ঝলক দেখিয়ে হারিয়ে যেতে চান না মৃত্যুঞ্জয়
বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে তার সতীর্থ শরিফুল ইসলাম, শামীম পাটোয়ারী কিংবা মাহমুদুল হাসান জয় খেলছেন জাতীয় দলে। তিন ফরম্যাটেই জাতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছেন শরিফুল, মাহমুদুল-শামীমরাও মোটামুটি নিয়মিত মুখ হয়ে গেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে।
কিন্তু এখনও নিজের জাত চেনানোর পর্যায়েই রয়ে গেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটের একই ব্যাচে থাকা পেস বোলিং অলরাউন্ডার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী নিপুণ। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটি থেকে যুব বিশ্বকাপ জিতে আসা বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন মৃত্যুঞ্জয়।
কিন্তু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গ্রুপপর্বে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচেই ইনজুরিতে পড়েন এ বাঁহাতি পেস বোলিং অলরাউন্ডার। যে কারণে আসরের বাকি অংশে আর মাঠে নামা হয়নি। সেই ইনজুরি কাটিয়ে মাঠে ফিরতে এক বছরেরও বেশি সময় লেগে যায় তার।
শেষমেশ টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ দিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে অভিষেক হয় ২০২১ সালে মে মাসে। একই বছর প্রথমবারের মতো খেলেন লঙ্গার ভার্শন ক্রিকেটে আর লিস্ট ‘এ’তে অভিষেকটা হয়েছে চলতি বিপিএল শুরুর আগে হওয়া ইন্ডিপেন্ডেন্টস কাপের মধ্য দিয়ে।
তার সমসাময়িক শামীম, শরিফুল, মাহমুদুলদের আন্তর্জাতিক অভিষেক ছাড়াও তানজিদ তামিম, পারভেজ ইমন, তৌহিদ হৃদয়রা এখন ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিচিত মুখ। কিন্তু ইনজুরির সঙ্গে লড়াইয়ের কারণে বেশ কিছু সময় হারিয়ে ফেলেছেন মৃত্যুঞ্জয়।
তবু কখনও হতাশ হননি সাতক্ষীরার এ তরুণ অলরাউন্ডার। বরং প্রক্রিয়া মেনে নিজেকে তৈরি করেছেন উপযুক্ত সময়ের জন্য। যার ফলটাও পেয়েছেন হাতেনাতে, বিপিএলে নিজের অভিষেক ম্যাচেই।
শনিবার সিলেট সানরাইজার্সের বিপক্ষে ম্যাচের ১৮তম ওভারে করেছেন হ্যাটট্রিক, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের জয়ের ফেরার ম্যাচে পেয়েছেন ম্যাচসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার।
বিপিএলের ইতিহাসে ষষ্ঠ, বিপিএলে বাংলাদেশিদের মধ্যে দ্বিতীয় এবং অভিষেকে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিকের পর নিজের ক্রিকেট ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন মৃত্যুঞ্জয়।
মাত্র ২০ বছর বয়সেই হ্যাটট্রিকবয় হওয়া মৃত্যুঞ্জয় বলেছেন, ‘আসলে এই মুহূর্তের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম বলা যায়। ঠিক হ্যাটট্রিকের আশা কখনও ছিল না। আমার শেষ দিকে পরিকল্পনা ছিল ইয়র্কারগুলো ভালোভাবে করা বা দলকে জয়ের পথে নিয়ে যাওয়া। যেহেতু এক্সিকিউশনটা খুব ভালো হয়েছে, ব্যাটারের জন্য খুব কঠিন ছিল বলগুলো হিট করা। এবং ভাগ্য সহায়তা করলো ও হ্যাটট্রিকটা পেয়ে গেলাম।’
মৃত্যুঞ্জয়ের আগে বিপিএলে অভিষেক ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করেছিলেন ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে খেলতে নামা ব্যতিক্রমধর্মী স্পিনার আলিস আল ইসলাম। কিন্তু এরপর আর তাকে কোথাও তেমনভাবে ভালো খেলতে দেখা যায়নি। শুধু আলিস নন, অনেক খেলোয়াড়ের বেলায়ই দেখা যায় এক ম্যাচ ভালো করলে পরের কয়েক ম্যাচে তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না।
নিজেকে সেই পথে রাখতে চান না মৃত্যুঞ্জয়। বরং প্রক্রিয়া মেনে সত্যিকারের খেলোয়াড়ের কাজটি করতে চান তিনি, ‘একদিন ভালো খেলে আবার দুইদিন খারাপ গেলে তাকে ভালো খেলোয়াড় বলে না। একটা প্রক্রিয়ায় থেকে প্রতিনিয়ত পারফরম্যান্স করাই একজন খেলোয়াড়ের কাজ এবং আমি সেটিই ধরে রাখতে চাই।’
কখনও হতাশ না হওয়ার রহস্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে আমি নিজের ওপর কখনও নিরাশ হই না। যদি আমার আজকের দিনটা ভালো নাও যেতো, আমার নিজের ওপর নিজের আত্মবিশ্বাসটা থাকতো। আজকের দিন ভালো গেছে, আমি যে পরিকল্পনায় ছিলাম, আমি চাই যেন ওই প্রসেসটা ধরে রাখতে পারি।’
এসময় এবারের আসরে নিজের লক্ষ্যের কথা জানাতে গিয়েও পরিণতবোধের পরিচয় দেন মৃত্যুঞ্জয়। আসরের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার উচ্চাশা প্রকাশের বদলে, নিজের ঘাটতিগুলো শুধরে নিয়ে নিজেকে আরও খাঁটি সোনায় পরিণত করার কথাই জানিয়েছেন তিনি।
মৃত্যুঞ্জয়ের ভাষ্য, ‘একজন খেলোয়াড়ের সবসময় লক্ষ্য থাকে একটা টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হওয়া। তবে আমার লক্ষ্যটা হচ্ছে, যেহেতু আমার এখন একটা শেখার সময় চলছে, আমার যেটা ভালো হচ্ছে সেগুলো নিয়েই করা এবং যেগুলোতে ঘাটতি আছে, সেগুলোতে এখানে যারা সিনিয়র খেলোয়াড় আছে, বিদেশি খেলোয়াড় আছে তাদের কাছ থেকে শেখা। কারণ সবাই কিন্তু একটা প্রসেসে থেকে শেখার চেষ্টা করে। তো আমি যেনো ঐ প্রসেসে ভালোভাবে থাকতে পারি তাই সবকিছু থেকে শেখার চেষ্টা করছি। ফলের থেকে নিজেকে তৈরি করার দিকেই ফোকাস করতে চাচ্ছি।’
এসএএস/এমএমআর/জেআইএম