ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে কেমন উইকেটে খেলবে বাংলাদেশ?

আরিফুর রহমান বাবু | প্রকাশিত: ০৯:২৭ পিএম, ১৭ নভেম্বর ২০২১

কেমন হবে বাংলাদেশ স্কোয়াড? বিশ্বকাপ খেলে আসা দলের ক’জন বাদ পড়বেন আর কজন নতুন করে ঢুকবেন? দ্বিতীয়ত, এবার কেমন উইকেটে খেলা হবে? এর মধ্যে দল নিয়ে সব প্রশ্ন, কৌতুহলের অবসান ঘটেছে।

এখন আরও একটি প্রশ্ন সবার মুখে মুখে। আবারো সেই ঠেলা গাড়ির গতি, হাঁটু আর কোমর সমান উচ্চতা এবং খানিক টার্নিং পিচই বেছে নেবে বাংলাদেশ? নাকি বিশ্বকাপের করুন ও তিক্ত পরিণতি থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার ব্যাটিং বান্ধব কিংবা স্পোর্টিং উইকেট বেছে নেবে বিসিবি?

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন উঠে আসছে। তাহলো, আসলে বিসিবি তথা বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট কী চাইলেই এমন উইকেট তৈরি করতে পারে? গামিনি ডি সিলভার পক্ষে কী বলে-কয়ে আবারো এমন কচ্ছপ গতির নিচু বাউন্সের উইকেট নির্মাণ সম্ভব?

ক্রিকেট বোদ্ধা, বিশ্লেষক, প্রশিক্ষক ও টেকনিক্যাল উপদেষ্টা নাজমুল আবেদিন ফাহিমের ধারণা, যে যাই ভাবুন আর বলুন না কেন, আসলে বলে-কয়ে অতটা স্লথ গতির, নিচু বাউন্সি আর খানিক টার্নিং উইকেট তৈরি করা সম্ভব নয়।

ফাহিমের ব্যাখ্যা ছিল যে, আসলে বৃষ্টির কারণে আগস্ট-সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবরে পিচ যথাযথভাবে তৈরি করা কঠিন। কারণ সেই জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দিনের বেশির ভাগ সময় বৃষ্টিতে পিচ কভারে ঢাকা থাকে। উইকেট একদমই রোদ পায় না। উল্টো দিনে রাতের বড় সময় কভারের নিচে ঢাকা থাকায় ময়েশ্চার জন্মায়। এছাড়া বৃষ্টির সময় পিচ রোলও হয় খুব কম। এ কারণেই গতি মন্থর হয়ে পড়ে। বাউন্সও থাকে কম।

ইতিহাস সাক্ষী দিচ্ছে অক্টোবর-নভেম্বরে শেরে বাংলার উইকেট বরাবরই স্লো আর লো থাকে। তাই ভাবার কোন কারণ নেই যে শুধু এবারই উইকেটের সহায়তায় অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ফরম্যাটটা টি-টোয়েন্টি বলেই ওই জয় খুব বড় করে দেখা হয়েছিল এবং তা নিয়ে হৈচৈও হয়েছিল অনেক বেশি। কিন্তু একটু পিছনে তাকালে দেখা যাবে শেরে বাংলায় ২০১০ আর ২০১৩ সালে পর পর দু’বার নিউজিল্যান্ডকে চরমভাবে পর্যুদস্ত করেছিল টাইগাররা।

২০১০ সালের অক্টোবরে শেরেবাংলায় নিউজিল্যান্ডের সাথে ৫ ম্যাচ সিরিজে ৪-০ ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিল বাংলাদেশ। সেটাই ছিল জিম্বাবুয়ে, কেনিয়া ছাড়া কোন পরাশক্তির দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে সিরিজ বিজয়। এর তিন বছর পর ২০১৩ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে আবার নিউজিল্যান্ডকে ৩-০‘তে বাংলাওয়াশ করে মুশফিকুর রহিমের বাংলাদেশ।

ওই দুইবারের কিউই বাহিনী কিন্তু এবারের মত অর্ধেক শক্তির অস্ট্রেলিয়া আর নামমাত্র নিউজিল্যান্ড ছিল না। একদম পুরো শক্তির দল নিয়েই বাংলাদেশের সাথে পারেনি ব্ল্যাক ক্যাপ্সরা। মানে ইতিহাস জানাচ্ছে আসলে অক্টোবর-নভেম্বরেও হোম অফ ক্রিকেটের পিচ স্লো‘ই থাকে। বল খুব বেশি ওঠেও না। একটু আধটু টার্নও করে।

যদিও অক্টোবর থেকে একমাস প্রায় বৃষ্টি কম হওয়ায় পিচ রোদের উত্তপ পেয়েছে। ‘ওয়াটারিং আর রোলিংও’ হয়েছে বেশি। তাতে খানিক প্রাণের সঞ্চার ঘটতে পারে। মানে অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের সাথে যেমন গড়পড়তা ১১০-১২০ রান উঠেছে, এবার হয়ত তারচেয়ে কিছু বেশি রান হবে।’

