বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব করা চ্যালেঞ্জিং কাজ: সোহান
কাজী নুরুল হাসান সোহান নিজেকে সৌভাগ্যবান ভাবতেই পারেন। পারফরম্যান্সকে মানদণ্ড ধরলে তার চেয়ে এগিয়ে থাকা খেলোয়াড় আছেন আরও কয়েকজন। উইকেটরক্ষক সোহান সহজেই লেটার মার্কস পেলেও ব্যাটার সোহান কিন্তু সে তুলনায় অনেক কম পাবেন।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তার গড় মাত্র ১২.৯০, স্ট্রাইকরেটও আহামরি নয়। মাত্র ১১১.১৮ স্ট্রাইকরেটে ৩৩ ম্যাচে মোট সংগ্রহ ২৭১ রান, একটি ফিফটিও নেই, সর্বোচ্চ ৩৩। এর চেয়ে ঢের ভালো পারফরম্যান্স রয়েছে অন্তত তিন-চারজনের। তবে তারা কেউই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হননি।
আসন্ন জিম্বাবুয়ে সফরের টি-টোয়েন্টি সিরিজে সোহানের কাঁধেই অধিনায়কের গুরুদায়িত্ব দিয়েছে বিসিবি। এমন বড় দায়িত্ব পেয়ে কেমন লাগছে? কবে কখন জানলেন তিনিই জিম্বাবুয়ে সফরে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নেতৃত্ব দেবেন? শনিবার বিকেলে জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন সোহান।
তার ভাষায়, ‘অনেক ভালো লাগা ও সম্মানের দায়িত্ব। পাশাপাশি ব্যাপারটি চ্যালেঞ্জিং। আমি জানি বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব করাটা মোটেও সহজ কাজ নয়। আমি এ চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য নিজেকে মনের দিক থেকে তৈরি করছি। এ চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে আপ্রাণ চেষ্টা থাকবে।’
শুক্রবার বিকেলে যে বৈঠকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমকে বিশ্রামের সিদ্ধান্ত নিয়ে তার কাঁধে অধিনায়কের গুরুদায়িত্ব অর্পন করা হয়, তখনই ফোনে খবর পান সোহান, ‘সুজন ভাই ও নান্নু স্যার শুক্রবার বিকেলে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের কাছ থেকেই এ দায়িত্ব প্রাপ্তির কথা শুনেছি।’
সিনিয়র খেলোয়াড়দের অনুপস্থিতিতে একঝাঁক তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের নিয়ে খেলা কতটা কঠিন? এমন তিন সিনিয়রের অভাব মেটাবেন কী দিয়ে? কিভাবে সে ঘাটতি পেষানোর কথা ভাবছেন? সোহান মানছেন, তাদের অনুপস্থিতি অনেক বড় ঘাটতি। তবে তা নিয়ে বেশি ভাবলে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে দল পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া সোহান মনে করেন, আগামী দিনে দলকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে তার মতো তরুণদের সামনে এগিয়ে আসতে হবে। অগ্রজরা অনেক দূর এগিয়ে দিয়েছেন। সামনে হাঁটতে শিখিয়েছেন। এখন আসন্ন দিনগুলোয় দল আগাতে তরুণদেরই কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
তাই সোহানের মুখে এমন কথা, ‘দেখেন শুধু সাকিব, মুশফিক, রিয়াদ ভাই নন; মাশরাফি আর তামিম ভাইও আছেন। তারা বাংলাদেশের ক্রিকেটের অমূল্য সম্পদ, দলের জন্য তাদের অবদান অপরীসিম। তারা বাংলাদেশকে অনেক এগিয়ে নিয়েছেন।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘কিন্তু এটাও কঠিন সত্য যে, এখন এখান থেকে সামনে এগোতে হলে আমাদের মত তরুণদেরই এগিয়ে আসতে হবে। আমাদেরই কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। আমাদের মত তরুণদের ভূমিকা রাখতে হবে। আমি সেভাবে চিন্তা করছি। সাকিব, মুশফিক, রিয়াদ ভাইদের অনুপস্থিতি আমাদের নতুন কিছু করার একটা সুযোগ করে দিয়েছে।’
‘উনাদের অনুপস্থিতিতে আমরা পারবো না, দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে- এভাবে না ভেবে আমি বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখতে চাই। আমি ভাবছি কী করলে সামনে এগোনো যাবে। কিভাবে দলকে এগিয়ে নেওয়া যায়, দলের জন্য আমরা কী করতে পারি- আমার ভাবনা সেটা।’
অধিনায়ক হিসেবে আপনার প্রথম কাজ কী হবে? সোহানের উত্তর, ‘আমি প্রথমেই দলকে এক সুতোয় গেঁথে ফেলতে চাই। আমার লক্ষ্য থাকবে দল হিসেবে খেলার। আমরা যাতে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে অতিমাত্রায় নির্ভর না করে সবাই পারফরম করতে পারি, টিম পারফরম্যান্স যাতে হয়- সেটাই মূল লক্ষ্য আমার।’
‘সত্যি বলতে আমি একজন সাধারণ ক্রিকেটার হিসেবে যখন খেলি তখনও নিজের দায়িত্ব যথাযথ পালন করার চিন্তা মাথায় রেখে খেলি। পঞ্চাশ করবো, সেঞ্চুরি হাঁকাবো- এসব না ভেবে আমি দলের জন্য খেলবো, দলকে কার্যকর পারফরম্যান্স দেবো এবং সময়ের দাবি মেটাবো। সেটা যদি ৫ বলে ১০ রান লাগে তাই করবো। এটাই থাকে আমার লক্ষ্য।’
‘এখন অধিনায়ক হয়েও আমি আহামরি কিছু করার কথা ভাবছি না। আমার সামনে ম্যাচ কন্ডিশনে যখন যেটা করার সুযোগ আসবে, তখন যাতে সেটা সময়মতো ভালোভাবে করতে পাররি সেটাই প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য। আমার মনে হয় আমি যতো বেশি ভাববো, যত চিন্তা করবো, তত নেতিবাচক চিন্তা মাথায় আসবে। তাতে নেতিবাচক পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটার সম্ভাবনা বেশি।
‘তাই একদম চিন্তা মুক্ত থেকে নিজের দায়িত্বটা যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করতে চাই। পাশাপাশি দল যাতে প্রক্রিয়া মেনে খেলতে পারে, সে ভাবনাও আছে। রেজাল্ট কী হবে? হারবো না জিতবো?- অত সাত পাঁচ ভাবতে চাই না আমি। আমার চিন্তা পারফর্ম করা। নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের পাশাপাশি দল যাতে সামর্থ্যের সেরা দিতে পারে, যাতে টিম পারফরম্যান্স হয়- সে কাজটা বাস্তবে পরিণত করার কথা ভাবছি। এর বাইরে অন্য কিছু মাথায় আনতে চাই না।’
এআরবি/এসএএস/জিকেএস