‘দেখে মনেই হয়নি দলে কোনো হেড বা স্পেশালিস্ট কোচ আছে’
ক্রিকেট বোদ্ধা বা পন্ডিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। পাড়ার অবুঝ কিশোরও মানছে, এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ছন্নছাড়া এক দল ছিলো বাংলাদেশ।
দেশে স্লো ও লো পিচে প্রস্তুতি পর্ব সাড়া ছিল প্রথম ভুল। তারপর বিশ্বকাপের মাঠে নামতে নামতেই বোর্ড সভাপতিসহ অনেকেরই বাইরে থেকে করা মন্তব্যের কারণে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উদ্রেক ঘটেছিল। তাতে ক্রিকেটারদের মানসিক স্থিতি কমে গিয়েছে। তারা সম্পূর্ণ মানসিক স্বস্তি নিয়ে খেলতে পারেননি।
তাই বলে গেম প্ল্যান, টিম রুলস, একাদশ সাজানো আর লক্ষ্য-পরিকল্পনা ঠিক করা; এই কাজগুলো তো ঠিক থাকবে? তা কি ছিল? বাংলাদেশ কি মূল পর্বের একটি ম্যাচেও ছকে বাঁধা ক্রিকেট খেলতে পেরেছে? লক্ষ্য-পরিকল্পনা আর দল সাজানো- কোনোটিতেই কি দক্ষতা আর দূরদর্শিতার ছোয়া ছিল?
বাংলাদেশের অন্যতম সিনিয়র কোচ সারোয়ার ইমরানের ভাষায় দলে একজন হেড কোচ, ব্যাটিং-বোলিং আর ফিল্ডিংয়ের স্পেশালিস্ট কোচ যে ছিল তা বোঝাই যায়নি। তিনি বলেছেন, ‘আমার মনে হয় কোনো কোচই ছিল না দলে। থাকলে একটা দল এত খাপছাড়া, অপরিকল্পিত এবং এলোমেলো ক্রিকেট খেলতে পারে না।’
ইমরানের দাবি, ‘আমার মনে হয়েছে দলটি কোচ ছাড়াই খেলছে। পারফরম্যানসের কোন পর্যায়ে মনে হয়নি এ দলের সঙ্গে একজন হেড কোচ আর প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে একজন করে স্পেশালিস্ট কোচ আছেন, তারা কাজ করছেন। আমি জানতে চাই তারা কী কাজ করেছেন?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের সাথে ঘরের মাঠে খেললাম বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে নিয়ে। প্রায় ম্যাচে তাকে পাওয়ার প্লে’তে বোলিং করানো হয়েছে। আর বিশ্বকাপের মাঠে তাকে ঠিক মতো খেলানোই হয়নি। কেন? কী কারণে? আমাদের তো গেম প্ল্যানই ছিল না। কে স্ট্রাইক বোলার, তা-ই বোঝা যায়নি।’
দলের দুই অন্যতম সেরা উইলোবাজ মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের ব্যাটিং নিয়ে কথা বলতে গিয়েও ইমরান স্পেশালিস্ট কোচদের দায়ী করেন। তার জিজ্ঞাসা, দলে একজন হেড কোচ ও ব্যাটিং কোচ কী করলেন বুঝলাম না। বারবার ভুল শট খেলার পরও তারা কেন মুশফিক-লিটনকে শুধরে দিলেন না?
ইমরানের ব্যাখ্যা, ‘মুশফিক দলের অন্যতম ব্যাটিং স্তম্ভ। সে ‘ভি’তে খেলা বাদ দিয়ে অহেতুক ইম্প্রোভাইজ করে স্কুপ আর রিভার্স সুইপ করে নিজের ইনিংসের অপমৃত্যু ঘটিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি অফ ও অনসাইডে ড্রাইভ খেলে, কাট, পুল ও ফ্লিক করেই মুশফিক নিজের ইনিংস সাজাতে পারে। কিন্তু বিশ্বকাপে সে বারবার ঐ ভুল পথে হেঁটেছে।’
লিটন দাসও তার স্বভাবসুলভ গাণিতিক ব্যাকরণসিদ্ধ ব্যাট না চালিয়ে অনসাইডে বেশি শট খেলতে গিয়ে বারবার স্কয়ার লেগ আর মিড উইকেটের আশপাশে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন।
লিটনের ব্যাটিং নিয়ে ইমরানের সংযোজন, ‘টেকনিক ভালো, তবে লিটনের স্কিলে ঘাটতি আছে। শট সিলেকশন ভালো না। অনসাইডে খেলার সময় মাথা ও মুখ বলের ঠিক পেছনে না এনে অফসাইডের দিকে রেখে ব্যাট চালাচ্ছিল। তাই শট পারফেক্ট হয়নি। অনসাইডে খেলার সময় মাথা অবশ্যই বলের লাইনে থাকতে হবে। অফসাইডে থাকলে চলবে না। কিন্তু হায়! এসব কেউ বলে দেয়নি। আমার তো মনে হয় এর চেয়ে দুই বছর আগের লিটন অনেক ভালো ব্যাটিং করতো।’
একইভাবে পেসার মোস্তাফিজুর রহমানের সফল না হওয়ার পেছনেও প্ল্যানিং ও স্কিলের ঘাটতি ছিল বলে মন্তব্য ইমরানের। তার ব্যাখ্যা, ‘শেরে বাংলায় যে পিচে বিশ্বকাপের আগে বেশি খেলেছে বাংলাদেশ, বিশ্বকাপের উইকেটগুলো তার চেয়ে একটু বেশি ফাস্ট ও বাউন্সি ছিল। সেখানে হার্ড লেন্থে বোলিং করাই ছিল প্রধান কাজ। তাসকিন সেই হার্ড লেন্থে বল ফেলে তুলনামূলক সফল। তাকে সেভাবে মারতে পারেনি প্রতিপক্ষ ব্যাটাররা।’
‘কিন্তু মোস্তাফিজ ঐ হার্ড লেন্থে বল না ফেলে অযথা লেগ স্টাম্পের বাইরে ক্রমাগত বল করেছে। সাথে কখনও শর্ট আবার কোনো সময় ব্যাটারের একদম নাগালের ভেতরে বল পিচ করিয়ে মার খেয়েছে। খুব অবাক হয়েছি, এগুলো কি হেড কোচ ও পেস বোলিং কোচ শুধরে দেননি।’
এআরবি/এসএএস/এমএস