এদিকে বোদ্ধাদের মত মিচেল স্টার্ক, ম্যাথু ওয়েড, মিচেল স্টার্ক, জস হ্যাজেলউড আর অ্যাডাম জাম্পার গড়া অস্ট্রেলিয়া আর বিশ্বকাপের একজন পারফরমার না থাকা শুধু নাম সর্বস্ব নিউজিল্যান্ডকে ¯স্লো, লো আর টার্নিং পিচে চরমভাবে পর্যদুস্ত করা সম্ভব হলেও পাকিস্তানীদের এ কন্ডিশনে ঘায়েল করা হবে খুব কঠিন।

কারণ, পাকিস্তানেরও কিছু কিছু অঞ্চলের পিচ খুব স্লথ গতির। কম বাউন্সি। লাহোরে বিশেষ করে, পাঞ্জাবের আশপাশের পিচগুলো ছাড়া করাচি ফয়সলাবাদের উইকেটও স্লো।

কাজেই পাকিস্তানীরাও এ ধরনের স্লো-লো আর খানিক টার্নিং পিচে খেলে অভ্যস্ত। এছাড়া দলটিতে আছেন শাদাব খান ও ইমাদ ওয়াসিমের মত কোয়ালিট স্পিনার। এমনকি স্লো ও লো ট্র্যাকে শোয়েব মালিকও হয়ে উঠতে পারেন কার্যকর। বাবর আজম, রিজওয়ান, শোয়েব মালিকরাও এই ধরনের উইকেটে খেলে খেলেই পরিণত হয়েছেন।

স্লো উইকেটে পাকিস্তানের ব্যাটিং-বোলিং বাংলাদেশের চেয়ে আরও কার্যকর। কাজেই যে পিচে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে অনায়াসে বধ করা সম্ভব হয়েছে, সেই পিচে বাবর আজমের দলকে হারানোর চিন্তা হবে অলিক কল্পনা। বরং সেটা ‘বুমেরাং ’ হতে পারে।

তাহলে কোন ধরনের পিচ হতে পারে আদর্শ? স্পোর্র্টিং পিচে হলেও কুলিয়ে ওঠা হবে মুশকিল। তাতে করে পাকিস্তানের ব্যাটার ও বোলাররা সমান ফায়দা পাবেন। তখন সর্বাংশে শ্রেয়তর দল পাকিস্তান আরও সুবিধা পাবে। একদিকে যেমন বাবর আজম রিজওয়ান, ফাখর জামান, শোয়েব মালিক আর আসিফ আলিরা স্বচ্ছন্দে খেলবেন। আর অন্যদিকে শাহিন শাহ আফ্রিদি, হাসান আলি, হারিস রউফরাও দুর্বার হয়ে উঠতে পারেন। সঙ্গে লেগি শাদাব খান এবং বাঁ-হাতি ইমাদ ওয়াসিমকে সামলানোও হবে কঠিন।

পাকিস্তান টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যাটিং ও বোলিংয়ে যে নজরকাড়া, উজ্জীবিত আর সাজানো গোছানো নৈপুণ্য উপহার দিয়েছে, তাতে করে যে কোন উইকেটেই পেরে ওঠা কঠিন। তবে স্লো ও লো এবং স্পোর্টিং ট্র্যাকের চেয়ে বরং ব্যাটিং বান্ধব পিচই তুলনামূলক সহায়ক ক্ষেত্র হতে পারে বাংলাদেশের। তাতে করে বল ব্যাটে আসবে। ব্যাটসম্যানরা স্বচ্ছন্দে শটস খেলতে পারবেন।

কোন পক্ষের বোলারদেরই জেঁকে বসার সুযোগ তুলনামুলক কম থাকবে। শাহিন শাহ আফ্রিদি, হারিস রউফ, হাসান আলির পেস বোলিং তোড়ও কিছু কম থাকবে। স্পিনার শাদাব-ইমাদদের বলও ঘুরবে কম।

আর সেটাই হতে পারে তামিম, মুশফিক, সাকিব ও লিটন-সৌম্য ছাড়া এক তরুণ বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের বড় স্বস্তি। তাদের তুলনামূলক স্বচ্ছন্দে খেলার ক্ষেত্র। তাতে করে হয়ত রান খরা কিছু কমবে। পাকিস্তানীরা হয়ত হাত খুলে বেশি রান করবে। তা করুক। পাশাপাশি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাও স্বস্তিতে স্বাভাবিক ব্যাটিং করার একটা সহায়ক পরিবেশ পাবেন।

তিন সিনিয়র ও অভিজ্ঞ ব্যাটার ছাড়া তরুণ নাইম শেখ, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাইফ হাসান আর ইয়াসির আলী রাব্বিদের জন্য সেটাই হতে পারে অনুকুল ক্ষেত্র। তাহলেই কেবল বাংলাদেশের স্কোর লাইনটা ভদ্রস্থ হবে।

এআরবি/আইএইচএস