মায়ের অনুপ্রেরণায় ক্রিকেটার থেকে ধারাভাষ্যকার, এখন আম্পায়ার জেসি
‘ছোটবেলা থেকে আমার একটা স্বপ্নই ছিল ক্রিকেটার হবো, জাতীয় দলে খেলবো। স্বপ্ন পূরণও হয়েছে। যখন ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষের দিকে তখন আমি ধারাভাষ্য শুরু করি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ধারাভাষ্য করেছি। খেলা আমি একেবারে ছাড়বো যখন; তখন আমার মনে হয়েছে মাঠের মাঝখানে কিভাবে থাকা যায়! ক্রিকেটের যে উত্তেজনা, সেটা কিভাবে ধরে রাখা যায়! তখন আমার মনে হলো, আম্পায়ারিং সবচেয়ে ভালো জায়গা।’
আলাপচারিতায় এমনটিই বলছিলেন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটের সুপরিচিত মুখ সাথিরা জাকির জেসি। তিনি কথা বলছিলেন, মোশারফ হোসাইনের সঙ্গে।
আগামী ১২ থেকে ২১ জুন হংকংয়ে বসবে নারী ইমার্জিং এশিয়া কাপের আসর। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এই আসরে আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বাংলাদেশের সাথিরা জাকির জেসিও। এক সময় মাঠ দাপিয়ে বেড়ানো এই নারী ক্রিকেটার ধারাভাষ্যকার হিসেবেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এরপর মনোনিবেশ করেন আম্পায়ারিংয়ে। ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে; এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আম্পায়ার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু হবে তার।
ক্রিকেটের প্রতি ভালোলাগা কবে থেকে, কার খেলা আপনাকে অনুপ্রাণিত করতো? এমন প্রশ্নের জবাবে জেসি বলেন, ‘অনেক ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ভালোলাগা ও ভালোবাসা জন্মায়। মামা ও বড় ভাইদের সাথে ক্রিকেট খেলতাম। ছোটবেলা থেকে শচিন টেন্ডুলকারেরর খেলা দেখে বড় হয়েছি, তার খেলা ভালো লাগতো। তার একের পর এক সেঞ্চুরি আমাকে মুগ্ধ করতো। শচিনের বড় একটা পোস্টার আমার রুমে ছিল। শচিন, সৌরভ, আফ্রিদি- তাদের খেলা দেখেই ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছে জাগে।’
নারী হিসবে সমাজে সীমাবদ্ধতা থাকে, আপনি যখন ক্রিকেট খেলা শুরু করলেন তখন পরিবার ও আশপাশের মানুষ বিষয়টাকে কিভাবে নিয়েছিলো? এমন প্রশ্নের জবাবে জেসি বলেন, ‘আমি যখন অনেক ছোট, তখনই আশপাশের মানুষ অনেক কথা বলতো। তারা বলতো মেয়ে হয়ে সারা দিন ছেলেদের সাথে ক্রিকেট খেলে, ইত্যাদি ইত্যাদি।’
‘মেয়েরা চিরাচরিত যে খেলাগুলো খেলে, তাদের সাথে কখনো খেলা হয়নি। আমার যেটা সুবিধা ছিল, আম্মু আমাকে সেভাবেই বড় করেছে। সব ধরনের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করিয়েছে। আম্মু আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে, তিনি কখনোই না করেননি।’
জ্যোতি, জাহানারাদের খেলা দেখে মাঠের ক্রিকেট কতটা মিস করেন? এ প্রশ্নের জবাবে জেসি বলেন, ‘২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাথে আমি আছি। দলের সহ-অধিনায়ক ছিলাম। এশিয়া কাপ খেলেছি, এশিয়ান গেমস খেলেছি। বহু টুর্নামেন্ট খেলেছি। জাহানারা, জ্যোতিদের খেলা যখন দেখি তখন তো অবশ্যই খেলার মাঠ মিস করি।’
‘খুব বেশি মিস করি না যেহেতু প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচগুলো, ন্যাশনাল লিগ খেলছি। শুধুমাত্র জাতীয় দলের হয়ে খেলা হচ্ছে না। তাদের সাথে আমি এখনও ড্রেসিং রুম শেয়ার করছি। সামনে প্রিমিয়ার লিগ। এবারই হয়ত শেষবারের মতো ড্রেসিং রুম শেয়ার করা হবে, যেহেতু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আম্পায়ারিংয়ে ঢুকে গেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি জুনের ১০ তারিখে ইমাজিং এশিয়া কাপে আম্পায়ারিং করতে যাবো হংকং-এ। বাংলাদেশ থেকে প্রথম কোনো নারী হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আম্পায়ারিং করবো। আমার জন্য এটা বড় অর্জন। নারী ক্রিকেটের জন্যেও। মেয়েরা যে শুধু ক্রিকেটে আটকে থাকবে- এমন না। খেলার পরে কোচিং আছে। আম্পায়ারিং আছে। স্কোরিং আছে। ধারাভাষ্য আছে। বাংলাদেশি হিসেবে আমরা অনেক অনেক পিছিয়ে আছি। আমাকে দেখে অনেকেই হয়ত আগ্রহী হবে।’
আইএইচএস/