় দলের নিয়মিত ক্রিকেটার। পারফরমার হিসেবে অসাধারণ এবং দারুণ ধারাবাহিক। এমন এক ক্রিকেটারকে আগামীর নেতা হিসেবে গড়ে ওঠার অসাধারণ এক সুযোগ সৃষ্টি করে দিলেন ধোনি। মেনেজমেন্টও ধোনির এ বিষয়টা মেনে নিলেন।
কিন্তু আশ্চর্য, চ্যাম্পিয়ন দলটি নিমিষেই তলানীর দলে পরিণত হলো। ম্যাচের পর ম্যাচ পরাজয়। চেন্নাই সুপার কিংসকে ঠিক চেনা যাচ্ছিলো না। সবই ঠিক আছে, শুধু মাঠের পারফরম্যান্সটা হারিয়ে গেলো। জাদেজা নিজেও ছন্দহীন হয়ে গেলেন। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে নিজেই নেতৃত্বের আসন থেকে সরে দাঁড়ান জাদেজা। আবারও অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড পরে নিলেন ধোনি।
কিন্তু ততোদিনে যা ঘটার ঘটে গেছে। চেন্নাইকে বিদায় নিতে হয়েছে গ্রুপ পর্ব থেকেই। নেতৃত্বের ব্যাটন ছাড়ার পর ইনজুরিতেও পড়ে যান জাদেজা। যে কারণে আইপিএলের শেষাংশে আর তাকে মাঠেই দেখা যায়নি। অনেকেই বলেছিলো অপমানে, লজ্জায় হয়তো এবার চেন্নাইকেই গুডবাই জানিয়ে দেবেন তিনি।
কিন্তু ঠিক এক বছরের মাথায় সেই জাদেজার ব্যাটে ভর করেই পঞ্চমবারের মত শিরোপা ঘরে তুলে নিলো চেন্নাই সুপার কিংস। জাদেজার জন্ম গুজরাটেই। ঘরের মাঠেই বলা যায় তিনি চেন্নাইকে শিরোপা উপহার দিলেন।
চোট পেয়ে আইপিএলের মাঝপথে দল ছেড়ে যাওয়ার কারণে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। তাকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও শোনা যাচ্ছিলো নানা মহলে। এমনকি এ বছর জাদেজাকে চেন্নাই রাখবে কি না সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছিলো।
শেষ পর্যন্ত দেখা যায় তাকে ধরে রেখেই দল গড়েছে চেন্নাই। সে সঙ্গে ধোনির এবারের দলের অন্যতম ধারাবাহিক ক্রিকেটারও হলেন জাদেজা। এবারের আইপিএলে ১৬ ম্যাচে ২০টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। ব্যাট হাতে খুব বেশি রান না করলেও প্রয়োজনীয় সময় মূল কাজটি করে দিয়েছেন। ফাইনালেই যেমন ছয় বলে ১৫ রান করেন। কিন্তু শেষ দুই বলে ছক্কা এবং বাউন্ডারি মেরে দলকে জিতিয়ে দেন।
ম্যাচ শেষে জাদেজা এই জয় ধোনিকে উৎসর্গ করে বলেন, আমাদের দলের বিশেষ সদস্যের নাম, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। তাকে এ জয় উৎসর্গ করছি। যে মাঠেই খেলতে গেছি বিশাল সমর্থন পেয়েছি। সে সব সমর্থককেও ধন্যবাদ।’
নিজ শহরে ট্রফি জেতায় দারুণ আনন্দিত তিনি। জাদেজা বলেন, ‘নিজের শহরের সমর্থকদের সামনে দাঁড়িয়ে পঞ্চম শিরোপা জিততে পারাটা অবশ্যই আনন্দের, গর্বের। আমি গুজরাট থেকেই এসেছি। তাদের সামনে শিরোপা জিতেছি। যে কারণে বিশেষ অনুভূতি হচ্ছে আমার।’
আইএইচএস/