সাকিবের মতো ক্রিকেটার হতে চাই : সাগর-রুনির ছেলে মেঘ
সাংবাদিক সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি যখন নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তখন তাদের একমাত্র ছেলে মাহির সারোয়ার মেঘের বয়স মাত্র সাড়ে ৫ বছর। এক এক করে ১০ বছর পার হয়েছে এই সাংবাদিক দম্পতি খুন হয়েছে। কিন্তু বিচার হয়নি আজও।
আগামীকাল (১১ ফেব্রুয়ারি) সাগর-রুনির দশম মৃত্যুবার্ষিকী। বাবা-মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীর কারণে মেঘ ক্রিকেট খেলা রেখে ঢাকায় ফিরেছেন সিরাজগঞ্জ থেকে।
তিনি পঞ্চগড় জেলার হয়ে খেলতে গিয়েছিলেন বিসিবির ইয়ুথ টাইগার অনূর্ধ্ব-১৬ জোনাল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। সেখানে তিনটি ম্যাচ ছিল। একটিতে খেলেছেন মেঘ। আরেকটি হবে শুক্রবার- যেদিন মেঘের বাবা-মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী। তাই ম্যাচটি না খেলেই ঢাকায় ফিরে এসেছেন মেঘ।
সাগর ও রুনি তাদের একমাত্র সন্তানকে কী ক্রিকেটার বানাতে চেয়েছিলেন? বাবা-মায়ের সে স্বপ্ন জানা নেই মেঘের। কারণ, তখন তিনি ক্রিকেট খেলাই তো শুরু করেননি। ‘আমাকে নিয়ে বাবা-মায়ের স্বপ্নের কথা আমি জানি না। কারণ, তখন আমি ক্রিকেট খেলা শুরু করিনি। এখন আমি মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি ক্রিকেটও খেলছি। আমার স্বপ্ন একদিন জাতীয় দলে খেলবো’- বলছিলেন সাগর-রুনির একমাত্র ছেলে মেঘ।
মেঘ অলরাউন্ডার। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি পেস বোলিং করেন। তবে বোলিংটা একটু বেশি পছন্দ করেন। তার আত্মবিশ্বাস অনেক। ‘আমি যদি টানা এক বছর অনুশীলন করতে পারি তাহলে অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলে তো খেলতে পারবোই। তারপর জাতীয় দলেও খেলতে পরাবো ইনশাল্লাহ’ - নিজের ইচ্ছার কথা এভাবেই বলছিলেন মেঘ।
মেঘ জাতীয় দলের হয়ে খেললেও তার প্রয়াত বাবা-মা কখনো দেখতে পারবেন না। তবে ছেলের বিশ্বাস ওপার থেকে ঠিকই তার বাবা-মা খেলা দেখবেন তার। ‘আমি যদি জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাই তাহলে বাবা-মা ওপার থেকেও অনেক খুশি হবেন। আমি তাদের খুশির জন্য জাতীয় দলে ক্রিকেট খেলতে চাই’- বলছিলেন মেঘ।
সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মর্তুজা ও মোস্তাফিজুর রহমান প্রিয় তারকা মেঘের। তাদের তিনজনের খেলাই ভালো লাগে। তাদের মতোই একদিন জাতীয় দলে খেলে দেশের জন্য অবদান রাখার স্বপ্ন নিয়েই মেঘ এখন ক্রিকেট শিখছেন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের একাডেমিতে।
মেঘের বিশেষ পছন্দের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। ছোট্ট সময় থেকে সাকিবের ভক্ত সে। যে কারণে, ২০১২ সালে একবার মেঘের পরিবার আয়োজিত একটি প্রদর্শনী চলাকালীন সাকিব স্ত্রী শিশিরকে নিয়ে গিয়েছিলেন মেঘের সঙ্গে দেখা করতে। সাগর-রুনির ছবি ও ব্যবহারের জিনিসপত্র নিয়ে প্রদর্শনী করেছিল তার পরিবার।
সাকিবকে নিয়ে মেঘ বলছিলেন, ‘আমি সাকিবের মতো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হতে চাই। আমি চাই সাকিব যেভাবে ক্রিকেট খেলে সুনাম অর্জন করেছেন এবং দেশের সুনাম বৃদ্ধি করেছেন সে রকম খেলতে। আমি সব সময় সাকিবের খেলা অনুসরণ করি।’
৫ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার মেঘের বয়স এখন সাড়ে ১৫ বছর। বিআইটিতে পড়াশোনা করছেন নবম শ্রেণীতে। লেখাপড়ার পাশাপাশি মেঘ ক্রিকেটকেও ধ্যান-জ্ঞান করেছেন। বড় ক্রিকেটার হয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করাই নিহত সাংবাদিক সাগর-রুনি দম্পতির ছেলে মেঘের।
শিশুকালে বাবা-মা হারানো মেঘ এখন তার মামা নওশের রোমানের হাত ধরেই খেলার মাঠে যান। ক্রিকেট খেলার ওপর মেঘের অনেক টান। তার সম্পর্কে মামা বলছিলেন, ‘ক্রিকেট নিয়ে মেঘের অনেক আগ্রহ। অনেক পরিশ্রমও করে। লেখাপড়ার বাইরে ক্রিকেট ছাড়া আর কিছু নিয়ে ভাবে না সে।’
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি নির্মমভাবে হত্যা করা হয় সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনিকে। দীর্ঘ ১০ বছরেও বিচার হয়নি এই হত্যাকাণ্ডের। এ নিয়ে সাংবাদিক সমাজের মধ্যে আছে প্রচণ্ড ক্ষোভ। সাংবাদিকরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করে আসছেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি তিনদিনের কর্মসূচি দিয়েছে, যা শুরু হবে আজ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি চত্বরে মোমবাতি প্রজ্বলনের মধ্যে দিয়ে। সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি দুজনই ছিলেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সদস্য।
আরআই/আইচএস/